ঢাকা, শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ২৯ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বজ্রপাত বিজ্ঞান ও কোরআনের আলোকে এক বিস্ময়কর মিল

ধর্ম ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মে ০২ ১০:৫৬:১৫
বজ্রপাত বিজ্ঞান ও কোরআনের আলোকে এক বিস্ময়কর মিল

নিজস্ব প্রতিবেদক: আপনি কি জানেন, পৃথিবীতে প্রতি সেকেন্ডে গড়ে ১০০ বার বজ্রপাত ঘটে? প্রতিবছর প্রায় ২৪ হাজার মানুষ এর শিকার হয়ে প্রাণ হারান। শুধু মৃত্যুই নয়, বজ্রপাত মানুষের চোখের দৃষ্টিশক্তিও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আধুনিক বিজ্ঞান বলছে, বজ্রপাতের আলো এতটাই তীব্র যে তা চোখের রেটিনাকে তাৎক্ষণিকভাবে অন্ধ করে দিতে পারে, যাকে বলা হয় ‘ফ্ল্যাশ ব্লাইন্ডনেস’।

গবেষণায় উঠে এসেছে, বজ্রপাতের প্রতিটি ঝলক ১০ কোটি ভোল্টের বেশি বৈদ্যুতিক শক্তি উৎপন্ন করতে পারে। সেই সঙ্গে বজ্রপাতের আলো সূর্যের থেকেও প্রায় পাঁচগুণ বেশি উজ্জ্বল হতে পারে। এই আলো সরাসরি চোখে পড়লে স্থায়ীভাবে দৃষ্টিশক্তি হারানোর আশঙ্কা থাকে। অথচ এই বৈজ্ঞানিক তথ্য কি শুধু আধুনিক যুগের আবিষ্কার? মোটেই না—১৪০০ বছর আগেই কোরআনে বজ্রপাতের ভয়াবহ প্রভাবের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল।

কোরআনের দৃষ্টিভঙ্গি

সূরা বাকারা, আয়াত ২০-এ মহান আল্লাহ বলেন: “বিদ্যুৎ চমকালে তারা তাতে পথ চলে, আর যখন অন্ধকার হয় তখন থেমে দাঁড়ায়। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের শ্রবণশক্তি ও দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বশক্তিমান।”

তাফসীরে ইবনে কাসির অনুযায়ী, এই আয়াতে মুনাফিকদের দুটি শ্রেণির মধ্যে দ্বিতীয় শ্রেণির চরিত্র তুলে ধরা হয়েছে—যারা সন্দেহ ও দ্বিধার মধ্যে জীবনযাপন করে। তবে এখানে বিদ্যুৎ ও আলো যে শুধুই উপমা হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে, তা নয়। বরং এর পেছনে রয়েছে গভীর বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা।

বিজ্ঞান কী বলছে?

উইকিপিডিয়ার তথ্য অনুযায়ী, ‘ফ্ল্যাশ ব্লাইন্ডনেস’ হলো চোখের রেটিনা তীব্র আলো দ্বারা সাময়িক বা স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। এই আলো আসতে পারে পারমাণবিক বিস্ফোরণ, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ বা বজ্রপাত থেকেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বজ্রপাতের আলো ১০০০ মিলিয়ন থেকে ১০০ হাজার মিলিয়ন ক্যান্ডেলা পর্যন্ত উজ্জ্বল হতে পারে—যা চোখের সহনশীলতার বাইরে।

এছাড়া, বজ্রপাতের সময় তৈরি হওয়া তাপমাত্রা প্রায় ৩,০০০ কেলভিন, যা সূর্যের পৃষ্ঠের থেকেও বেশি। এই তাপ রেটিনায় ফটোকেমিক্যাল বার্ন সৃষ্টি করে, যা দৃষ্টিশক্তির স্থায়ী ক্ষতির কারণ হতে পারে। বজ্রপাতের সময় তৈরি হওয়া ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস (ইএমপি) মস্তিষ্ক ও চোখের স্নায়ুতে প্রভাব ফেলে, যা চোখের অপটিক নার্ভ ও রেটিনাকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

বাস্তব প্রমাণ

২০০৩ সালে ‘জার্নাল অফ নিউরোলজি’-তে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা যায়, বজ্রপাতের শিকার ব্যক্তিদের অনেকের দৃষ্টিশক্তি স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়েছে। ১৯৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রে বজ্রপাতের কারণে একজন ব্যক্তির রেটিনাল বার্ন হয়ে যায় এবং তিনি চিরতরে দৃষ্টিহীন হয়ে পড়েন। এমনকি ২০১২ সালে প্রকাশিত আরেক গবেষণায় দেখা যায়, বজ্রপাতে আক্রান্তদের মধ্যে ২০% এর বেশি মানুষ চোখের মারাত্মক সমস্যায় ভুগেছেন।

কোরআন ও বিজ্ঞান: এক অভিন্ন সত্য

যখন কোরআনের আয়াতে বলা হয়, “আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদের দৃষ্টিশক্তি কেড়ে নিতে পারেন”, এবং বিজ্ঞান বলছে, বজ্রপাতের আলো চোখের রেটিনাকে স্থায়ীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে—তখন এই দুই সত্য এক বিন্দুতে এসে মিলে যায়। এটি প্রমাণ করে, কোরআনের এই বর্ণনা শুধুমাত্র রূপক নয়, বরং এটি একটি বৈজ্ঞানিক বাস্তবতা।

আজ থেকে দেড় হাজার বছর আগে, যখন কোনো আধুনিক যন্ত্রপাতি বা গবেষণাগার ছিল না, তখন কোরআনে এমন নির্ভুল তথ্য থাকা নিঃসন্দেহে এক অলৌকিক ঘটনা। আজকের বিজ্ঞান কোরআনের সেই কথাকেই প্রমাণ করছে।

আসুন, আমরা কোরআনের জ্ঞানকে শুধু বিশ্বাস নয়—বিবেচনা, গবেষণা ও উপলব্ধির আলোকে বিশ্লেষণ করি।

– আয়শা সিদ্দিকা/

ট্যাগ: বজ্রপাত

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ