ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

ভারতে বাংলাভাষীদের প্রতি সন্দেহ ও 'বাংলাদেশি' তকমা: উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রাজনীতি ও ভাষাগত বৈষম্য

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ১২:০১:৪০
ভারতে বাংলাভাষীদের প্রতি সন্দেহ ও 'বাংলাদেশি' তকমা: উদ্বেগ বাড়াচ্ছে রাজনীতি ও ভাষাগত বৈষম্য

নিজস্ব প্রতিবেদন: ভারতে বসবাসকারী বাংলাভাষীদের অন্যায়ভাবে ‘বাংলাদেশি’ আখ্যা দিয়ে চিহ্নিত করার প্রবণতা সম্প্রতি গভীর উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে। এটি শুধু ভাষাগত পরিচয়ের সংকটই নয়, ভারত-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কেও নতুন করে উত্তেজনা তৈরি করছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি নিয়ে সরাসরি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন, যা পরিস্থিতির গুরুত্ব আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।

কেন বাড়ছে এই সংকট? বিশ্লেষণে উঠে আসছে পাঁচটি প্রধান কারণ:

১. ভাষাগত পরিচয়ে বিভ্রান্তি:

বাংলা ভাষাভাষীদের বাংলাদেশি বলে চিহ্নিত করার মানসিকতা ভারতের অভ্যন্তরেই বাংলা ভাষার প্রতি এক ধরনের অবজ্ঞা বা বিদেশি ভাবনার প্রতিফলন। এটি শুধু ভাষাগত বৈচিত্র্যের পরিপন্থী নয়, বরং ভারতের বহু ভাষিক ঐতিহ্যের বিরোধী।

২. রাজনীতির আগুনে ঘি:

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্বেগ প্রকাশের পর বিজেপি ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে নতুন করে রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। বিজেপি শাসিত কিছু রাজ্যে বাংলাভাষীদের প্রতি নেতিবাচক মনোভাব রাজনৈতিক বিভাজনকেই উসকে দিচ্ছে, বিশেষ করে ভাষা ও জাতিগত পরিচয়কে কেন্দ্র করে।

৩. বাংলাদেশি অভিবাসী ইস্যুর অপব্যবহার:

আসামসহ কয়েকটি রাজ্যে অভিবাসন ইস্যুকে কেন্দ্র করে বারবার রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। বৈধ-অবৈধ যাচাই না করে শুধুমাত্র ভাষার ভিত্তিতে 'বাংলাদেশি' তকমা দেওয়া একটি বিভ্রান্তিকর ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের আশঙ্কাজনক দৃষ্টান্ত।

৪. সাংস্কৃতিক অবমাননার শঙ্কা:

আসামের মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য—“বাংলা ভাষাকে মাতৃভাষা বললেই বিদেশি বলে গণ্য করা হবে”—এই ধরনের মন্তব্য শুধুই রাজনৈতিক নয়, বরং এটি একটি গভীর সাংস্কৃতিক সংকটের ইঙ্গিতবাহী। ভারতের বহুত্ববাদী সমাজ ও ভাষা বৈচিত্র্যের জন্য এটি এক ধরনের হুমকি।

৫. প্রশাসনিক দমন-পীড়নের নজির:

উড়িষ্যায় প্রায় ৩৫০ জন বাংলাভাষীকে আটক করা, দিল্লির বসন্তকুঞ্জে বাঙালি পাড়ায় পানি-বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার ঘটনাগুলো নিছক বিচ্ছিন্ন নয়, বরং এটি একটি বিস্তৃত রাষ্ট্রীয় মনোভাবের প্রকাশ। মমতার সরব অবস্থান পরিস্থিতিকে জাতীয়ভাবে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এনেছে।

এই ধরণের ঘটনাগুলো ভারতের অভ্যন্তরীণ সামাজিক সৌহার্দ্য ও ভাষাগত সহাবস্থানের উপর প্রভাব ফেলছে। ভাষা কখনও বিভেদ নয়, বরং ঐক্যের মাধ্যম হওয়া উচিত।

নির্বাচন ও ভোট ব্যাংক রাজনীতির প্রেক্ষাপটে অনেক রাজনৈতিক দল অভিবাসন ও ভাষা ইস্যুকে কাজে লাগাতে চাইছে।

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক শ্রেণির একটি অংশ জীবিকার জন্য ভারতে আসেন। এই বাস্তবতা অস্বীকার না করে, ভাষার ভিত্তিতে পুরো জনগোষ্ঠীকে বিদেশি তকমা দেওয়া অমানবিক ও সংবেদনশীলতাবর্জিত সিদ্ধান্ত।

এই সংকট কেবল একটি ভাষাগত সমস্যা নয়, এটি সামাজিক সহনশীলতা, রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং জাতিগত ন্যায়বিচারের প্রশ্ন। বাংলাভাষীদের প্রতি সন্দেহপ্রবণ দৃষ্টিভঙ্গি বন্ধ না হলে, এটি ভারতীয় গণতন্ত্র ও বহুত্ববাদী সমাজব্যবস্থার জন্য দীর্ঘমেয়াদে হুমকি হয়ে দাঁড়াতে পারে।

প্রতিবেদন: সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ