ঢাকা, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

৩০ বছর পর মুক্তি: বিনা বিচারে দীর্ঘ কারাবাসের অবসান ঘটলো কনু মিয়ার!

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৫ ১৮:৩১:১২
৩০ বছর পর মুক্তি: বিনা বিচারে দীর্ঘ কারাবাসের অবসান ঘটলো কনু মিয়ার!

দীর্ঘ ৩০ বছর ২ মাস ১৯ দিন বিনা বিচারে কারাভোগের পর অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সিংহগ্রামের বাসিন্দা কনু মিয়া। মঙ্গলবার (১৫ জুলাই, ২০২৫) সকাল সাড়ে ১০টায় হবিগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে তিনি জামিনে মুক্ত হন বলে জানিয়েছেন জেলা লিগ্যাল এইডের আইনজীবী এম এ মজিদ।

১৯৯৫ সালের ২৫ মে কনু মিয়া নিজের মা মেজেস্টর বিবিকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন। সেই সময় তিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন ছিলেন। গ্রামবাসী তাকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিলে পরদিনই তিনি আদালতে তিন লাইনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। সেই থেকে শুরু হয় তার অন্ধকার কারাজীবন, যা একটানা তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে চলে।

এই দীর্ঘ সময়ে তার মামলার বিচার বা সাজা কোনোটিই হয়নি। হাইকোর্ট মানসিক ভারসাম্যহীনতার কারণে তার মামলার বিচার স্থগিত রেখেছিল। প্রথম দিকে স্বজনরা তাকে দেখতে এলেও ধীরে ধীরে তারা কনু মিয়ার খোঁজ নেওয়া বন্ধ করে দেন। গ্রামের নতুন প্রজন্ম তো জানতই না যে কনু মিয়া নামের কেউ এখনো বেঁচে আছেন।

অবশেষে বিষয়টি নজরে আসে হবিগঞ্জের জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিনের। তিনি কনু মিয়ার মামলার বাদী মনু মিয়া এবং তার ভাই নাসু মিয়ার খোঁজ পান এবং তাদের লিগ্যাল এইড অফিসে ডেকে পাঠান। ঘটনা জানার পর তারা আবেগাপ্লুত হয়ে কনু মিয়াকে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।

সহকারী জজ আব্বাছ উদ্দিন জানান, মানসিক রোগে আক্রান্ত আসামির জামিনের বিষয়টি ভিন্ন প্রকৃতির হয়। এক্ষেত্রে তার নিরাপত্তা, বাসস্থান এবং কোর্টে হাজিরার নিশ্চয়তা থাকা জরুরি। এই বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে গত ১৪ জুলাই আইনজীবী এম এ মজিদ হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কনু মিয়ার জামিন আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক জেসমিন আরা বেগম তার জামিন মঞ্জুর করেন।

আইনজীবী এম এ মজিদ বলেন, "দীর্ঘদিন পর হলেও কনু মিয়া জামিনে মুক্ত হয়েছেন—এটা শুধু একজন মানুষের জন্য নয়, পুরো সমাজের জন্যই একটি বার্তা।" কনু মিয়ার ভাই মনু মিয়া জানান, "আমার ভাই মানসিকভাবে অসুস্থ। দীর্ঘদিন পর সে মুক্ত হয়েছে—আমরা খুবই খুশি।"

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ