ঢাকা, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে—কে এই ইয়াজুজ ও মাজুজ

ধর্ম ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ১৭ ১১:২৬:১৭
কোরআন ও আধুনিক বিজ্ঞানের আলোকে—কে এই ইয়াজুজ ও মাজুজ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইয়াজুজ ও মাজুজ—দুই রহস্যময় জাতি, যাদের নাম পবিত্র কোরআন ও হাদিসে বারবার উঠে এসেছে। তারা কারা? কোথা থেকে আসবে? পৃথিবীর কোন প্রান্তে লুকিয়ে আছে তারা? এসব প্রশ্নে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে মানুষ বিভ্রান্ত ও কৌতূহলী।

কোরআনের বর্ণনা অনুযায়ী, তারা ছিল এক বর্বর ও ধ্বংসাত্মক জাতি, যাদের দমন করতে মহান শাসক জুলকারনাইন একটি অতিকায় প্রাচীর নির্মাণ করেছিলেন। সেই প্রাচীর এখনো তাদের আটকে রেখেছে, তবে কিয়ামতের আগমুহূর্তে তারা তা ভেঙে বেরিয়ে আসবে এবং পৃথিবীজুড়ে ছড়াবে বিশৃঙ্খলা ও ধ্বংসযজ্ঞ। তারা হবে এতই বিপুল সংখ্যায় যে, পৃথিবীর কোনো শক্তিই তখন তাদের থামাতে পারবে না—অবশেষে, আল্লাহর ইচ্ছায় এক মহামারীতে তারা ধ্বংস হবে।

তাদের প্রকৃতি নিয়ে বহু মতভেদ রয়েছে। কেউ বলেন, তারা আদিম কোনো মানবগোষ্ঠী, আবার কেউ বলেন তারা ভিনগ্রহের প্রাণী বা এক্সট্রা-টেরেস্ট্রিয়াল জাতি। আধুনিক গবেষণায় উঠে এসেছে বিভিন্ন সম্ভাবনার কথা।

কিছু গবেষক মনে করেন, ইয়াজুজ ও মাজুজ পৃথিবীর অভ্যন্তরে লুকিয়ে আছে। এই তত্ত্বে বলা হয়, ভূপৃষ্ঠের নিচে বিশাল গুহা বা গহ্বর রয়েছে, যেখানে থাকতে পারে এক গোপন সভ্যতা। ১৭ শতকে বিজ্ঞানী এডমন্ড হ্যালি এবং পরবর্তীতে জন ক্লেভ সাইমস এই তত্ত্বকে জনপ্রিয় করেন।

কোরআনে বলা হয়েছে—“তারা প্রতিটি উচ্চ স্থান থেকে দ্রুত নেমে আসবে”—যা অনেকেই ব্যাখ্যা করেন মহাকাশ থেকে আসার ইঙ্গিত হিসেবে। আজকের দিনে বিভিন্ন ইউএফও (অজানা উড়ন্ত বস্তু) পর্যবেক্ষণ এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের স্বীকৃতি এই ধারণাকে আরও জোরদার করে।

একই সূত্রে “আনুন্নাকি” জাতির কথাও উঠে আসে—যাদের সম্পর্কে বলা হয়, তারা ভিনগ্রহের এলিয়েন যারা প্রাচীন সুমেরীয় সভ্যতাকে নিয়ন্ত্রণ করত। লেখক জেকারিয়া সিচিনের মতে, তারা হয়তো এখনো মানবসভ্যতাকে প্রভাবিত করছে।

আরেকটি গবেষণা ভিত্তিক মত হলো—ইয়াজুজ ও মাজুজ আসলে কোনো হারিয়ে যাওয়া মানবগোষ্ঠী, যেমন নিয়ান্ডারথেল বা ডেনিসোভান। ২০০৮ সালে সাইবেরিয়ার এক গুহায় আবিষ্কৃত ডেনিসোভানদের ডিএনএ আধুনিক মানুষের মধ্যেও পাওয়া গেছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, হয়তো এদের কোনো শাখাই ছিল ইয়াজুজ-মাজুজ।

বায়োমেডিকেল প্রযুক্তির উন্নতির ফলে ভবিষ্যতে মানুষ নিজেই হয়তো এমন জাতি তৈরি করতে পারে যারা অত্যন্ত হিংস্র, শক্তিশালী ও নিয়ন্ত্রণহীন—যারা হয়ে উঠতে পারে ইয়াজুজ ও মাজুজের আধুনিক রূপ।

ইয়াজুজ ও মাজুজ নিয়ে যত মতভেদই থাকুক, কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী তারা একদিন ফিরে আসবেই। আর তখন মানবজাতি সাক্ষী হবে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতার, যা শুধু ধর্মীয় ভবিষ্যদ্বাণী নয়—বিজ্ঞানের আলোতেও এক রহস্যঘেরা সম্ভাবনা।

তালহা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ