ঢাকা, বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ৪ আষাঢ় ১৪৩২

৫০ বছর কবর খুঁড়ে যাওয়া মনু মিয়া মৃত্যুশয্যায়, প্রিয় ঘোড়ারও নির্মম মৃত্যু

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মে ১৮ ১৮:৩২:৫৬
৫০ বছর কবর খুঁড়ে যাওয়া মনু মিয়া মৃত্যুশয্যায়, প্রিয় ঘোড়ারও নির্মম মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক: পঞ্চাশ বছর ধরে বিনা পারিশ্রমিকে মৃতদের কবর খুঁড়ে গেছেন মনু মিয়া। কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলার এই নিরহংকারী মানুষটি এক হাতে কোদাল, পিঠে একটি পুরনো ব্যাগ আর পাশে বিশ্বস্ত ঘোড়াটিকে নিয়ে নিঃস্বার্থভাবে পাশে দাঁড়িয়েছেন শোকাহত অসংখ্য পরিবারে।

আজ তিনি নিজেই হাসপাতালের বিছানায় মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন। আর এই কঠিন সময়ে আরও একটি নির্মমতা নেমে এসেছে তার জীবনে—বিভীষিকাময়ভাবে হত্যা করা হয়েছে তার প্রাণের সঙ্গী, সেই বিশ্বস্ত ঘোড়াটিকে।

মিঠামইনের হাশিমপুর গ্রামে একটি মাদ্রাসার পাশে পানি জমে থাকা জায়গায় পাওয়া গেছে ঘোড়াটির নিথর দেহ। বুকে ছিল ধারালো অস্ত্রের গভীর আঘাত। এই পাশবিক ঘটনার খবরে শোকাহত গ্রামবাসী দ্রুত বিচার দাবি করেছে।

মনু মিয়ার স্ত্রী রহিমা বেগম জানালেন, স্বামীর অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় এখনো ঘোড়ার মৃত্যুর খবর তাকে জানানো হয়নি। কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, "মনু কারও কোনোদিন ক্ষতি করেনি। আর সেই মনুর শেষ সময়ে কেউ তার একমাত্র সাথীকেও এমনভাবে মেরে ফেলবে—এটা তো ভাবতেও পারছি না।"

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত চলছে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্থানীয়রা জানান, কয়েক বছর আগে নিজের জমি বিক্রি করে এই ঘোড়াটি কিনেছিলেন মনু মিয়া—যাতে শবদেহ পরিবহন সহজ হয়, কাজটা দ্রুত ও সম্মানজনকভাবে করা যায়। সেই থেকে ঘোড়াটিই ছিল তার একমাত্র সঙ্গী, তার ছায়ার মতো।

আজ মনু মিয়া হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছেন চুপচাপ। আর তার বিশ্বস্ত সাথী ঘোড়াটি চিরতরে বিদায় নিয়েছে মানুষের অমানবিকতায়।

এই সমাজে যেখানে স্বার্থ ছাড়া কেউ কারও দিকে ফিরেও তাকায় না, সেখানে মনু মিয়া ছিলেন এক ব্যতিক্রম। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে তিনিই আজ সবচেয়ে একা।

আশা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ