ঢাকা, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

খামেনি কি সত্যিই মহানবী (সা.)-এর ৩৮তম বংশধর

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ২৩ ১৮:০১:০৪
খামেনি কি সত্যিই মহানবী (সা.)-এর ৩৮তম বংশধর

নিজস্ব প্রতিবেদন: ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি শুধু ইরানের রাজনৈতিক অভিভাবক নন, বরং মুসলিম বিশ্বেও তিনি এক গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিত। তার ইসরাইলবিরোধী অবস্থান, মুসলিম ঐক্যের পক্ষে আহ্বান এবং নিজের বংশপরিচয় ঘিরে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বহু আলোচনা ও বিতর্ক রয়েছে।

আয়াতুল্লাহ খামেনির জন্ম ১৯৩৯ সালের ১৭ জুলাই, ইরানের মাশহাদ শহরে। তার পিতা ছিলেন শিয়া আলেম আয়াতুল্লাহ সৈয়দ জাওয়াদ খামেনি। তাদের পরিবার নিজেদের "হুসাইনী সাইয়্যেদ" পরিচয় দিয়ে থাকে—অর্থাৎ, তাঁরা ইমাম হুসাইন (রা.)-এর বংশধর, যিনি ছিলেন মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নাতি।

ইরান সরকারের প্রকাশিত জীবনী ও কিছু ঐতিহাসিক সূত্র অনুসারে, খামেনি হচ্ছেন মহানবী (সা.)-এর ৩৮তম প্রজন্মের বংশধর। শিয়া ঐতিহ্যে ‘সাইয়্যেদ’ উপাধিটি এমন বংশগত পরিচয়ের ইঙ্গিত দেয়। তবে এই দাবি এখন পর্যন্ত কোনো আধুনিক বৈজ্ঞানিক বা ডিএনএ যাচাইয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়নি। তবুও মুসলিম সমাজে এটি একটি মর্যাদাপূর্ণ পরিচয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

আয়াতুল্লাহ খামেনির রাজনৈতিক পথচলা শুরু হয় ১৯৭৯ সালের ইরানি ইসলামী বিপ্লবের সময়। তিনি ছিলেন বিপ্লবের অন্যতম নেতৃত্বদানকারী, এবং বিপ্লব-পরবর্তী সময়ে ইরানের প্রথম আলেম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে আয়াতুল্লাহ খোমেইনির মৃত্যুর পর তিনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা নির্বাচিত হন এবং এখনো সেই পদে আছেন।

শুধু শিয়া নয়, মুসলিম বিশ্বের বৃহত্তর ঐক্যের জন্য বারবার আহ্বান জানিয়ে এসেছেন খামেনি। শিয়া-সুন্নি বিভেদকে তিনি ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখেন। ২০১০ সালের একটি ভাষণে তিনি সূরা আলে ইমরানের ১০৩ নম্বর আয়াত উদ্ধৃত করে বলেন—সব মুসলমানকে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধরতে হবে।

তেহরান টাইমস, প্রেস টিভি ও আল-আলমসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে যে, খামেনি বারবার সৌদি আরব, মিশর, পাকিস্তানসহ সুন্নি সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের আলেমদের সঙ্গে সংলাপের আহ্বান জানিয়েছেন।

২০১৪ সালে গাজায় ইসরাইলি হামলার বিরুদ্ধে তিনি দৃঢ় অবস্থান নেন এবং ফিলিস্তিনের পক্ষে মুসলিম বিশ্বের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। যদিও অনেক মুসলমান তার এ অবস্থানকে সমর্থন করলেও, সৌদি আরব, বাহরাইনসহ কিছু সুন্নি নেতৃত্বাধীন রাষ্ট্র তার বিরুদ্ধে ‘শিয়া সম্প্রসারণবাদের’ অভিযোগ এনেছে।

এছাড়াও, তার শাসনামলে বিরোধীদলের দমন, মতপ্রকাশের সীমাবদ্ধতা ও ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে আন্তর্জাতিক মহলে।

তবে সব সমালোচনার মধ্যেও আয়াতুল্লাহ খামেনি নিজেকে শুধুমাত্র শিয়া নেতা নয়, বরং পুরো মুসলিম উম্মাহর পক্ষে কথা বলা একজন নেতার ভূমিকায় উপস্থাপন করতে চেয়েছেন। মুসলিম বিশ্বে ঐক্য প্রতিষ্ঠাই এখনো তার বার্তার কেন্দ্রে রয়েছে।

আশা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ