ঢাকা, বুধবার, ১৪ মে ২০২৫, ৩০ বৈশাখ ১৪৩২

বাসর রাতেই ঝরে গেল ফুলি

২০২৫ এপ্রিল ১৮ ১৯:২০:৩০
বাসর রাতেই ঝরে গেল ফুলি

নিজস্ব প্রতিবেদন; রাত তখন ২টা ৪৫। হাসপাতালে নিস্তব্ধতা, কেবল ঘুম জড়ানো চোখে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছিলেন কর্তব্যরত ডাক্তার। হঠাৎই ইমারজেন্সি ফোনের ঘনঘন শব্দ—একটা জীবন ডাকছে সাহায্যের আশায়।

জরুরি বিভাগে পা দিতেই থমকে গেলেন ডাক্তার। সামনে এক কিশোরী—রক্তে ভেজা লাল শাড়ি, ফ্যাকাসে মুখ, নিথর দৃষ্টি। স্পষ্ট বোঝা যায়—নতুন বউ। নাম ফুলি (ছদ্মনাম)। বয়স? মাত্র পনেরো।

ডাক্তার কিছু জিজ্ঞেস করতেই সদ্য বিবাহিত স্বামী ঘর ছেড়ে চুপচাপ বেরিয়ে যায়। পাশে দাঁড়ানো মহিলা ফুঁসে ওঠেন, "ডাক্তার হইছেন, না বুঝলে কেমনে চলবে? সব কইতে হবে!"

বিয়ের উৎসব তখনো গ্রামে, কিন্তু ফুলির জীবনে নেমে এসেছে নিঃসীম অন্ধকার। যৌতুকে খুশি বরপক্ষ, কিন্তু কনের বয়স বা মত—তা নিয়ে কারও মাথাব্যথা নেই। ফুলির বাবাও তাকে রঙিন শাড়ি পরিয়ে সমাজের নিয়মে বিদায় দিয়েছেন, মনে করেছেন—মেয়ের গন্তব্য তো এটাই।

ফুলি পড়েছে ক্লাস সেভেন পর্যন্ত। জীবন কাকে বলে, তা বোঝার আগেই তাকে ঠেলে দেয়া হয়েছে বাসর ঘরে। ফলাফল—ভয়াবহ শারীরিক নির্যাতন, শরীর ছিঁড়ে গেছে, রক্তে ভেসে গেছে বিছানা। দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। জরুরি অস্ত্রোপচার, প্রচুর রক্ত দরকার। কিন্তু ফুলির শরীর আর পারছিল না—শ্বাস ধীরে ধীরে ক্ষীণ হয়ে আসে।

শ্বশুরবাড়ির লোকজন পরদিনই উধাও। বাবাই এখন হাসপাতাল-পথ্য-চিকিৎসার সব বোঝা কাঁধে নিয়েছেন। ছয়দিন পর ইনফেকশন ছড়িয়ে পড়ে—সেপ্টিসেমিয়া। দরকার উন্নত চিকিৎসা, ডায়ালাইসিস। কিন্তু সামর্থ্য নেই বাবার। শেষমেশ সিদ্ধান্ত—ফুলিকে বাসায় নিয়ে যাওয়া হোক।

কয়েকদিন পর, সেই ভোরের শান্ত আলোয় ফুলি নিঃশ্বাস ত্যাগ করে। ‘অ্যাকিউট রেনাল ফেলিউর’-এ মৃত্যু হয় তার।

একটা কিশোরী মারা যায়, যে কেবল বাঁচতে চেয়েছিল। যার জীবন ছিল এগিয়ে যাওয়ার জন্য, থেমে যাওয়ার জন্য নয়।

বরপক্ষের খোঁজ মেলেনি আজও। যেন কিছুই ঘটেনি।

কিন্তু ঘটনা ঘটেছে। প্রতিদিন ঘটে। ফুলিরা রোজ মরে যায় এই সমাজের তথাকথিত ‘রীতি-নীতির’ বলি হয়ে।

চুপ করে থাকলে চলবে না। দরকার প্রতিবাদ, দরকার প্রশ্ন তোলা, দরকার পরিবর্তনের সাহস।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ