ঢাকা, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: চীনের অবস্থান স্পষ্ট

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ২০ ২২:২৫:৫০
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত: চীনের অবস্থান স্পষ্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক: মধ্যপ্রাচ্যে ইরান ও ইসরায়েলের চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘাত ক্রমেই বিশ্ব নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকিতে পরিণত হচ্ছে। প্রতিদিন উত্তেজনার মাত্রা বাড়তে থাকায় আন্তর্জাতিক দৃষ্টি এখন চীনের দিকে—বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে তারা এই সংকটে কী ভূমিকা নেবে, সেটিই এখন মুখ্য প্রশ্ন।

ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’ শুরু হওয়ার পর সাতদিন পার হয়েছে। এই অভিযানে ইরানের পারমাণবিক গবেষণা কেন্দ্র, সামরিক ঘাঁটি এবং ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (IRGC) শীর্ষ নেতৃত্বকে লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়। এতে কয়েকজন শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তা ও পারমাণবিক বিজ্ঞানী নিহত হয়েছেন।

ওয়াশিংটনভিত্তিক এক মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ইরানে এ পর্যন্ত অন্তত ৬৩৯ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৬৩ জন বেসামরিক নাগরিক। আহতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ১,৩০০।

এর প্রতিক্রিয়ায় ইরান শত শত ড্রোন এবং প্রায় ৪০০ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের দিকে নিক্ষেপ করে। এসব হামলায় ইসরায়েলে কমপক্ষে ২৪ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়েছে। এতে করে সংঘাতটি এখন কেবল আঞ্চলিক নয়, বরং বৈশ্বিক নিরাপত্তার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বড় প্রশ্ন হলো—চীন কার পাশে দাঁড়াবে?

চীনের রেনমিন বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ঝো রং বলেন, চীনের অবস্থান স্পষ্টভাবে শান্তির পক্ষে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় যেমন নিরপেক্ষতা বজায় রেখেছিল, এবারও তারা একই নীতি অনুসরণ করবে। তবে তিনি জানান, চীন সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে না, বরং নৈতিকভাবে ইরানকে সমর্থন করবে এবং ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিকভাবে ঐক্য গঠনের চেষ্টা চালাবে।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং সম্প্রতি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপে ইসরায়েলকে অবিলম্বে শত্রুতামূলক তৎপরতা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। চীনা বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট শি বলেছেন—এই সংঘাত যত দ্রুত সম্ভব থামাতে হবে, যেন তা আরও বিস্তৃত হয়ে না পড়ে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইরান ও ইসরায়েল থেকে চীনা নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গু জিয়াকুন জানান, যুদ্ধবিরতির লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে নিয়মিত আলোচনা চলছে।

এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ ভূমিকাও নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বক্তব্যে ইরানের সঙ্গে আলোচনা সম্ভব বলে ইঙ্গিত দিলেও, যুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে কিছু জানাননি। তার মন্তব্য—"আমি এটা করতেও পারি, নাও করতে পারি। কেউ জানে না আমি কী করব।"

বিশ্লেষক ঝো রং মনে করেন, যদি ইরান সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্য না করে, তাহলে ট্রাম্প প্রশাসন সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে চাইবে না। বরং তারা কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক চাপের মাধ্যমে ইরানকে আলোচনায় আনতে চাইবে।

চীনের নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ইরান প্রতিশোধ নিতে আগ্রহী হলেও, অভিজ্ঞ কমান্ডারদের মৃত্যু এবং নতুন নেতৃত্বের অভিজ্ঞতার অভাব এর প্রতিক্রিয়া কার্যকরভাবে বাস্তবায়নে বাধা সৃষ্টি করছে। ফলে বড় পরিসরের হামলা চালানো সম্ভব হলেও, তা কৌশলগতভাবে সফল হচ্ছে না।

বর্তমান পরিস্থিতিতে চীন সরাসরি সামরিকভাবে না জড়ালেও, ইরানকে কূটনৈতিক ও নৈতিক সমর্থন দিয়ে পাশে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে। একইসঙ্গে তারা যুদ্ধবিরতির মাধ্যমে উত্তেজনা হ্রাসে সক্রিয় ভূমিকা রাখছে। বিশ্লেষকদের মতে, মধ্যপ্রাচ্যের এই সংঘাত এখন বৈশ্বিক ব্যবস্থারও একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা।

রাকিব/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ