সদ্য সংবাদ
শেষ হয়েও কেন শেষ হয় না আওয়ামী লীগ

নিজস্ব প্রতিবেদক: বুড়িগঙ্গার জলে আজ অমাবস্যার অন্ধকার আরও গভীর। ধানমন্ডির গলিতে নিস্তরঙ্গ বাতাস, আর সোডিয়াম বাতির আলো যেন আজ নিভু নিভু। তবে একটি পুরনো দোতলা বাড়ির জানালায় এখনো আলো জ্বলছে। ঘরের ভেতর কয়েকজন মানুষ বসে, হাতে পুরনো খবরের কাগজ, চোখে জিজ্ঞাসা— “আওয়ামী লীগ এত কিছু সত্ত্বেও কেন শেষ হয় না?”
বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই নাম এক ছায়ার মতো—অদৃশ্য, অথচ সর্বত্র ছড়িয়ে থাকা। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর ১৯৭৫ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতা হারায়। টানা ২১ বছর তারা বিরোধী অবস্থানে থেকেও, ১৯৯৬ সালে ফিরে আসে, আর ২০০৮ সালে ফিরে আসে এক ভয়ংকর সংগঠিত রূপে। কীভাবে?
এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে তাদের সাংস্কৃতিক রাজনীতির কৌশলে। আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক দল নয়, তারা তৈরি করেছে এক মনস্তাত্ত্বিক বলয়—এক জাতীয় পরিচয়, যা “মুক্তিযুদ্ধ”, “বাঙালি জাতীয়তাবাদ”, “জয় বাংলা”, “৭ মার্চের ভাষণ” ইত্যাদির মতো প্রতীকে পরিণত হয়েছে।
এই বয়ান ঢুকে পড়েছে আমাদের পাঠ্যবইয়ে, নাটকে, গানে, সিনেমায়, এমনকি গণমাধ্যমের প্রতিটি কোণে। এমন এক সাংস্কৃতিক আধিপত্য, যাকে 'কালচারাল হেজেমনি' বলা যায়। এর ফলে, আওয়ামী লীগের বিরোধিতা অনেক সময়েই পরিণত হয়েছে যেন ইতিহাস বা দেশবিরোধিতার বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়ার মতো।
যখন অন্য রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতার লড়াইয়ে ব্যস্ত, তখন আওয়ামী লীগ মানুষের চেতনায় শিকড় গেড়ে ফেলেছে।
তবে এ অবস্থা অপরিবর্তনীয় নয়। বিশ্লেষকরা বলেন, এই বয়ান ভাঙা সম্ভব—তবে তার জন্য প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদি সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ ও বিকল্প চিন্তার চর্চা। কীভাবে?
১. নতুন বয়ান নির্মাণ: মুক্তিযুদ্ধের গল্পকে একক মালিকানার বাইরে এনে সকল অংশগ্রহণকারীর গল্প তুলে ধরতে হবে। ইতিহাসকে মালিকানার জায়গা থেকে বের করে দিতে হবে।
২. শিক্ষার সংস্কার: পাঠ্যপুস্তকে ইতিহাসের একক ব্যাখ্যা নয়, থাকতে হবে বহু দৃষ্টিভঙ্গির চর্চা। শিক্ষায় আসতে হবে সমালোচনামূলক চিন্তার জায়গা।
3. বিকল্প গণমাধ্যমের উত্থান: এমন গণমাধ্যম গড়ে তুলতে হবে, যারা সত্য বলবে নিরপেক্ষভাবে—জনগণের পক্ষে, রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে।
4. জনগণের মধ্যে সচেতনতা: মানুষকে বোঝাতে হবে—বাঙালি পরিচয় কোনো একক দলের সম্পত্তি নয়। গ্রাম থেকে শহরে সাংস্কৃতিক আড্ডা, নাটক, সংগীত, চিত্রশিল্পের মাধ্যমে নতুন কথার বিস্তার ঘটাতে হবে।
5. আঞ্চলিক সংস্কৃতির জাগরণ: একমাত্রিক ‘বাঙালি জাতীয়তাবাদ’ নয়, বরং সাঁওতাল, চাকমা, সিলেটি, ভাওয়াল, সুন্দরবন—এইসব বৈচিত্র্যকে স্বীকৃতি দিতে হবে। গড়ে তুলতে হবে বহুমাত্রিক পরিচয়।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে তরুণদের আন্দোলন দেখিয়ে দিয়েছে—এই গল্প চ্যালেঞ্জ করা যায়। এখন প্রয়োজন একটি নতুন সাংস্কৃতিক জাগরণ, যেখানে তরুণ প্রজন্ম শিক্ষা, মিডিয়া ও শিল্পচর্চার মাধ্যমে নির্মাণ করবে এক নতুন বাংলাদেশ।
ধীরে ধীরে সেই ধানমন্ডির পুরনো বাড়ির আলো নিভে আসে। টেবিলে ছড়িয়ে থাকে কিছু পুরনো পত্রিকা, দেয়ালে টাঙানো ১৯৭১ আর ২০২৪-এর দুটি পোস্টার—একটিতে লেখা ‘স্বাধীনতা’, আরেকটিতে ‘দ্বিতীয় মুক্তি’।
তরুণদের চোখে জ্বলছে আগুন, হাতে নতুন গল্প আর প্রতিজ্ঞা—“বয়ানটা এবার আমরাই বদলাবো।”
বাইরে রাতের নিস্তব্ধতায় এক ছায়া যেন কাঁপছে— এটা কি সেই পুরনো রাজনীতির জাল? নাকি এক নতুন ইতিহাসের সূচনা?
বুড়িগঙ্গার পাড়ে তখন বইছে হালকা হাওয়া— নতুন বাংলাদেশের ইশারা নিয়ে।
সোহাগ/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- বাংলা ৬ সিনেমায় বাস্তবেই সহবাস করতে হয়েছে নায়ক-নায়িকার
- দেশের বাজারে কমলো জ্বালানি তেলের দাম
- আব্দুস সাত্তার ও মেয়ে শেফা– আলোচিত ঘটনার নেপথ্যে উঠে এলো নতুন তথ্য
- মিশা সওদাগরকে রাস্তায় মারধর? আসল ঘটনা কী বলছে
- ঘূর্ণিঝড় ‘শক্তি’ আসছে, সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে বাংলাদেশের যে অঞ্চল
- সরকারি চাকরিজীবীদের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন মহার্ঘ ঘোষণা
- পাল্টা হামলায় কত সেনা হারাল ভারত, অবশেষে তথ্য দিল দিল্লি
- একই বিছানায় দুই স্ত্রী নিয়ে ঘুমানো কি ইসলামসম্মত
- বাংলাদেশকে চিঠি দিয়ে যা জানালো আমেরিকা
- “আমরাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত”: সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধে পাকিস্তানের দাবি
- এএসপি পলাশকে নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ করলেন তার বোন ও দুলাভাই
- বাংলাদেশে ঈদুল আজহার তারিখ ঘোষণা : কতদিন সরকারি ছুটি থাকবে
- শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ইতিহাসে প্রথম তদন্ত সম্পন্ন
- আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার পর যা বলছে ভারত
- পাকিস্তানের সেনাপ্রধান গ্রেপ্তার! ভেতরের সত্য যা জানা গেল