ঢাকা, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

শিয়ারা কি মুসলমান নয়! কী বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

ধর্ম ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ২০ ১৫:৪৯:৫৬
শিয়ারা কি মুসলমান নয়! কী বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ

নিজস্ব প্রতিবেদক: শিয়া মুসলমানদের পরিচয় ও বিশ্বাস নিয়ে নানা সময়ে নানা প্রশ্ন উঠে এসেছে। শায়খ আহমাদুল্লাহ এ বিষয়ে সম্প্রতি নিজের মতামত তুলে ধরেছেন। তিনি বলেন, "শিয়া" শব্দটি এসেছে “শিয়াতু আলী” থেকে, যার অর্থ ‘আলী (রাঃ)-এর অনুসারীরা’। মূলত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পরিবারের প্রতি ভালোবাসা এবং কিছু বিশেষ বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা একটি ভিন্নমত এই শিয়া মতবাদ।

যদিও শিয়াদের উৎপত্তি সাহাবায়ে কেরামের যুগেই, অনেক ইতিহাসবিদ মনে করেন, এক ইহুদি ব্যক্তি আবদুল্লাহ ইবনে সাবা ইসলামের ভেতরে বিভাজন সৃষ্টি করতে এই মতবাদের বীজ বপন করেন। সেই থেকে ধীরে ধীরে নানা মত ও বিশ্বাস গড়ে ওঠে, যা ইসলামি আকিদার সঙ্গে একাধিক ক্ষেত্রে সাংঘর্ষিক।

শায়খ আহমাদুল্লাহ যেসব বিষয় নিয়ে শিয়াদের মতাদর্শে প্রশ্ন তুলেছেন, তা নিচে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো:

১. তাওহীদের ব্যাখ্যায় পার্থক্য – শিয়ারা "আলীউন ওয়ালিয়ুল্লাহ" বলা ঈমানের অংশ মনে করে, যা মূল কালেমার সঙ্গে অতিরিক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়।

২. কোরআনের বিষয়ে সন্দেহ – কিছু শিয়া উপদল মনে করে, বর্তমান কোরআনে পরিবর্তন এসেছে বা এটি পূর্ণাঙ্গ নয়। কেউ কেউ বিকৃত কোরআন প্রচারের অভিযোগেও অভিযুক্ত।

৩. সাহাবিদের অসম্মান – রাসূলের অনেক সাহাবিকে (আলী, ফাতিমা, হাসান, হুসাইন ব্যতীত) কাফের বলা এবং তাঁদের গালি দেওয়া কিছু শিয়া উপদলের মধ্যে প্রচলিত, যা ইসলামের মূল শিক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

৪. আয়েশা (রাঃ)-এর সম্মানহানি – উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহার চরিত্র নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে কিছু শিয়া গোষ্ঠী, যদিও কোরআনের সূরা নূর-এ আল্লাহ তাঁর নির্দোষতার ঘোষণা দিয়েছেন।

শিয়াদের সবচেয়ে বড় ও পরিচিত উপদল হলো ইসনা আশারিয়া বা বারো ইমামবাদী শিয়া। তারা বিশ্বাস করে, রাসূলের পরে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনোনীত ১২ জন ইমাম আছেন, যাঁরা নিষ্পাপ এবং তাঁদের মাধ্যমে হিদায়াত অর্জন করা বাধ্যতামূলক। তারা মনে করে, শেষ ইমাম এখন গায়েব অবস্থায় আছেন এবং একদিন ফিরে আসবেন।

তাহলে শিয়ারা কি মুসলমান নয়?

শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, শিয়ারা একক গোষ্ঠী নয়— এদের ভেতরে নানা উপদল আছে। কিছু উপদল এমন বিশ্বাস ধারণ করে, যা ইসলামের মৌলিক আকিদার সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। যেমন— কোরআনের বিকৃতি, সাহাবিদের অস্বীকার, আয়েশার (রাঃ) বিরুদ্ধে অপবাদ, এমনকি কেউ কেউ বলে থাকেন, জিবরাঈল (আঃ) ভুলবশত রাসূল (সা.)-এর কাছে ওহি এনেছেন— মূলত তা আনা উচিত ছিল আলী (রাঃ)-এর কাছে। এসব মতবাদ যারা বিশ্বাস করে, তাদের ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে মুসলমান বলা যায় না।

তবে এমন শিয়াও আছে যারা শুধু মনে করে যে খেলাফতের অধিকার আলী (রাঃ)-এরই ছিল। এটি একটি মতভিন্নতা হলেও তা সরাসরি কুফরি নয়। তাই শিয়াদের প্রতি কোনো চূড়ান্ত রায় দেয়ার আগে তাদের আকিদা ও বিশ্বাস বিস্তারিতভাবে বিচার করা উচিত।

শায়খ আহমাদুল্লাহ আরও বলেন, একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব— ইসলামের সঠিক বিশ্বাসগুলো বুঝা, শেখা এবং তাতে অটল থাকা। ইসলামের মৌলিক বিষয় অস্বীকার করলে সেটি কুফরি হিসেবে বিবেচিত হয়, এবং সে অনুযায়ী অবস্থান নেওয়া জরুরি।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে হক বুঝে গ্রহণ করার এবং ভ্রান্তি থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দিন। আমিন।

আয়শা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ