বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত আকাশপথে হামলার মুখে

নিজস্ব প্রতিবেদক; ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাতে যখন আকাশপথে হামলা ও পাল্টা হামলার ঝড় বয়ে যাচ্ছে, তখন নতুন করে আলোচনায় এসেছে বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। পারমাণবিক শক্তিধর দুই প্রতিবেশীর সংঘাতে ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র ও যুদ্ধবিমানের ব্যবহার দেখে দেশের মানুষের মনে প্রশ্ন—হঠাৎ যদি আকাশপথে হুমকি আসে, বাংলাদেশ কি প্রস্তুত?

ধাপে ধাপে আধুনিকায়ন চলছে বিমান বাহিনীতেস্বাধীনতার ৫৩ বছর পরেও বাংলাদেশ বিমান বাহিনী এখনও রূপান্তরের পথে। ‘ফোর্সেস গোল ২০৩০’-এর আওতায় আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আধুনিকায়ন চালিয়ে যাচ্ছে সরকার। বর্তমানে বাহিনীর হাতে রয়েছে প্রায় ৪৪টি যুদ্ধবিমান—এর মধ্যে রয়েছে চীনের তৈরি F-7 (৩৬টি) এবং রাশিয়ার MIG-29 (৮টি)। মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট যুক্ত করার পরিকল্পনাও রয়েছে, যার তালিকায় রয়েছে চীনের উন্নত প্রযুক্তির J-10C।

ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা: সীমাবদ্ধতা এখনো আছেবাংলাদেশের সর্বাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা হিসেবে আছে চীনের তৈরি FM-90, যা স্বল্পপাল্লায় ১৫ কিলোমিটার পর্যন্ত লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে আধুনিক যুদ্ধে মধ্য ও দীর্ঘপাল্লার হুমকির বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা যথেষ্ট নয়। তুলনায় ভারত ব্যবহার করছে রাশিয়ার S-400 ট্রায়াম্প ও ইসরায়েল-ভারতের যৌথ Barak-8 সিস্টেম—যা প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক এগিয়ে।

রাডার ও ড্রোন প্রতিরক্ষা: এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনআকাশসীমা নজরদারিতে বাংলাদেশ বেশ কিছু আধুনিক রাডার সিস্টেম স্থাপন করেছে—যেমন JY-11B, JYL-6 এবং YLC-6। এগুলো হুমকি শনাক্ত ও পর্যবেক্ষণে কার্যকর হলেও ড্রোন আক্রমণ প্রতিহত করতে আরও উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন রয়েছে। তাই বিমান বাহিনী ‘কাউন্টার ড্রোন সারভেইল্যান্স সিস্টেম’ কেনার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।

আক্রমণ নয়, আত্মরক্ষা—এই নীতিতেই বাংলাদেশবাংলাদেশের প্রতিরক্ষা কৌশল মূলত আত্মরক্ষামূলক। আক্রমণাত্মক সামরিক কৌশলের পরিবর্তে সীমিত কিন্তু কার্যকর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দিকেই মনোযোগী বাংলাদেশ। ফলে যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশ সরাসরি জড়ানোর পক্ষপাতী নয়, তবে প্রয়োজনে নিজেকে রক্ষা করতে সচেষ্ট।

উপসংহার: উন্নয়নই ভবিষ্যতের চাবিকাঠিযুদ্ধের মেঘ যখন দক্ষিণ এশিয়ার আকাশে, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠে—বাংলাদেশ কতটা সুরক্ষিত? যদিও সীমিত সক্ষমতা নিয়ে আত্মরক্ষায় প্রস্তুত রয়েছে দেশটি, তবে ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রয়োজন আরও আধুনিক প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ ও কৌশলগত প্রস্তুতি।

সোহাগ আহমেদ/