ঢাকা, শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৭ আষাঢ় ১৪৩২

হাসিনার একটি নির্দেশ, নিঃশেষ ১৪০০ প্রাণ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৯ ১৮:০৫:১৬
হাসিনার একটি নির্দেশ, নিঃশেষ ১৪০০ প্রাণ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসে বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটে যায় এক ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শুরু হওয়া শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ অল্প সময়ের মধ্যেই রূপ নেয় সার্বজনীন গণআন্দোলনে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরকার যে পন্থা গ্রহণ করে, তা নিয়েই শুরু হয় বিতর্ক।

এই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে একটি অডিও কল, যেখানে শোনা যায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর বলে ধারণা করা হয়। সেই কলটির মূল বার্তা ছিল সংক্ষিপ্ত কিন্তু রুদ্ধশ্বাস— “যেখানে পাবে, সোজা গুলি করো”।

জাতীয় টেলিযোগাযোগ পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র (NTMC)-এর সূত্রে জানা যায়, ১৮ জুলাই গণভবন থেকে করা একটি ফোন কল রেকর্ড করা হয়, যেখানে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম বিবিসিআই-এর অনুসন্ধানে ওই কলটিকেই গণদমন অভিযানের সূচনাবিন্দু হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

এই অডিও ফাঁস হওয়ার পরপরই রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে শুরু হয় ব্যাপক দমন-পীড়ন। ৫ আগস্ট ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশি গুলিতে প্রাণ হারান অন্তত ৫২ জন। প্রত্যাহারকৃত সেনা সদস্যদের জায়গায় অবস্থান নেওয়া পুলিশের টানা ৩০ মিনিটের গুলিবর্ষণে নিহত হন অসংখ্য ছাত্র। পাল্টা প্রতিরোধে ছয়জন পুলিশ সদস্য নিহত হন এবং যাত্রাবাড়ী থানা ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

বাংলাদেশ পুলিশের একজন মুখপাত্র বিবিসিকে জানান, ওই সময়ের সহিংসতার ঘটনায় ৬০ জন পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার ভাষ্য অনুযায়ী, কিছু সদস্য “অতিরিক্ত বলপ্রয়োগে” জড়িত ছিলেন, যা সরকারও অনভিপ্রেত বলে উল্লেখ করেছে। নিরপেক্ষ তদন্ত চলছে বলেও তিনি জানান।

জাতিসংঘের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, জুলাই-আগস্টের এই সহিংসতায় মোট ১৪০০ জন নিহত হন এবং বহু মানুষ এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। এই ঘটনায় শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা এবং সহিংসতার উসকানির অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলমান।

২০২৫ সালের মার্চ মাসে শেখ হাসিনা ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয় নেন। বাংলাদেশ সরকার তার প্রত্যাবাসনের দাবি জানালেও ভারতীয় কর্তৃপক্ষ এখনো সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সাড়া দেয়নি।

এদিকে আওয়ামী লীগ দাবি করেছে, ছড়িয়ে পড়া অডিওটি ভুয়া এবং এটি সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার উদ্দেশ্যে সাজানো হয়েছিল। তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, তৎকালীন প্রশাসনের প্রধান লক্ষ্য ছিল “জননিরাপত্তা রক্ষা করা”।

শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর দেশে গঠিত হয় একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, যার নেতৃত্বে রয়েছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তার তত্ত্বাবধানে নতুন নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে।

তবে ইতিহাসে অম্লান হয়ে থাকবে সেই ভয়াবহ জুলাই-আগস্ট, যেখানে একটি কলের জবাবে ঝরে গিয়েছিল হাজারো প্রাণ।

অডিও শুনতে এখানে ক্লিক করুন

প্রতিবেদন: আদন দেলোয়ার

বি.দ্র.: এই প্রতিবেদনটি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম, মানবাধিকার সংস্থা ও অনুসন্ধানী তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি। যেকোনো মতানৈক্যের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষ বিচার ও তদন্ত অপরিহার্য।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ