ঢাকা, সোমবার, ১৮ আগস্ট ২০২৫, ৩ ভাদ্র ১৪৩২

নবীর ভবিষ্যদ্বাণী: ফিলিস্তিনে কেয়ামত ও হাশরের ঘটনা

ধর্ম ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ০৮ ১২:১০:২৪
নবীর ভবিষ্যদ্বাণী: ফিলিস্তিনে কেয়ামত ও হাশরের ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক: কেয়ামত অবশ্যম্ভাবী, এবং আল্লাহর নির্ধারিত সময়ে পৃথিবী এক বিরাট আঘাতে ধ্বংস হয়ে যাবে। গ্রহ, নক্ষত্র এবং অন্যান্য মহাজাগতিক বস্তুগুলো ধ্বংস হবে, পৃথিবী অন্ধকারে ঢেকে যাবে, এবং মহান আল্লাহর সৃষ্টির এই অপূর্ব পৃথিবী নিমিষে শেষ হয়ে যাবে। পৃথিবীর বয়স যতই বাড়ছে, কেয়ামত ততই নিকটবর্তী হচ্ছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর হাদিসে কেয়ামতের বিভিন্ন নিদর্শন বর্ণনা করেছেন, এবং আজকাল অনেক নিদর্শন বাস্তবায়িত হতে শুরু করেছে, যা ইসলামী চিন্তাবিদরা প্রমাণিত মনে করছেন।

রাসূল (সা.) বলেছেন, কেয়ামতের নিদর্শনগুলো যতই সামনে এগিয়ে যাচ্ছে, ততই তা বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। পৃথিবী এক সময় কেয়ামত ও হাশরের মাঠে পরিণত হবে। "হাশর" অর্থ একত্র হওয়া বা সমাবেশ ঘটানো, এবং এটি হবে কেয়ামত ও মহাসংঘর্ষের স্থান।

রাসূল (সা.) এর সময়ে শাম দেশ বলতে সিরিয়া, জর্ডান, লেবানন এবং ঐতিহাসিক ফিলিস্তিন ভূখণ্ড বোঝানো হতো। ফিলিস্তিন ও তার আশপাশের অঞ্চল সম্পর্কে রাসূল (সা.) বেশ কিছু ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী, কেয়ামতের পূর্বে এই অঞ্চলে মুসলিম বাহিনী বিজয়ী হবে। এটি ছিল নবী ও রাসূলদের পবিত্র ভূমি, এবং কেয়ামতের পরিণতির মহাসংঘর্ষ এখানেই ঘটবে।

ফিলিস্তিনের গুরুত্ব ইসলামের ইতিহাস ও ধর্মীয় বিশ্বাসে অপরিসীম। কোরআন ও হাদিসে ফিলিস্তিনের বিশেষ মর্যাদা এবং গুরুত্ব বর্ণিত হয়েছে, যা প্রতিটি মুসলমানের জানা উচিত। কোরআনের সূরা ইসরায়ের প্রথম আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, "পরম পবিত্র ও মহিমাময় সত্তা তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিবেলায় ভ্রমণ করিয়েছিলেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত, যার চারপাশে আমি বরকত দান করেছি।"

এছাড়াও, সূরা মায়েদার ১১ নম্বর আয়াতে ফিলিস্তিনকে "আরদে মুকাদ্দাস" বা পবিত্র ভূমি বলা হয়েছে। ফিলিস্তিনে বহু নবী ও রাসূলের স্মৃতি রয়েছে। এখানে হযরত ঈসা আলাইহি সালাম, হযরত মারিয়াম আলাইহি সালাম, হযরত ইব্রাহিম আলাইহি সালাম এবং আরও অনেক নবীর আগমন, জন্ম ও মৃত্যু হয়েছে।

হাদিসেও ফিলিস্তিনের গুরুত্ব স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। নবী করীম (সা.) বলেছেন, "মসজিদুল হারাম, মসজিদে নববী এবং মসজিদুল আকসা ছাড়া অন্য কোনো মসজিদে সফর করা বৈধ নয়।" হযরত মাইমুনা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত এক হাদিসে নবী (সা.) বলেন, "ফিলিস্তিন হচ্ছে হাশর ও কেয়ামতের স্থান, এটি হাশরের ময়দান, যেখানে একত্র হওয়া ঘটবে, এবং এখানে এক ওয়াক্ত সালাত অন্যান্য স্থানগুলির তুলনায় ১০০০ গুণ বেশি সওয়াবের।"

ফিলিস্তিন শুধু মুসলমানদের জন্য একটি ঐতিহাসিক বা রাজনৈতিক অঞ্চল নয়, এটি ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ফিলিস্তিনের প্রথম কিবলা বায়তুল মুকাদ্দিস ছিল এবং নবী (সা.) এখান থেকেই মেরাজে গমন করেছিলেন। মক্কা ও মদিনার পর, ফিলিস্তিনের আল কুদস ইসলামের তৃতীয় পবিত্র শহর। এখানে বহু নবী ও রাসূলের আগমন এবং তাদের কর্মের স্মৃতি বিজড়িত।

হাদিসে বর্ণিত আছে যে, হাশর ও কেয়ামত এখানেই সংঘটিত হবে। নবী (সা.) বলেছেন, "শেষ জামানায় বায়তুল মুকাদ্দিসের আশপাশে জিহাদ হবে, এবং সেই দল সর্বদা বিজয়ী থাকবে।"

ফিলিস্তিনের ভূমি শুধু ধর্মীয় মহিমা নয়, বরং এটি মুসলমানদের ঐতিহ্য, বিশ্বাস এবং কেয়ামতের সংকেত। এটি আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, কেয়ামত ও হাশর এই পবিত্র ভূখণ্ডে ঘটবে, এবং সেখানে বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের একত্রিত হওয়ার সুযোগ থাকবে।

—সাঞ্জিদা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ