ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

মানুষকে আল্লাহ কেন বিভিন্ন রঙে সৃষ্টি করেছেন

ধর্ম ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ২৮ ২৩:২৫:৪৯
মানুষকে আল্লাহ কেন বিভিন্ন রঙে সৃষ্টি করেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানুষের গায়ের রঙ—ফর্সা, শ্যাম বা কৃষ্ণ—কোনোটাই শ্রেষ্ঠত্বের মানদণ্ড নয়। এটি বরং আল্লাহর সৃষ্টির অপার নিদর্শন, পরিবেশভিত্তিক দেহের প্রতিরক্ষা কাঠামো এবং মানব সৌন্দর্যের বহুমাত্রিক বৈচিত্র্য।

মানবদেহের ত্বকের প্রতি বর্গইঞ্চিতে গড়ে প্রায় ৬০০টি কোষ থাকে, যেগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো মেলানোসাইট। এই কোষগুলোতে উৎপন্ন হয় মেলানিন নামের একটি রঞ্জক পদার্থ, যা ত্বকের রঙ নির্ধারণে মুখ্য ভূমিকা রাখে।

চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, সব মানুষের ত্বকে মেলানোসাইটের সংখ্যা প্রায় সমান। কিন্তু মেলানিন উৎপাদনের মাত্রা যার যার শরীর অনুযায়ী ভিন্ন। সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করাই এই মেলানিনের প্রধান কাজ।

এই কারণেই, যেসব অঞ্চলে সূর্যের তীব্রতা বেশি—যেমন বিষুবরেখা সংলগ্ন এলাকাগুলো—সেখানে মানুষের গায়ের রং হয়ে থাকে গাঢ়। অপরদিকে, উত্তর বা দক্ষিণ মেরুর কাছাকাছি শীতপ্রধান অঞ্চলগুলোতে সূর্য কম তীব্র হওয়ায় মানুষের গায়ের রং হয় অপেক্ষাকৃত ফর্সা।

অতএব, গায়ের রং কোনো জাতিগত শ্রেষ্ঠত্ব নয়—বরং পরিবেশ ও প্রাকৃতিক অভিযোজনের একটি চমৎকার নিদর্শন।

কোরআনের আলোকে পবিত্র কোরআনের সূরা আর-রূম-এর ২২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে—“তাঁর (আল্লাহর) নিদর্শনগুলোর একটি হলো আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টি এবং তোমাদের ভাষা ও বর্ণের বৈচিত্র্য। এতে জ্ঞানীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।”

তাফসিরবিদদের ব্যাখ্যায় জানা যায়, একই পিতামাতার সন্তানদের মধ্যেও গায়ের রঙে পার্থক্য থাকে। কেউ ফর্সা, কেউ শ্যামবর্ণ, কেউ বা গাঢ় কৃষ্ণাঙ্গ। শুধু রঙই নয়—চেহারার গঠন, উচ্চতা, চোখ, মুখ, চলাফেরা—সব কিছুতেই থাকে আলাদা স্বাতন্ত্র্য। এটি আল্লাহর অসীম সৃষ্টিশীলতার স্পষ্ট প্রমাণ।

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেলানিন উৎপাদন কমে যায়। প্রতি দশকে তা গড়ে ১০ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়, ফলে ত্বকের রঙ হয়ে যায় কিছুটা বিবর্ণ। এটিও আল্লাহর সৃষ্ট প্রকৃতির আরেকটি নিখুঁত নিয়ম।

রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শিক্ষা বিদায় হজে রাসূলুল্লাহ (সা.) পরিষ্কারভাবে ঘোষণা করেন,“কোনো আরবের উপর অনারবের, কিংবা কোনো ফর্সা গাত্রবর্ণের উপর কৃষ্ণাঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব নেই—শ্রেষ্ঠত্ব কেবল তাকওয়ায়।”

একবার সাহাবি আবু যার (রা.) এক দাসকে তার গায়ের রঙ নিয়ে কটূক্তি করলে, রাসূল (সা.) তাকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বলেন,“তুমি তাকে তার মায়ের পরিচয়ে অপমান করলে কেন? তারা তো তোমাদের ভাই।”

আবু বকর (রা.) আফ্রিকান বংশোদ্ভূত সাহাবি বিলাল (রা.)-কে দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন এই ঘোষণা দিয়ে, “সে আমার ভাই।” ওমর (রা.) বলতেন, “আবু বকর আমাদের নেতা, যিনি আমাদের আরেক নেতাকে মুক্ত করেছেন।” সেই ‘নেতা’ ছিলেন কৃষ্ণাঙ্গ বিলাল (রা.)।

মানুষের রঙের এই ভিন্নতা কাকতালীয় নয়, বরং এক বিস্ময়কর সৃষ্টিগত কৌশল—যার পেছনে আছে বিজ্ঞান, পরিবেশ ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা। তাই আসুন, মানুষকে বিচার করি তার চরিত্র, কর্ম ও আল্লাহভীতির ওপর ভিত্তি করে—না যে তার গায়ের রং বা ভাষা বা বংশ পরিচয় দিয়ে।

শ্রেষ্ঠত্ব যেন অহংকারে নয়, বরং বিনয়ে প্রতিফলিত হয়। এবং আল্লাহর সৃষ্ট বৈচিত্র্যকে যেন আমরা সম্মানের চোখে দেখি।

সোহাগ/

ট্যাগ: ইসলাম

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ