সদ্য সংবাদ
পালানোর আগের রাতে ঘনিষ্ঠদের উদ্দেশে শেখ হাসিনার গোপন বার্তা

নিজস্ব প্রতিবেদক: তাৎক্ষণিক অস্থিরতায় ছেয়ে থাকা এক অন্ধকার রাত। ফজরের আগেই ঘুম ভেঙে যায় অনেকের। মোবাইল হাতে নিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ খুলতেই চোখে পড়ে একটি ছোট্ট বার্তা—মাত্র চারটি শব্দ: "No one stay here"। বার্তাটি পাঠিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এই সংক্ষিপ্ত বার্তাটি ছিল অনেক গভীর অর্থবহ। এটি ছিল বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি নিঃশব্দ অথচ দৃঢ় সিদ্ধান্ত—দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার চূড়ান্ত নির্দেশনা।
সূত্র জানায়, ৩ আগস্ট বিকেলে শেখ হাসিনা মৌখিকভাবে তার ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের সতর্ক করেছিলেন। বলেছিলেন, সময় ভালো যাচ্ছে না, দেশ ছাড়তে হতে পারে। পরদিন, ৪ আগস্ট ভোরে তিনি নিজেই হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন সেই বার্তা, যেন কোনো দ্বিধা না থাকে।
এক আত্মীয় জানান, “যদি সেই সময়টা বুঝে দেশ না ছাড়তাম, হয়তো আজ জেলের ঘানি টানতাম।”
প্রাপ্ত তথ্যে জানা গেছে, এই বার্তা কেবল বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য ও নিকট আত্মীয়দেরই পাঠানো হয়। আওয়ামী লীগের নেতারা বা সাধারণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের কাউকে এই নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
কারফিউ চলাকালেই, ৪ আগস্ট একটি প্রভাবশালী পরিবারের সদস্য ও সাবেক এমপি তার পরিবারসহ দেশ ছাড়েন। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় অবস্থান করছেন। তিনি শেখ লুৎফুর রহমান পরিবারের ঘনিষ্ঠ একজন সদস্য।
এক এক করে আত্মীয়রা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, সিঙ্গাপুর এবং প্রতিবেশী ভারতে আশ্রয় নেন। তাদের নিরাপদ প্রস্থানের পর ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা ছোট বোন শেখ রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে পাড়ি জমান ভারত। পরে শেখ রেহানা চলে যান লন্ডনে, যেখানে তার সন্তানরা আগে থেকেই ছিলেন।
তবে সবাই যে নিরাপদে পাড়ি জমাতে পেরেছেন, তা নয়। শেখ হাসিনার ফুপাতো ভাই, সেরনিয়াবাত মঈনউদ্দিন আবদুল্লাহ—সাবেক চিফ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ছেলে—গ্রেপ্তার হন অক্টোবরে। ধারণা ছিল, পারিবারিক ঘনিষ্ঠতার কারণে হয়তো তাকে ধরা হবে না। কিন্তু সে অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়।
সাবেক সেই এমপি আরও জানান, শেখ হাসিনা ৩ আগস্ট বিকেলেই বুঝে গিয়েছিলেন—সরকার আর বেশিদিন টিকবে না। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাচ্ছে। তখনই আত্মীয়দের সতর্ক করে বলেন, “জীবন বাঁচাতে দেশ ছাড়তে হবে।”
এমনকি সেদিন সিঙ্গাপুর থেকে ফিরেই তৎকালীন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস বিমানবন্দরে শেখ হাসিনার মুখ থেকে বার্তা পান—দেশ ত্যাগের। নির্দেশ পাওয়ার পরপরই তিনিও সিঙ্গাপুরে ফিরে যান।
সবকিছু বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শেষমেশ সিদ্ধান্ত নেন—আর কিছু করার নেই, আন্দোলন বা সংকট আর থামানো সম্ভব নয়। তখনই আত্মীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মোবাইলে পাঠিয়ে দেন সেই চারটি শক্তিশালী শব্দ—“No one stay here”।
সোহাগ/