ঢাকা, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র এতটা নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ১৭:৪২:৪৭
কীভাবে ক্ষেপণাস্ত্র এতটা নির্ভুলভাবে লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানে

নিজস্ব প্রতিবেদন: ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যকার চলমান দ্বন্দ্বে প্রতিদিনই পাল্টাপাল্টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ঘটছে। পারমাণবিক স্থাপনা ও শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের ওপর হামলার জবাবে উভয় পক্ষই অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে। লক্ষ্যবস্তুকে ঠিকঠাক আঘাত হানতে পারা এই ক্ষেপণাস্ত্রগুলোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই নিখুঁত হামলা কীভাবে সম্ভব?

আধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তির মূল শক্তি হলো নির্ভুলতা। এক সময় ক্ষেপণাস্ত্র চালানো হতো অনেকটা অনুমাননির্ভরভাবে। এখনকার স্মার্ট ক্ষেপণাস্ত্রগুলো নিজেরাই লক্ষ্য শনাক্ত করে সুনির্দিষ্টভাবে আঘাত হানতে সক্ষম। এই নির্ভুলতার পেছনে রয়েছে উচ্চ প্রযুক্তির সমন্বয়—জিপিএস, ইনার্শিয়াল ন্যাভিগেশন সিস্টেম (INS) এবং উন্নত সেন্সর প্রযুক্তি।

ক্ষেপণাস্ত্র কীভাবে নিজের পথ খুঁজে নেয়?

উৎক্ষেপণের পর ক্ষেপণাস্ত্রটি স্যাটেলাইট থেকে জিপিএস সংকেত সংগ্রহ করে নিজের অবস্থান নির্ধারণ করে নেয়। এরপর সেটি পূর্বনির্ধারিত টার্গেটের অবস্থানের সঙ্গে মিলিয়ে নেয় এবং যেকোনো বিচ্যুতি থাকলে তা নিজে থেকেই সংশোধন করে নেয়।

তবে শত্রু যদি ইচ্ছাকৃতভাবে জিপিএস সংকেত জ্যাম করে দেয়, তখন ক্ষেপণাস্ত্র সক্রিয় করে ইনার্শিয়াল ন্যাভিগেশন সিস্টেম (INS)—যা ক্ষেপণাস্ত্রের অভ্যন্তরীণ সেন্সর ব্যবহার করে গতিবেগ, দিক ও অবস্থান বিশ্লেষণ করে সঠিক পথ ধরে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে।

লক্ষ্যবস্তুর কাছে গিয়ে কী হয়?

টার্গেটের কাছাকাছি পৌঁছালে ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে অত্যাধুনিক সেন্সর প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে এটি চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত হয়—যে সেটিই তার মূল লক্ষ্যবস্তু। এই পর্যায়ে নিচের কৌশলগুলো ব্যবহৃত হয়:

* শত্রুর ইলেকট্রনিক জ্যামিং শনাক্ত করা

* স্যাটেলাইট ম্যাপের সঙ্গে জমির প্রোফাইল মেলানো

* ক্যামেরা ও সংরক্ষিত ছবির তুলনা করে টার্গেট চিহ্নিত করা

ক্ষেপণাস্ত্র হামলার ধাপ

একটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সাধারণত তিনটি ধাপে কাজ করে:

১. বুস্ট ফেজ – যেখানে ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পর প্রাথমিক গতি অর্জন করে

২. মিডকোর্স ফেজ – এটি বায়ুমণ্ডলের বাইরে গিয়ে নির্ধারিত পথে অগ্রসর হয়

৩. টার্মিনাল ফেজ – লক্ষ্যবস্তুর দিকে দ্রুত গতিতে ধেয়ে এসে চূড়ান্ত আঘাত হানে

প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ফাঁকি দেওয়ার কৌশল

ইরানের মতো দেশ এখন ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে মোবাইল লঞ্চার, স্থলঘাঁটি এমনকি ভূগর্ভস্থ গোপন প্ল্যাটফর্ম থেকেও। অনেক সময় তারা ভুয়া লক্ষ্যবস্তু পাঠিয়ে শত্রুর প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিভ্রান্ত করে ফেলে। এতে আসল ক্ষেপণাস্ত্র নির্ধারিত টার্গেটে সহজে পৌঁছাতে পারে।

বর্তমান সংঘাতে দেখা যাচ্ছে, ইরানের দূরপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রগুলো ইসরায়েলের প্রায় যেকোনো অংশে আঘাত হানতে সক্ষম। নিখুঁত প্রযুক্তির এ প্রদর্শন যুদ্ধের ভবিষ্যৎ চিত্রটিই যেন তুলে ধরছে।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ