ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানকে হারানো এত কঠিন কেন, জানুন সেই ৭ অজেয় শক্তির কথা

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ১৮ ২১:২১:২৫
ইরানকে হারানো এত কঠিন কেন, জানুন সেই ৭ অজেয় শক্তির কথা

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসরাইল হয়তো ভাবতেও পারেনি, এত ভয়াবহ প্রতিরোধের মুখোমুখি হতে হবে। ইরানি ক্ষেপণাস্ত্রে তেলআবিবের কিছু অংশ এমনভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে যে, অনেকেই সেটিকে গাজার চেয়েও ভয়ংকর বলছেন। তেহরানও পাল্টা হামলার শিকার, কিন্তু মূল প্রশ্ন এখন—এই সংঘাত কি আরেকটি পূর্ণমাত্রার যুদ্ধের দিকে যাচ্ছে? যুক্তরাষ্ট্র কি সরাসরি জড়াবে? আর ইরান কি আদৌ পরাজিত হবে?

বিশ্লেষকদের মতে, ইরানকে পরাজিত করা এত কঠিন হওয়ার পেছনে রয়েছে সাতটি বিশেষ কারণ। এই সাতটি প্রতিরক্ষা স্তর যেন একটি অদৃশ্য দেয়াল, যা ভাঙা প্রায় অসম্ভব।

১. হরমুজ প্রণালী—বিশ্ব জ্বালানির গলায় থাকা ইরানের হাত

বিশ্বের ২০% তেল পরিবাহিত হয় যে সমুদ্রপথে, সেই হরমুজ প্রণালী ইরানের দক্ষিণ সীমান্তে। মাত্র ৩৩ কিমি প্রশস্ত এই প্রণালী ঘিরে থাকা সাতটি দ্বীপ ইরানের দখলে, যা তাকে জ্বালানিনির্ভর বিশ্বের ওপর কৌশলগতভাবে ভয়ংকর এক প্রভাবশালী শক্তিতে পরিণত করেছে। ইরান চাইলে এক নিমিষে এই পথ বন্ধ করে দিতে পারে।

২. ভৌগোলিক অবস্থান—প্রাকৃতিক দুর্গে ঘেরা এক দেশ

ইরান চারদিকে পাহাড়, মরুভূমি ও দুর্গম অঞ্চল দিয়ে ঘেরা। পশ্চিম ও দক্ষিণে জাগ্রস, উত্তরে আলবর্জ, আর কেন্দ্রে ভয়ংকর লুত মরুভূমি—সব মিলিয়ে এই ভৌগোলিক গঠন ইরানে স্থল অভিযানকে করে তোলে প্রায় অসম্ভব।

৩. ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনে মধ্যপ্রাচ্যের এক অন্যতম শক্তিধর

ইরান বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তম ও সবচেয়ে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র শক্তির অধিকারী। তাদের কিছু ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ২০০০ কিমি পর্যন্ত, যা ইউরোপ পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম। পাশাপাশি ড্রোন প্রযুক্তিতে ইরান এখন বৈশ্বিক খেলোয়াড়—যার প্রমাণ মিলেছে রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধেও।

৪. অপরিশোধ্য সম্পদ: তেল ও গ্যাস

বিশ্বের প্রাকৃতিক তেল ও গ্যাস মজুদের প্রায় ১০-১৫% রয়েছে ইরানে। এই বিপুল সম্পদ শুধু অর্থনৈতিক নয়, কৌশলগত দিক থেকেও ইরানকে দিয়েছে এক বিশাল সুবিধা—বিশ্ববাজারে প্রভাব বিস্তারের ক্ষমতা।

৫. হাজার বছরের ঐতিহাসিক প্রতিরোধ ও অখণ্ড রাষ্ট্রসীমা

ইরান একমাত্র দেশগুলোর একটি যার আধুনিক রাষ্ট্রসীমা প্রায় ৫০০ বছর ধরে প্রায় অপরিবর্তিত। ইতিহাসে বহুবার ইরানকে দমন করতে চেয়েছে পরাশক্তিরা—কিন্তু প্রতিবারই পরাজয় ঘটেছে আক্রমণকারীর। ইরান টিকে থেকেছে প্রতিরোধ আর আত্মমর্যাদায়।

৬. রাশিয়া ও চীনের কৌশলগত বন্ধুত্ব

যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের বিরুদ্ধচাপে ইরান কখনোই একা থাকেনি। রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে কৌশলগত মৈত্রীর মাধ্যমে ইরান পেয়েছে কূটনৈতিক ও প্রযুক্তিগত সহায়তা—যা এই সংকটে তাকে আরও দৃঢ় অবস্থানে রেখেছে।

৭. প্রক্সি জোট: ‘অ্যাক্সিস অব রেজিস্টেন্স’

মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র—তার প্রক্সি নেটওয়ার্ক। ফিলিস্তিন, লেবানন, সিরিয়া, ইরাক ও ইয়েমেনে ছড়িয়ে থাকা এই মিত্র গোষ্ঠীগুলো 'অ্যাক্সিস অব রেজিস্টেন্স' নামে পরিচিত। তারা সরাসরি যুদ্ধ ছাড়াও শত্রুদের ওপর ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

ভূ-রাজনীতি, ইতিহাস, প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ও আধুনিক সামরিক কৌশলে ইরান এক ব্যতিক্রমী শক্তি। পারস্য সভ্যতা থেকে শুরু করে আধুনিক ইরান—এই জাতি কখনোই পুরোপুরি দমন হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে—এই ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা কি টিকবে? সময়ই দেবে সেই উত্তর।

প্রতিবেদক: সোহাগ/

ট্যাগ: ইরান যুদ্ধ

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ