ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৯ পৌষ ১৪৩২

হাসান

রিপোর্টার

হাদি মৃত্যু ঘিরে প্রচারযুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান মিডিয়ায় কে কি দাবি করছে?

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ২৩ ১৪:১৫:৪৯
হাদি মৃত্যু ঘিরে প্রচারযুদ্ধ: ভারত-পাকিস্তান মিডিয়ায় কে কি দাবি করছে?

হাসান: ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি–এর মৃত্যু এবং তার জানাজাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে বিশ্বজুড়ে শুরু হয়েছে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক। স্মরণকালের অন্যতম বৃহৎ জানাজা হিসেবে বিবেচিত এই সমাবেশ শুধু দেশীয় রাজনীতিতেই নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। হাদির রাজনৈতিক অবস্থান ও জনপ্রিয়তা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যা পেয়েছে, যা ভারত ও পাকিস্তানের সংবাদমাধ্যমের মধ্যে এক ধরনের প্রচারযুদ্ধের ইঙ্গিত দিচ্ছে।

আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে হাদির পরিচয়

বিশ্বের প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো শরীফ ওসমান হাদিকে বাংলাদেশে ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনের এক সাহসী কণ্ঠ হিসেবে তুলে ধরেছে। তাকে ‘তরুণদের প্রিয় নেতা’ ও ‘বিপ্লবী ছাত্রনেতা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে একাধিক প্রতিবেদনে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে হাদির দাফনকে আন্তর্জাতিক মিডিয়া প্রতীকী গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে। অনেক সংবাদমাধ্যম এটিকে নজরুলের বিদ্রোহী চেতনার সঙ্গে তুলনা করে বলেছে বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম তাদের একজন বিপ্লবী কণ্ঠকে বিদায় জানিয়েছে।

পাকিস্তানি গণমাধ্যমে আবেগ ও সহমর্মিতা

পাকিস্তানি গণমাধ্যমগুলো হাদির মৃত্যুকে অত্যন্ত আবেগঘন ভাষায় উপস্থাপন করেছে। তাদের প্রতিবেদনে শরীফ ওসমান হাদিকে ‘মহান বীর’ ও ‘শহীদ’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি সংবাদপত্রে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা র (RAW)–এর প্রত্যক্ষ সম্পৃক্ততার অভিযোগও তোলা হয়েছে।

পাকিস্তানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাধারণ মানুষ হাদিকে ‘ভাই’ হিসেবে সম্বোধন করে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের পাশে থাকার বার্তা দিচ্ছে যা বিষয়টিকে কেবল একটি জাতীয় ইস্যুতে সীমাবদ্ধ রাখেনি।

ভারতীয় গণমাধ্যমে নেতিবাচক ফ্রেমিং

অন্যদিকে, ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো শরীফ ওসমান হাদির জানাজা ও ইনকিলাব মঞ্চের কর্মকাণ্ডকে সম্পূর্ণ ভিন্ন ও নেতিবাচকভাবে তুলে ধরছে। সংসদ ভবন এলাকা ও মানিক মিয়া এভিনিউয়ে লাখো মানুষের উপস্থিতিকে তারা ‘উগ্রপন্থীদের উত্থান’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছে।

জানাজা-পরবর্তী জনসমাবেশকে ‘সংসদ ভবন দখল’, ‘ভাঙচুর’ ও ‘সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ’ হিসেবে উপস্থাপন করে অপতথ্য ছড়ানোর অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন প্রতিবেদনে। একই সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে ব্যর্থ ও উগ্রপন্থীদের পৃষ্ঠপোষক হিসেবে দেখানোর চেষ্টাও লক্ষ্য করা গেছে।

সংখ্যালঘু ইস্যুতে দৃষ্টি ঘোরানোর কৌশল?

বিশ্লেষকদের মতে, হাদি হত্যাকাণ্ডের মূল ঘটনা ও বিশাল জানাজার গুরুত্ব আড়াল করতে ভারতীয় কিছু গণমাধ্যম বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের বিচ্ছিন্ন সহিংসতা বা সংখ্যালঘু আক্রান্তের ঘটনাকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করছে। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশকে একটি ‘ব্যর্থ রাষ্ট্র’ কিংবা ‘সন্ত্রাসীদের আশ্রয়স্থল’ হিসেবে তুলে ধরার প্রচেষ্টা স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

সব মিলিয়ে শরীফ ওসমান হাদির মৃত্যু এখন আর শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ঘটনা নয়; এটি দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতি, গণমাধ্যম ও কূটনৈতিক বয়ানে নতুন বিতর্ক ও প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ