বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক সাকিব আল হাসানকে হয়তো আর কখনো জাতীয় দলের জার্সিতে দেখা যাবে না। দেশের হয়ে খেলার শর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি) তিনটি দাবি জানিয়েছিলেন সাকিব। তবে বিসিবি তার কোনো দাবিই মানতে না পারায় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাকিবের ভবিষ্যৎ প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।

সম্প্রতি সাকিবের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে, যার ফলে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।

দেশের মাটিতে খেলার জন্য সাকিব বিসিবিকে তিনটি শর্ত দিয়েছিলেন—

তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার নিশ্চয়তা।

দেশে আসার পর খেলার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।

প্রয়োজন হলে আবার দেশ ছাড়ার নিশ্চয়তা।

তবে বিসিবি এই তিনটি শর্তই পূরণ করতে অক্ষম বলে জানায়। এর ফলে সাকিব ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের ওয়ানডে সিরিজে খেলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজই বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আগে শেষ প্রস্তুতি। এই সিরিজে না থাকায় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও সাকিবকে দেখা যাবে না। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ ইতিমধ্যেই সাকিবকে বাদ দিয়েই ওয়ানডে স্কোয়াড অনুমোদন করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে সাকিবের বিদায়ের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠেছে। টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি থেকে আগেই অবসর নেওয়া সাকিব ওয়ানডে ক্রিকেট চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তবে বর্তমান সংকট ও বিসিবির সঙ্গে সমাধান না হওয়ায় তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার প্রায় শেষ বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে।

সাকিবের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের কারণে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে, যা তাকে গভীর আর্থিক দুশ্চিন্তায় ফেলেছে। সাকিব বিসিবিকে অনুরোধ করেছিলেন, জাতীয় দলে ফেরার শর্তে তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পুনরায় সক্রিয় করার প্রক্রিয়া সহজ করতে। কিন্তু বিসিবি জানিয়েছে, এ ধরনের বিষয় আইনি প্রক্রিয়ার আওতায় পড়ে, যা বোর্ডের মাধ্যমে সম্ভব নয়। ফলে আর্থিক লেনদেন চালানো বা দেশে ফিরে আইনগত সমাধানের বিষয়টিও সাকিবের জন্য জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বিলুপ্ত সরকারের সংসদ সদস্য হিসেবে সাকিব নানা সমালোচনার মুখে পড়েন। দেশের মাটিতে বিদায়ী টেস্ট খেলতে চাইলেও নিরাপত্তাজনিত কারণে তিনি আসতে পারেননি। ওয়ানডে চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে তা আর সম্ভব হচ্ছে না।

দেশের হয়ে সাকিবের অধ্যায় হয়তো এখানেই শেষ। বিসিবির সিদ্ধান্ত ও সাকিবের আর্থিক ও আইনি জটিলতা মিলিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার উপস্থিতি এক রূপকথার সমাপ্তি টেনে দিচ্ছে।

জাতীয় দলের জন্য অসংখ্য স্মরণীয় মুহূর্ত উপহার দেওয়া এই তারকার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফেরা আপাতত প্রায় অসম্ভব। ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে প্রশ্ন, সাকিব কি সত্যিই চিরতরে বিদায় নিলেন, নাকি ভবিষ্যতে কোনো সমাধান মিলবে? এখন সময়ই হয়তো দেবে সেই প্রশ্নের উত্তর।