ঢাকা, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

সিন্ধু চুক্তি নিয়ে ভারত উভয় সংকটে!

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ১২ ১৯:৫৫:১১
সিন্ধু চুক্তি নিয়ে ভারত উভয় সংকটে!

কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ১৯ দিনের ভয়াবহ সংঘাত সাময়িক শান্ত হলেও, দু'দেশের সম্পর্কে তিক্ততা রয়েই গেছে। এই উত্তেজনার মধ্যেই ভারত সরকার সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) আর পুনর্বহাল না করার ঘোষণা দিয়েছে।

তবে বিষয়টি যতটা সরল মনে হচ্ছে, ততটা নয়। ভারতের বর্তমান অবকাঠামো দিয়ে পাকিস্তানে নদীর প্রবাহ পুরোপুরি বন্ধ করা সম্ভব নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি ভারত সিন্ধু অববাহিকার নদীর প্রবাহ বন্ধ করতে পারে, সামান্য পরিবর্তনও পাকিস্তানের বড় ক্ষতি করতে পারে, যা দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের কারণ হতে পারে। পাকিস্তানও বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, পানি প্রবাহের যেকোনো পরিবর্তনকে তারা যুদ্ধ হিসেবে দেখবে।

সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, সিন্ধু চুক্তি আর কখনই পুনর্বহাল হবে না। পাকিস্তানের দিকে যাওয়া পানি বরং খালের মাধ্যমে রাজস্থানে পাঠানো হবে। তিনি দাবি করেন, এতদিন পাকিস্তান অন্যায়ভাবে বেশি পানি পেয়েছে, এখন তাদের বঞ্চিত রাখা হবে।

১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী ভারত থেকে উৎপন্ন তিনটি বড় নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার পেয়েছিল পাকিস্তান, যা তাদের ৮০ শতাংশ কৃষিজমির জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত এই চুক্তি পূর্ব দিকে ভারতের তিনটি এবং পশ্চিমে পাকিস্তানের তিনটি নদীকে আলাদা করেছে।

লন্ডনের কিংস কলেজের ভূগোল বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মাজেদ আখতার আল জাজিরাকে জানান, পাকিস্তান ও ভারতের এই পানি ভাগাভাগি কাশ্মীর বিরোধের সঙ্গে জড়িত। কাশ্মীরের আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ মানে সিন্ধু নদীর জলের নিয়ন্ত্রণ, যা দু'দেশের কৃষি অর্থনীতির প্রধান উৎস।

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক চাপ বা যুদ্ধ এড়াতে ভারত সরকার যদি নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে সিন্ধু চুক্তি পুনর্বহাল করে, তাহলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার প্রশাসনের জন্য সমস্যা। বিশ্লেষকদের মতে, এমনিতেই 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সফলতা নিয়ে মোদিকে বিরোধীদের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। এর উপর সিন্ধু চুক্তি পুনর্বহাল করলে তাকে তীব্র সমালোচনার শিকার হতে হবে।

Option 2 (Slightly more descriptive with strong headings):

সিন্ধু পানি চুক্তি: ভারতের 'মাইনকার চিপা'

উত্তেজনার সূত্রপাত ও সিন্ধু চুক্তি স্থগিতের ঘোষণা

গত ২২ এপ্রিল কাশ্মীরের পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার পর ১৯ দিন ধরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এক ভয়াবহ সংঘাত চলে। পরিস্থিতি এখন কিছুটা শান্ত হলেও, সম্পর্কের বরফ গলেনি। এই উত্তেজনার মধ্যেই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) আর কখনও পুনর্বহাল না করার ঘোষণা দিয়েছে।

জটিলতা ও সম্ভাব্য পরিণতি

তবে, ভারতের জন্য পরিস্থিতি ততটা সহজ নয় যতটা মনে করা হচ্ছে। বর্তমান অবকাঠামো দিয়ে তারা পাকিস্তানে নদীর প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে অক্ষম। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, ভারত যদি সিন্ধু অববাহিকার নদীর প্রবাহ বন্ধ করতে সক্ষম হয়, তাহলে সামান্য পরিবর্তন বা অবরোধও পাকিস্তানের জন্য ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হতে পারে। এর ফলে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাকিস্তানও এ বিষয়ে বারবার হুঁশিয়ারি দিয়ে আসছে; তাদের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সেনাপ্রধান পর্যন্ত জানিয়েছেন, পানি প্রবাহের যেকোনো পরিবর্তনকে যুদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হবে।

ভারতের মন্ত্রীর কঠোর অবস্থান

সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দেন, সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি আর কখনই পুনর্বহাল হবে না। তিনি বলেন, "পাকিস্তানে যাওয়া পানি আমরা খালের মাধ্যমে বরং রাজস্থানে পাঠাব। অন্যায্যভাবে এতদিন অনেক পানি পেয়েছে পাকিস্তান, এখন তাদেরকে বঞ্চিত রাখা হবে।"

ঐতিহাসিক সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি

১৯৬০ সালের সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি অনুযায়ী, ভারত থেকে উৎপন্ন তিনটি বড় নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার পেয়েছিল পাকিস্তান। এই পানি তাদের ৮০ শতাংশ কৃষিজমির জন্য সরাসরি উপকৃত করত। বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত ৮৫ পৃষ্ঠার এই চুক্তি বিশ্বের বেশিরভাগ পানিচুক্তি থেকে ভিন্ন, যেখানে পূর্ব দিকে ভারতের তিনটি এবং পশ্চিমে পাকিস্তানের তিনটি নদীকে আলাদা করা হয়েছে।

ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট: কাশ্মীর সংযোগ

লন্ডনের কিংস কলেজের ভূগোল বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মাজেদ আখতার আল জাজিরাকে বলেছেন, পাকিস্তান ও ভারতের এই পানি ভাগাভাগি কাশ্মীর নিয়ে তাদের দীর্ঘদিনের বিরোধের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। তার মতে, কাশ্মীরের আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ মানে সিন্ধু নদীর জলের নিয়ন্ত্রণ, যা পাকিস্তান এবং ভারতের কৃষিপ্রধান অর্থনীতির জন্য জলের প্রধান উৎস।

অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক চাপ

এদিকে, আন্তর্জাতিক চাপ এবং সম্ভাব্য যুদ্ধ এড়ানোর জন্য ভারত সরকার যদি নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসে এবং সিন্ধু পানি চুক্তি পুনর্বহাল করে, তাহলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার প্রশাসন স্বস্তিতে থাকবে না। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এমনিতেই 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সফলতা নিয়ে মোদিকে বিরোধীদল কংগ্রেসের প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে নিয়মিত। এর উপর সিন্ধু পানি চুক্তি পুনর্বহাল করলে মোদি এবং তার সরকারকে তীব্র কটাক্ষ ও সমালোচনার শিকার হতে হবে, যা সহজেই অনুমেয়।

Option 3 (Focus on the "Catch-22" aspect and a bit more journalistic tone):

সিন্ধু পানিচুক্তি: দিল্লি এখন উভয় সংকটে

সংঘাতের জের ধরে সিন্ধু চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত

কাশ্মীরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার পর ভারত-পাকিস্তান প্রায় ১৯ দিন ধরে এক ভয়াবহ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে। যদিও এখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত, তবে দু'দেশের সম্পর্ক তলানিতে এসে ঠেকেছে। এই অস্থিরতার মধ্যেই ভারত সরকার সিন্ধু পানি চুক্তি (আইডব্লিউটি) আর কখনও পুনর্বহাল না করার অনমনীয় ঘোষণা দিয়েছে।

কিন্তু বাস্তবতা বলছে, বিষয়টি ভারতের জন্য মোটেই সহজ নয়। তাদের বর্তমান অবকাঠামো দিয়ে পাকিস্তানে নদীর প্রবাহ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করা কার্যত অসম্ভব।

যুদ্ধ পরিস্থিতি এড়াতে কূটনৈতিক চাপ?

বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, যদি ভারত সিন্ধু অববাহিকার নদীর প্রবাহ বন্ধ করতে সক্ষম হয়, এমনকি সামান্য পরিবর্তনও পাকিস্তানের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। আর এমনটি হলে দুই দেশের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ বেধে যেতে পারে। পাকিস্তানও বারবার হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে, পানি প্রবাহের যেকোনো পরিবর্তনকে তারা সরাসরি যুদ্ধ হিসেবে দেখবে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানসহ অনেক নেতাই এ বিষয়ে কঠোর বার্তা দিয়েছেন।

অমিত শাহের কড়া বার্তা

সম্প্রতি টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন, "সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তি আর কখনই পুনর্বহাল হবে না। পাকিস্তানে যাওয়া পানি আমরা খালের মাধ্যমে বরং রাজস্থানে পাঠাব। অন্যায্যভাবে এতদিন অনেক পানি পেয়েছে পাকিস্তান, এখন তাদেরকে বঞ্চিত রাখা হবে।"

সিন্ধু চুক্তির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট

১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত ৮৫ পৃষ্ঠার সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি (আইডব্লিউটি) বিশ্বের অন্যান্য পানিচুক্তি থেকে বেশ আলাদা। এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত থেকে উৎপন্ন তিনটি বড় নদীর পানি ব্যবহারের অধিকার পেয়েছিল পাকিস্তান, যা তাদের প্রায় ৮০ শতাংশ কৃষিজমিকে সরাসরি উপকৃত করত। এই চুক্তি পূর্ব দিকে ভারতের তিনটি এবং পশ্চিমে পাকিস্তানের তিনটি নদীকে আলাদা করেছিল।

কাশ্মীর ও পানির রাজনীতি

লন্ডনের কিংস কলেজের ভূগোল বিষয়ের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মাজেদ আখতার আল জাজিরাকে বলেছেন, পাকিস্তান ও ভারতের এই পানি ভাগাভাগি কাশ্মীর নিয়ে তাদের গভীর বিরোধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তার মতে, কাশ্মীরের আঞ্চলিক নিয়ন্ত্রণ মানে সিন্ধু নদীর জলের নিয়ন্ত্রণ, যা পাকিস্তান এবং ভারতের কৃষিপ্রধান অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জলের উৎস।

মোদি সরকারের জন্য অভ্যন্তরীণ চাপ

অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক চাপ এবং পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধ এড়ানোর জন্য যদি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার নিজেদের কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসে এবং সিন্ধু পানি চুক্তি পুনর্বহাল করে, তাহলেও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার প্রশাসনের জন্য নতুন সমস্যা দেখা দেবে। বিশ্লেষকদের মতে, এমনিতেই 'অপারেশন সিঁদুর'-এর সফলতা নিয়ে মোদিকে নিয়মিতভাবে বিরোধীদল কংগ্রেসের প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। এর উপর সিন্ধু পানি চুক্তি পুনর্বহাল করলে মোদি এবং তার সরকারকে তীব্র সমালোচনার মুখে পড়তে হবে, যা সহজেই অনুমেয়। মোদি এখন যেন এক 'মাইনকার চিপা' বা উভয় সংকটে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ