ঢাকা, রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

শিক্ষকের কুপ্রস্তাব ও হুমকির শিকার হয়ে ছাত্রীর আত্মহননের চেষ্টা, সহপাঠীও দগ্ধ

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৩ ০৯:০৫:২২
শিক্ষকের কুপ্রস্তাব ও হুমকির শিকার হয়ে ছাত্রীর আত্মহননের চেষ্টা, সহপাঠীও দগ্ধ

ভারতের ওড়িশা রাজ্যের ফকির মোহন কলেজে এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। এক কলেজ ছাত্রী তার বিভাগীয় প্রধানের বিরুদ্ধে আনা যৌন হয়রানি এবং হুমকির অভিযোগের সুরাহা না হওয়ায় নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়েছেন। এই ঘটনায় তার শরীরের ৯৫ শতাংশ পুড়ে গেছে এবং তাকে বাঁচাতে গিয়ে এক সহপাঠীও ৭০ শতাংশ দগ্ধ হয়েছেন। বর্তমানে দুজনেই আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

এনডিটিভি জানিয়েছে, গত শনিবার (১২ জুলাই) এই ঘটনা ঘটে।

অভিযোগ এবং উপেক্ষার চিত্র

ফকির মোহন কলেজের ওই ছাত্রী অভিযোগ করেছিলেন যে, তার বিভাগীয় প্রধান তাকে বারবার অনৈতিক প্রস্তাব দিচ্ছিলেন এবং তার প্রস্তাবে রাজি না হলে ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছিলেন। গত ১ জুলাই তিনি কলেজের অভ্যন্তরীণ অভিযোগ কমিটিতে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তাকে আশ্বস্ত করা হয়েছিল যে সাত দিনের মধ্যে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে, কিন্তু সময় পেরিয়ে গেলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।

প্রতিবাদ থেকে মর্মান্তিক পরিণতি

১২ জুলাই, শনিবার, অভিযোগের কোনো সুরাহা না হওয়ায় ওই ছাত্রী ও তার কয়েকজন সহপাঠী কলেজের গেটের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন। সহপাঠীদের বর্ণনা অনুযায়ী, বিক্ষোভ চলাকালীন ছাত্রীটি হঠাৎ অধ্যক্ষের কার্যালয়ের কাছাকাছি গিয়ে নিজের গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, আগুন লাগার পর ছাত্রীটি একটি করিডোরের দিকে দৌড়ে যান। এসময় এক সহপাঠী তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করলে তার টি-শার্টেও আগুন ধরে যায়। পরে অন্যান্যরা এসে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন।

কর্তৃপক্ষের দায়বদ্ধতা ও পদক্ষেপ

ওড়িশার উচ্চশিক্ষা মন্ত্রী সূর্যবংশী সুরজ জানিয়েছেন, অভিযুক্ত শিক্ষককে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া, তাকে এবং কলেজের অধ্যক্ষকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে রাজ্য উচ্চশিক্ষা দপ্তর। মন্ত্রী আরও বলেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

কলেজের অধ্যক্ষ দিলীপ ঘোষ জানান, ছাত্রীর অভিযোগ গ্রহণ করা হয়েছিল এবং অভ্যন্তরীণ কমিটির প্রতিবেদন তৈরির প্রক্রিয়া চলছিল। তিনি বলেন, “ওই ছাত্রী আমার অফিসে এসে জানায়, সে মারাত্মক মানসিক চাপে আছে এবং শিক্ষক সমীর কুমার সাহুকে আমার অফিসে ডাকার অনুরোধ করে। আমি শিক্ষক ও ছাত্রীকে ডেকে কথা বলি এবং জানাই যে অভিযোগ প্রমাণিত হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শিক্ষক সাহু অভিযোগ অস্বীকার করেন এবং ছাত্রী তার বক্তব্যে অটল থাকেন।”

কলেজজুড়ে বিক্ষোভ ও তদন্ত শুরু

এই মর্মান্তিক ঘটনার পর কলেজে ব্যাপক বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। বালাসোরের পুলিশ সুপার রাজ প্রসাদ নিশ্চিত করেছেন যে অভিযুক্ত শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, প্রমাণ সংগ্রহের জন্য একাধিক দল কাজ করছে এবং দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আহত ছাত্রী ও সহপাঠী বর্তমানে ভুবনেশ্বরের এইমস হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ