এইচএসসি দিতে না পারা আনিসাকে নিয়ে যা বললেন মানবাধিকার আইনজীবী

নিজস্ব প্রতিবেদন: এইচএসসি পরীক্ষার প্রথম দিনেই ঘটে যায় এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। মায়ের জীবন বাঁচাতে হাসপাতালে ছুটে গিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রে পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় পরীক্ষায় বসতে পারেনি আনিসা আহমেদ নামে এক ছাত্রী। এ ঘটনায় তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মানবাধিকার বিষয়ক একজন বিশিষ্ট আইনজীবী।

তিনি বলেন, “এটা কেবল নিয়ম ভাঙার ঘটনা নয়—এটা একজন কন্যার মমতা ও দায়িত্বশীলতার উজ্জ্বল উদাহরণ। আনিসা তার অসুস্থ মাকে বাঁচাতে যা করেছে, তা মানবিকতার চরম প্রকাশ। এই সিদ্ধান্তে কোনো স্বার্থ ছিল না, ছিল শুধু ভালোবাসা।”

জানা গেছে, আনিসা দুই বছর আগে বাবাকে হারিয়েছে। এবারের এইচএসসি পরীক্ষার দিন সকালে তার মা হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সে মাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু যখন চিকিৎসকের কাছে মাকে সুরক্ষিতভাবে হস্তান্তর করে কেন্দ্রে পৌঁছায়, তখন পরীক্ষার সময় শুরু হওয়ার দেড় ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। পরীক্ষাকেন্দ্রের নিয়ম অনুযায়ী, ৩০ মিনিটের বেশি দেরি হলে পরীক্ষার্থীকে হলে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয় না।

এই পরিস্থিতিতে আইনজীবী বলেন, “এই ঘটনা আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার কাঠিন্য এবং মানবিক বিবেচনার মধ্যে এক তীব্র সংঘর্ষ তুলে ধরেছে। আনিসার সিদ্ধান্ত তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে, তবুও সে শাস্তি পেল। আমরা কি চাই, এমন একটি সমাজ গড়ে উঠুক যেখানে মানবিকতা মূল্য পায় না?”

তিনি আরও জানান, নিজের সামাজিক মাধ্যমে ঘটনাটি তুলে ধরার পর কিশোরগঞ্জ, হবিগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গা থেকেও অনুরূপ ঘটনার খবর আসতে শুরু করেছে। কিশোরগঞ্জে খাদিজা নামের এক শিক্ষার্থী অ্যাডমিট কার্ড না পেয়ে পরীক্ষা দিতে পারেনি, হবিগঞ্জেও একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে।

আইনজীবী আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “এই একটি পরীক্ষায় অংশ না নিতে পারা হয়তো আনিসাকে মানসিকভাবে ভেঙে ফেলবে। সে হয়তো পুরো পরীক্ষাই বাদ দিতে চাইবে। তাই আমি চাই, সে যেন সাহস হারায় না, পরের পরীক্ষাগুলো দেয় এবং বিশ্বাস করে—আমরা তার পাশে আছি।”

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া তার বার্তায় আইনজীবী লেখেন, “আমার একটাই উদ্দেশ্য—এই মেয়েটি যেন জানে, মানবতার পথ এখনও খোলা আছে। শুধু আইন নয়, সামাজিক সহমর্মিতা এখনও বেঁচে আছে, এবং সে একা নয়।”

আশা/