ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

বাংলাদেশে সকালবেলা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি কেন

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ১৪ ০৭:৩৭:৪৩
বাংলাদেশে সকালবেলা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বেশি কেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: হার্ট অ্যাটাক বা মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন যেকোনো সময় ঘটতে পারে। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, দিনের শুরুতেই এর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর ৩২ শতাংশই ছিল হৃদরোগজনিত। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশ মানুষ মারা গেছে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের কারণে।

তবে প্রশ্ন হচ্ছে, সকালে কেন হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা বেশি থাকে?

১. স্ট্রেস হরমোনের প্রভাবসকালে ঘুম থেকে উঠার পর শরীরে কর্টিসল, অ্যাড্রেনালিন ও নোরঅ্যাড্রেনালিন হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়। এগুলো রক্তনালী সংকুচিত করে এবং হৃদস্পন্দন বাড়িয়ে দেয়, যার ফলে হৃদপিণ্ডে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায় এবং বাড়তি চাপ পড়ে।

২. রক্ত জমাট বাঁধার প্রবণতাসকালবেলা শরীরে ‘প্লাজমিনোজেন অ্যাক্টিভেটর ইনহিবিটর-১’ নামের একটি প্রোটিন বেড়ে যায়, যা রক্ত জমাট বাঁধা ঠেকাতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে রক্ত সহজেই জমাট বাঁধে এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে।

৩. পানিশূন্যতারাতভর পানি না খাওয়ার কারণে শরীর ডিহাইড্রেটেড হয়, ফলে রক্ত ঘন হয়ে যায়। এতে রক্তপ্রবাহে বাধা সৃষ্টি হয় এবং হার্টে ব্লক তৈরি হতে পারে।

৪. হঠাৎ ঘুম ভাঙাজোরে অ্যালার্ম বাজলে হঠাৎ ঘুম ভাঙে, এতে রক্তচাপ এবং হৃদস্পন্দন একসঙ্গে বেড়ে যায়। যাদের উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগ আছে, তাদের জন্য এটি মারাত্মক হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা অ্যালার্মে ঘুম ভাঙেন, তাদের সকালে রক্তচাপ ৭৪ শতাংশ বেশি হয় অন্যদের তুলনায়।

৫. খালি পেটে ব্যায়ামঅনেকে সকালে ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে হাঁটতে বা ব্যায়াম করতে শুরু করেন। এতে হৃদযন্ত্রে অতিরিক্ত চাপ পড়ে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শরীর জেগে ওঠার পর ধীরে ধীরে ব্যায়ামে যাওয়া উচিত।

সকালে হার্ট অ্যাটাকের লক্ষণ কী কী?

* বুকের মাঝখানে ব্যথা বা চাপ লাগা

* ব্যথা ছড়িয়ে পড়া বাম হাত, ঘাড়, চোয়াল বা পিঠে

* শ্বাসকষ্ট, বমি ভাব, মাথা ঘোরা বা অতিরিক্ত ঘাম

* নারীদের ক্ষেত্রে হালকা ব্যথা, ক্লান্তি বা অস্বস্তি দিয়েও শুরু হতে পারে

হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধে করণীয়

১. পর্যাপ্ত ঘুমপ্রতিদিন অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমালে শরীরের স্ট্রেস হরমোন নিয়ন্ত্রণে থাকে, ফলে হৃদপিণ্ড ভালো থাকে।

২. ঘুম থেকে উঠে পানি পানসকালে উঠে এক গ্লাস পানি পান করলে ডিহাইড্রেশন কাটে এবং রক্ত চলাচল স্বাভাবিক হয়।

৩. ধীরে দিন শুরু করুনঘুম থেকে উঠে সঙ্গে সঙ্গে ভারী ব্যায়াম না করে হালকা হাঁটা, স্ট্রেচিং বা হালকা নাস্তা দিয়ে দিন শুরু করুন।

৪. মানসিক চাপ কমানসকালে ধ্যান, শান্তভাবে হাঁটা বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। যাদের উচ্চ রক্তচাপ আছে, তারা নিয়মিত ওষুধ খাওয়া নিশ্চিত করুন।

৫. স্বাস্থ্যকর খাবার খানফল, সবজি, গোটা শস্য এবং কম চর্বিযুক্ত প্রোটিন বেশি খান। রাতের খাবার হালকা রাখুন।

৬. ধূমপান ও মদ্যপান থেকে দূরে থাকুনএগুলো রক্তনালির ক্ষতি করে এবং রক্ত জমাট বাঁধার ঝুঁকি বাড়ায়।

৭. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করুনডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ বা কোলেস্টেরল থাকলে নিয়মিত পরীক্ষা করান এবং চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলুন।

সকালের সময়টা একটু সচেতনভাবে শুরু করলেই হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব।

– সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ