ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: গাজওয়াতুল হিন্দের পূর্বাভাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: ৭৫ বছরের পুরোনো বৈরিতা আবারও জোরালো রূপ নিচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দুই পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। কাশ্মীরকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ও সহিংসতার সাম্প্রতিক তরঙ্গ অনেককে ভাবিয়ে তুলেছে—এই সংঘাত কি হাদিসে বর্ণিত “গাজওয়াতুল হিন্দ”-এর ইঙ্গিত হতে পারে?

১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ শাসনের অবসানের পর থেকেই কাশ্মীরকে ঘিরে দ্বন্দ্বের সূচনা। এই অঞ্চলকে কেন্দ্র করে দুই দেশ বড় আকারে তিনবার যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে—১৯৪৭, ১৯৬৫ এবং ১৯৯৯ সালের কারগিল যুদ্ধ। ২০১৯ সালে ভারতীয় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসনের অবসান ঘটায়, যার ফলে নতুন করে উত্তেজনার আগুন জ্বলে ওঠে। তারপর থেকেই সীমান্তে বারবার সংঘর্ষ, সন্ত্রাসী হামলা এবং পাল্টাপাল্টি অভিযোগ অব্যাহত রয়েছে।

যদিও অনেকে এই বিরোধকে শুধু ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ হিসেবে দেখেন, তবুও এর পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের ধর্মীয় বিভাজনের ইতিহাস। হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি ও মুসলিম পরিচয়ের দ্বন্দ্ব এই সংকটকে আরও জটিল করে তুলেছে।

এই পটভূমিতে ইসলামী ভবিষ্যদ্বাণী “গাজওয়াতুল হিন্দ”-এর আলোচনা আবার সামনে এসেছে। কিছু ইসলামপন্থী ও ধর্মীয় চেতনায় বিশ্বাসীরা মনে করছেন, ভারতের বর্তমান পরিস্থিতি হাদিসে উল্লেখিত সেই যুদ্ধের পূর্বাভাস হতে পারে—যেখানে মুসলমানরা হিন্দুস্তানে বিজয় লাভ করবে।

তবে প্রধানধারার অনেক ইসলামি আলেম একমত নন। তাঁদের মতে, “গাজওয়াতুল হিন্দ” সংঘটিত হবে ইমাম মাহদী ও ঈসা (আ.)-এর আগমনের সময়, যা এখনো আসেনি। সুতরাং বর্তমান ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনাকে সেই ভবিষ্যদ্বাণীর বাস্তবায়ন বলা ঠিক হবে না।

তবুও, বাস্তবতা হলো—এই দুটি দেশের মধ্যে বড় আকারের সংঘর্ষ শুরু হলে তা শুধু সীমান্তে সীমাবদ্ধ থাকবে না। দুই দেশই পরমাণু অস্ত্রসজ্জিত; যুদ্ধ হলে তা হতে পারে ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের কারণ এবং গোটা দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার জন্য মারাত্মক হুমকি।

বিশ্বের প্রধান পরাশক্তিগুলো—চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া—এই অঞ্চলের ঘটনাপ্রবাহ গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী অবস্থান নিচ্ছে।

প্রশ্ন হলো—এই সংকট কি বিশ্বকে টেনে নিয়ে যাবে আরেকটি বিশ্বযুদ্ধের দিকে? নাকি সময়ের সাথে জন্ম নেবে কোনও নতুন সমঝোতা?

উত্তর সময়ই দেবে। তবে ইতিহাস বলছে—কাশ্মীর শান্ত ছিল না কখনোই, আর এখান থেকেই হয়তো জন্ম নিতে পারে এক নতুন অধ্যায়ের।

আয়শা/