ঢাকা, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

যদি ঢাকায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়, কী ঘটতে পারে

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ০৯:১৩:০৭
যদি ঢাকায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হয়, কী ঘটতে পারে

নিজস্ব প্রতিবেদন: ধরুন, ঢাকার ব্যস্ত ফার্মগেট এলাকায় একটি পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হলো— মুহূর্তেই থেমে যাবে শহরের কোলাহল, নিস্তব্ধতায় ঢেকে যাবে প্রাণচঞ্চল এই নগরী। পারমাণবিক বিস্ফোরণের ধ্বংসাত্মক শক্তি এতটাই ভয়াবহ যে, কিছু বোঝার আগেই বিস্ফোরণস্থলের সবকিছু ছাই হয়ে যাবে।

প্রথম ধাক্কায়, যদি এক মেগাটনের একটি বোমা বিস্ফোরিত হয়, তাহলে এক সেকেন্ডেরও কম সময়ে প্রায় ২ থেকে ৩ কিলোমিটার জুড়ে বিশাল এক আগুনের গোলা তৈরি হবে, যার তাপমাত্রা সূর্যের চেয়েও বেশি। এই আগ্নেয়গোলকের মধ্যে যা কিছু থাকবে, তা মুহূর্তেই প্লাজমা অবস্থায় রূপ নিয়ে ছাই হয়ে যাবে। ফার্মগেট থেকে তেজগাঁও, শাহবাগ, বাংলামোটর, নিউমার্কেট ও খামারবাড়ি পর্যন্ত এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।

পরবর্তী ধাপে, ভয়াবহ তেজস্ক্রিয়তা প্রায় ১৩ থেকে ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। সেই তাপে মোহাম্মদপুর, মিরপুর, খিলগাঁও, রামপুরা, মহাখালী ও উত্তরা পর্যন্ত এলাকাজুড়ে মানুষ হঠাৎ দেখবে, তারা আগুনে পুড়ে যাচ্ছে। এই বিস্তৃত অঞ্চলে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কার্যত শূন্য।

তৃতীয় ধাক্কায় আসবে বিশাল শব্দ তরঙ্গ ও দমবন্ধ করা চাপ। বিস্ফোরণের অভিঘাত ঢাকাকে কাঁপিয়ে তুলবে। শব্দের চেয়ে দ্রুত গতির ঝড়ো হাওয়া ২০ কিলোমিটার ব্যাসার্ধ পর্যন্ত বাড়ি-ঘর, গাছপালা ও অবকাঠামো ধ্বংস করে দেবে। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে কেউ ছবি তুলতে চাইলেও, বোতাম চাপার আগেই সবকিছু শেষ হয়ে যাবে। বিস্ফোরণের ঢেউয়ে গ্যাস ও তেলের পাম্পগুলোও জ্বলে উঠবে, আকাশে তৈরি হবে ভয়াল 'মাশরুম ক্লাউড'।

পারমাণবিক বোমার ভয়াবহতা এখানেই শেষ নয়। বাতাসে ভেসে বেড়ানো তেজস্ক্রিয় কণাগুলো বাতাসের গতিপথ ধরে ৫০ থেকে ৮০ কিলোমিটার দূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়বে। নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ এমনকি ভারতের সীমান্তবর্তী অঞ্চল পর্যন্ত এই তেজস্ক্রিয়তার 'ফলআউট' পৌঁছাবে। সেখানে যারা বেঁচে থাকবেন, তারাও মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়বেন— ক্যানসার, চর্মরোগ, বংশগত সমস্যা ও দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতা তাদের জীবনের সঙ্গী হয়ে উঠবে।

সব হারিয়ে যদি কেউ অলৌকিকভাবে বেঁচে থাকেন, সামনে পাবেন এক বিভীষিকাময় দৃশ্য। চারপাশে পুড়ে যাওয়া দেহ, আর্তনাদ, পানি আর চিকিৎসার জন্য মানুষের হাহাকার— কিন্তু কোথাও কোনো সহায়তা থাকবে না। বিমানবন্দর, মোবাইল টাওয়ার, হাসপাতাল সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। শহরে প্রবেশ করাও হবে দুঃসাধ্য, কারণ সেখানে থাকবে ভয়ানক তেজস্ক্রিয়তা।

এর সঙ্গে যোগ হবে দীর্ঘমেয়াদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আকাশ ঢেকে যাবে কার্বনের কণায়, সূর্যের আলো মাটিতে পৌঁছাবে না, নেমে আসবে ‘পারমাণবিক শীত’ বা নিউক্লিয়ার উইন্টার। আবহাওয়ার ভারসাম্য ভেঙে পড়বে, শুরু হবে অ্যাসিড বৃষ্টি। ফসল ফলানো অসম্ভব হয়ে উঠবে এবং ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ দেখা দেবে।

এই বর্ণনা কেবল এক মেগাটনের একটি পারমাণবিক বোমার। অথচ আজকের বিশ্বে ১৩ হাজারেরও বেশি পারমাণবিক অস্ত্র মজুদ রয়েছে— যার বেশিরভাগই হিরোশিমা-নাগাসাকির চেয়ে ৫০-৬০ গুণ বেশি শক্তিশালী।

২০১৭ সালে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধে সম্মত হলেও, পরাশক্তিগুলোর বিরোধিতায় তা কার্যকর হয়নি। নিরাপত্তার নামে চলতে থাকা এই অস্ত্র প্রতিযোগিতা মানবজাতিকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিতে পারে যে কোনো মুহূর্তে।

একটি ভুল সিদ্ধান্ত, একটি যুদ্ধ ঘোষণা— আর তার পরিণতি হতে পারে এই ভয়াবহ বিপর্যয়।

সিদ্দিকা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ