ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই ২০২৫, ৩ শ্রাবণ ১৪৩২

কেন ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করে পারবে না ইসরায়েল

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মে ২৩ ২২:৫২:৪৯
কেন ইরানের সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধ করে পারবে না ইসরায়েল

নিজস্ব প্রতিবেদক: মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে যেন ঘনিয়ে আসছে যুদ্ধের মেঘ—একদিকে ইসরায়েল, অন্যদিকে ইরান। প্রযুক্তির দিক দিয়ে আধুনিক ও শক্তিশালী ইসরায়েল কি পারবে দীর্ঘমেয়াদি প্রস্তুত ইরানকে পরাজিত করতে? উত্তরটা সরল নয়। বাস্তবতা বলছে, ইসরায়েলের জন্য এই লড়াই সহজ হবে না।

গত কয়েক বছর ধরে ইরান যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে শুধু আত্মরক্ষার নয়, সম্ভাব্য প্রতিশোধের লক্ষ্যেও। হাইপারসোনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি, উন্নত ড্রোন, এমনকি স্যাটেলাইট ফাঁকি দিতে সক্ষম মিসাইল—সবকিছু মিলিয়ে ইরান নিজেকে প্রস্তুত করেছে একটি জটিল ও বহুমাত্রিক যুদ্ধের জন্য।

অন্যদিকে ইসরায়েল, যদিও প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে, কিন্তু ভৌগোলিকভাবে ছোট এবং চতুর্দিকে শত্রু পরিবেষ্টিত। উত্তরে হিজবুল্লাহ, দক্ষিণে হামাস, পশ্চিমে হুথি বিদ্রোহী, আর কেন্দ্রে মূল প্রতিপক্ষ ইরান। ফলে যেকোনো সংঘাতে ইসরায়েলকে একাধিক ফ্রন্টে মোকাবিলা করতে হবে—যা দীর্ঘমেয়াদে দুঃসাধ্য হয়ে উঠতে পারে।

অনেকেই মনে করেন, ইসরায়েল যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ মিত্র হওয়ায় তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত। তবে সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের প্রেক্ষিতে হোয়াইট হাউসের কড়া সমালোচনা এবং অস্ত্র সরবরাহে অনীহা এই সম্পর্কের মধ্যে কৌশলগত দূরত্বের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

চীন ও রাশিয়ার সমর্থন ইরানের শক্তিকে আরও বহুমাত্রিক করে তুলেছে। চীনের সঙ্গে ২৫ বছরের কৌশলগত চুক্তি ও রাশিয়ার ড্রোন ও সামরিক সহযোগিতা ইরানকে একরকম ‘আঞ্চলিক বলয়’ গড়ে তুলতে সহায়তা করছে। ফলে ইরানকে আঘাত মানেই পরোক্ষভাবে চীন-রাশিয়াকে স্পর্শ করা।

ধরা যাক, ইসরায়েল ইরানের একটি পরমাণু স্থাপনায় হামলা চালায়—তখন হিজবুল্লাহর রকেট, হুথিদের ড্রোন, সিরিয়া-ইরাকের মিলিশিয়া এবং মার্কিন ঘাঁটিতে হামলার ঢেউ—সব মিলিয়ে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়বে মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে। এমন পরিস্থিতিতে কেবল প্রযুক্তির জোরে টিকে থাকা কঠিন হবে ইসরায়েলের জন্য।

ইসরায়েলের হাতে পারমাণবিক অস্ত্র আছে বটে, তবে আন্তর্জাতিক রাজনীতির চাপ এবং কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করার বাধ্যবাধকতায় এর ব্যবহার খুবই সীমিত।

ইরান সরাসরি যুদ্ধ চায় না, তবে যুদ্ধ শুরু হলে চালায় নিজের শর্তে। তারা জানে কীভাবে এমন প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়, যা শত্রুকে দ্বিতীয়বার ভাবতে বাধ্য করে। এটাকেই পশ্চিমারা বলে ‘ডিটারেন্স ক্যালকুলেশন’—যুদ্ধের আগেই বিপক্ষকে বোঝানো, “আমি প্রস্তুত”।

এই সংঘাত কেবল দুই দেশের মধ্যে নয়—এটা আদর্শ, আধিপত্য ও অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই। একদিকে পশ্চিমা দাপট, অন্যদিকে ঐতিহাসিক প্রতিরোধ ও আত্মপরিচয়ের লড়াইয়ে প্রস্তুত ইরান।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ