ঢাকা, বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

ভারতে বসেই বাংলাদেশের বেতন! শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ১৬ ১৮:৫৬:০৬
ভারতে বসেই বাংলাদেশের বেতন! শিক্ষক দম্পতির বিরুদ্ধে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ

মাদারীপুরের ডাসার উপজেলার শশিকর শহীদ স্মৃতি মহাবিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ দুর্লভানন্দ বাড়ৈ এবং তার স্ত্রী, সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক চম্পা রানী মন্ডলের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অনুযায়ী, তারা ভারতে বাড়ি কিনে সপরিবারে বসবাস করলেও বাংলাদেশের এই কলেজে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন এবং নিয়মিত বেতন-ভাতাও তুলছেন।

এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগের সত্যতা পাওয়ায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ইতোমধ্যেই এই শিক্ষক দম্পতির এমপিও বাতিল করেছে।

অভিযোগ ও অনিয়মের বিস্তারিত

কলেজের একাধিক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই শিক্ষক দম্পতি দীর্ঘদিন ধরে অনিয়ম করে আসছেন। কলেজ গভর্নিং বডি ও প্রশাসনের সঙ্গে সুসম্পর্ক থাকার কারণে তাদের অনিয়মে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। অফিস সহায়ক সজল সরকার তাদের সহযোগিতা করছেন বলেও জানা গেছে।

ডাসার উপজেলার নবগ্রাম ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ও স্থানীয় বাসিন্দা প্রেমানন্দ সরকার বলেন, দুর্লভানন্দ বাড়ৈ অনিয়ম করে চাকরি নিয়েছেন। তিনি ভারতের কল্যাণী শহরে বাড়ি করেছেন এবং তার স্ত্রী-সন্তানরা সেখানেই থাকেন। অথচ তারা বাংলাদেশ থেকে বেতন তুলছেন। শিক্ষিকা চম্পা রানী মেডিকেল ছুটির নামে ৬ মাসের ছুটি নিয়েছেন, যা বেসরকারি কলেজের নিয়মের পরিপন্থী। তিনি প্রশ্ন তোলেন, "এটা কীভাবে সম্ভব?"

স্থানীয় বাসিন্দারা আরও জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার চলে যাওয়ার পর এই শিক্ষক দম্পতি ভারতে চলে যান। কিছুদিন পর অধ্যক্ষ দুর্লভানন্দ দেশে ফিরে এলেও তার স্ত্রী ভারতেই রয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, ভারতে যাওয়ার আগে চম্পা রানী চেকে স্বাক্ষর করে রেখে গেছেন, যার মাধ্যমে নিয়মিত তার বেতন-ভাতা উত্তোলন করা হচ্ছে।

তদন্ত ও ব্যবস্থা

সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, এই দম্পতির বিরুদ্ধে অনিয়ম, নিয়োগ বাণিজ্য ও প্রশাসনিক দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় চলতি বছরের ১৮ মার্চ অধ্যক্ষ দুর্লভানন্দ বাড়ৈ ও তার স্ত্রী প্রভাষক চম্পা রানী মন্ডলের এমপিও বাতিল করা হয়।

অধ্যক্ষ দুর্লভানন্দ বাড়ৈ ভারতে থাকাকালীন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ওই কলেজের আরেক শিক্ষক বিমল পান্ডে।

এ বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করে অধ্যক্ষ দুর্লভানন্দ বাড়ৈ জানান, তার স্ত্রী (প্রভাষক চম্পা রানী) বর্তমানে মেডিকেল ছুটিতে ভারতে রয়েছেন। তিনি দুই দফায় ৬ মাস ছুটি নিয়েছেন এবং সবকিছু নিয়ম অনুযায়ী চলছে।

ডাসার উপজেলার দায়িত্বরত কালকিনি উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মো. আশরাফুজ্জামান বলেন, তাদের দুজনের ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অনিয়মের তথ্য পেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

ডাসার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফ-উল আরেফীন বলেন, অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখা হবে। যদি আইন অনুযায়ী প্রমাণিত হয়, তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই ঘটনা কি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থার অনিয়মগুলোর একটি বড় উদাহরণ? আপনার কী মনে হয়, এই ধরনের অনিয়ম বন্ধে আর কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ