ঢাকা, বুধবার, ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

ইরানের পর কে

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ২৫ ০৮:৫৩:১২
ইরানের পর কে

নিজস্ব প্রতিবেদক: মধ্যপ্রাচ্যের আকাশ এখন ধোঁয়ায় ঢেকে আছে— শব্দ শোনা যাচ্ছে যুদ্ধবিমানের, আলো দেখা যাচ্ছে ক্ষেপণাস্ত্রের। ১৩ জুন ২০২৫ থেকে শুরু হওয়া ইসরায়েল-ইরান সংঘাত এখন আর শুধু সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই; তা ছড়িয়ে পড়ছে আঞ্চলিক রাজনীতির প্রতিটি স্তরে।

প্রতিদিন ইরানের শহরগুলোয় বাজছে বিপদ সংকেতের সাইরেন, ভোরে ড্রোন পাড়ি দিচ্ছে হাইফা ও তেলআবিবের দিকে। পাল্টা হামলায় ইসরায়েলও রেহাই দিচ্ছে না। দুই দেশের প্রাণহানি বাড়ছে ভয়াবহ হারে। পরিস্থিতি দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন— এটি আর শুধু একটি যুদ্ধ নয়, এটি একটি পরিবর্তনের সংকেত। প্রশ্ন এখন কেবল একটি— ইরানের পর কার পালা?

এই প্রশ্ন আবেগপ্রবণ নয়, বরং বাস্তব অভিজ্ঞতার প্রতিফলন। যারা একসময় ইসরায়েলের সঙ্গে শান্তির নামে চুক্তিতে পৌঁছেছিলেন— যেমন সৌদি আরব, আমিরাত, বাহরাইন— তারাই আজ অনেকটা নীরব। তখন তাদের বক্তব্য ছিল, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য কৌশলগত অংশীদারিত্ব জরুরি। অথচ গাজা বা তেহরানের ওপর বোমা পড়ার সময় তাদের অবস্থান সীমিত ‘উভয় পক্ষকে সংযত থাকার’ আহ্বানে।

আব্রাহাম অ্যাকর্ডের মূল কৌশল ছিল— অর্থনীতি ও প্রযুক্তির হাত ধরে ইরানকে কোণঠাসা করা। কিন্তু ইতিহাস বলেছে, কোনো জোট চিরস্থায়ী নয়। আজকের মিত্র কাল হয়ে উঠতে পারে নতুন লক্ষ্য।

১৯৩৮ সালে মিউনিখ চুক্তিতে ইউরোপীয় নেতারা হিটলারকে শান্ত রাখতে চেকোস্লোভাকিয়ার সিডেটেন অঞ্চল ছেড়ে দেন। ফল কী হয়েছিল, তা ইতিহাস জানে— পরের কয়েক বছরে গোটা ইউরোপ হিটলারের আগ্রাসনের শিকার হয়। যারা চুপ ছিল, তারাও শেষমেশ রক্ষা পায়নি।

আজ অনেকেই ভাবেন, “ইরান তো শিয়া রাষ্ট্র, আমাদের কিছু হবে না।” কিন্তু এ ধরনের ধারণা স্বল্পদৃষ্টির। রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা কখনো এক জায়গায় থেমে থাকে না। আগ্রাসনের মনোভাব একবার সফল হলে, পরবর্তী লক্ষ্য নির্ধারণ শুধু সময়ের ব্যাপার।

ইসরায়েলের অভ্যন্তরে বহু বছর ধরে "গ্রেটার ইসরায়েল" ধারণা ঘুরে বেড়াচ্ছে— নীলনদ থেকে ইউফ্রেতিস পর্যন্ত অঞ্চলকে ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে কল্পনা করা হয়। পশ্চিম তীরে বসতি সম্প্রসারণ বা নেতাদের বক্তব্যগুলোও সেই ধারণাকেই জোরদার করে।

এখন প্রশ্ন উঠছে— মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ, যেমন জর্ডান, মিশর, সৌদি আরব, এমনকি কাতার, যারা এখনো দ্বিধায় আছে— তাদের অবস্থান কোথায় যাবে এই মানচিত্রে?

ইতিহাস অনেক কিছু বলে। ১৯৫৩ সালে ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্র যৌথভাবে ইরানের জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেককে সরিয়ে দিয়ে তেলনির্ভর স্বার্থে শাহকে ক্ষমতায় বসায়। ২০০৩ সালে ‘গণবিধ্বংসী অস্ত্রের’ নামে ইরাক দখল করা হয়, অথচ পরে দেখা যায়, সেসব অস্ত্র আদৌ ছিল না।

এসব নজির জানায়— শক্তিধর রাষ্ট্রগুলো যখন "নিরাপত্তা"র কথা বলে, প্রকৃত লক্ষ্য থাকে ভিন্ন: ভৌগোলিক কর্তৃত্ব এবং অর্থনৈতিক আধিপত্য।

এক সময়ের আরব ঐক্য আজ অনেকটাই অস্তিত্বহীন। ১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে তেল অবরোধের মাধ্যমে সৌদি আরব বিশ্ববাজারে চমক সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু এখন উপসাগরীয় দেশগুলো পশ্চিমা অস্ত্র, প্রযুক্তি ও বাজারের ওপর এতটাই নির্ভরশীল যে তারা আর আগের মতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না।

২০১৯ সালে হুতিদের ড্রোন হামলায় সৌদি তেল স্থাপনায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও, পশ্চিমা জোট থেকে বড় কোনো প্রতিক্রিয়া আসেনি। এই উদাসীনতা আবারও প্রমাণ করে— চুক্তি বা জোট থাকলেও, স্বার্থের বাইরে কেউ পাশে দাঁড়ায় না।

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত যদি আরও বিস্তৃত হয়, তাহলে ঝুঁকির তালিকায় থাকবে পারস্য উপসাগর, উপকূলীয় গ্যাসক্ষেত্র, এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাতের বাণিজ্যকেন্দ্র দুবাইও। শুধু বিবৃতি দিয়ে এমন সংকট সামাল দেওয়া যাবে না। প্রয়োজন হবে দৃঢ় অবস্থান নেওয়ার।

আজ যারা চুপ, কাল তাদের পালাও আসতে পারে। ইতিহাসের পাতা বলছে— আগ্রাসনের সামনে নীরবতা রক্ষা করে না, বরং লক্ষ্য তালিকায় নিজের নাম লেখায়।

মধ্যপ্রাচ্যের ছোট দেশগুলোর সামনে এখন দুটি পথ।এক: স্পষ্ট বার্তা দেওয়া— অন্যায়ের বিরুদ্ধে তারা নিরপেক্ষ নয়।দুই: চুপ থেকে আশা করা— ঝড়টা পাশ কাটিয়ে যাবে।

প্রথম পথ কঠিন— কারণ তাতে হারাতে হতে পারে বিদেশি অস্ত্র, প্রযুক্তি ও সুবিধা।কিন্তু দ্বিতীয় পথ ভয়ানক— কারণ সেখানে হারাতে হতে পারে রাষ্ট্রের অস্তিত্বই।

যারা এখন ভাবছেন, ‘এই আগুন আমাদের ছুঁবে না’, তারা ভুলে যাচ্ছেন— আগুনের দেরি হতে পারে, কিন্তু থামবে না।ইতিহাস বারবার দেখিয়েছে, ন্যায়বিচারের পাশে না দাঁড়ালে এক সময় সেই অন্যায় নিজের দরজায় কড়া নাড়ে।

সিদ্দিকা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

২০২৬ বিশ্বকাপে কি ইরান খেলতে পারবে না!

২০২৬ বিশ্বকাপে কি ইরান খেলতে পারবে না!

নিজস্ব প্রতিবেদক: মধ্যপ্রাচ্যের রাজনৈতিক উত্তাপ এবার ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্ব ক্রীড়াঙ্গনেও। ইসরায়েল-ইরান দ্বন্দ্বে যুক্তরাষ্ট্রের সক্রিয় অবস্থান বিশ্বকাপ ফুটবলকে ঘিরে একটি গুরুত্বপূর্ণ... বিস্তারিত