ঢাকা, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব কীভাবে দিতে পারে ইরান

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ১১:৫৯:১৫
যুক্তরাষ্ট্রের হামলার জবাব কীভাবে দিতে পারে ইরান

নিজস্ব প্রতিবেদন: সম্প্রতি ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় সরাসরি হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এই হামলার আগে থেকেই প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে চলেছে দীর্ঘদিনের প্রস্তুতি ও ‘ওয়ার গেম’ অনুশীলন। এতে ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে আমেরিকার সরাসরি জড়ানো মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতিশীলতাকে ভয়াবহ রকম নাড়িয়ে দিয়েছে।

সংকটের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান ও সৌদি আরবজুড়ে মোতায়েন প্রায় ৪০ হাজার মার্কিন সেনাকে সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রাখা হয়েছে।এখন প্রশ্ন— ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান এই আক্রমণের পাল্টা কীভাবে দেবে?

ক্ষেপণাস্ত্রই ইরানের প্রধান হাতিয়ার

ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র তার দীর্ঘপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। বিশ্লেষকদের মতে, ইরান ঠিক যেমন ইসরায়েলকে একসঙ্গে শত শত ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে চমকে দিয়েছিল, এবারও হয়তো একই কৌশল অবলম্বন করবে।

মার্কিন গোয়েন্দা সূত্র বলছে, ইরান এরই মধ্যে ইরাক ও সিরিয়ায় অবস্থিত মার্কিন ঘাঁটিগুলোর দিকে হামলার প্রস্তুতি নিয়েছে। এর পরে আরব অঞ্চলে থাকা মার্কিন সামরিক স্থাপনাগুলোকেও নিশানা করা হতে পারে।

তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা বলে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা যতটা প্রচারসর্বস্ব, বাস্তবে তার কার্যকারিতা তুলনামূলক কম। ২০২০ সালে সোলাইমানি হত্যার জবাবে চালানো হামলায় সেনা নিহত না হলেও ১১০ জন আহত হয়েছিলেন। তবুও এবার ইরান সরাসরি মার্কিন লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

সামরিক শক্তি— যতটা সাহস, ততটা সীমাবদ্ধতাও

ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রগুলো সুপারসনিক গতি সম্পন্ন হলেও, যুক্তরাষ্ট্রের আধুনিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাগুলো যেমন প্যাট্রিয়ট ও THAAD, এসব রুখে দিতে সক্ষম।ইসরায়েলি হামলায় ইরানের অনেক ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ কেন্দ্র ধ্বংস হয়ে গেছে, ফলে তারা একযোগে প্রচুর ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার সক্ষমতা অনেকটাই হারিয়েছে। এখন তেহরান অধিক হিসেবি, টার্গেট-নির্ভর সীমিত আঘাত চালাচ্ছে।

প্রক্সি গোষ্ঠী— ‘ছায়া যুদ্ধের’ বাস্তব রূপ

ইরান বহুদিন ধরে হিজবুল্লাহ, হামাস, হুতি ও কাতাইব হিজবুল্লাহর মতো মিত্র গোষ্ঠীগুলোকে ‘প্রথম প্রতিরক্ষা লাইন’ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। তারা ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রকে ব্যস্ত রেখে তেহরানকে নিরাপদ রাখে।

তবে বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, হামলার বড় অংশ সরাসরি ইরানের ভেতর থেকেই হচ্ছে, যা ইঙ্গিত দেয়— প্রক্সি ব্যবস্থার উপর নির্ভরতা অনেকটাই কমে এসেছে।

হরমুজ প্রণালি— তেহরানের গোপন ট্রাম্প কার্ড

বিশ্বের মোট ব্যবহৃত তেলের প্রায় ২০% হরমুজ প্রণালি হয়ে যায়। ইরান চাইলে এই পথ বন্ধ করে দিয়ে বৈশ্বিক তেল সরবরাহে ভয়াবহ সংকট সৃষ্টি করতে পারে। অতীতে এই কৌশল ব্যবহার করে 'ট্যাংকার যুদ্ধ'-এ যুক্তরাষ্ট্রকে বড় চাপের মুখে ফেলে দিয়েছিল।

বর্তমানে মার্কিন নৌবাহিনীর ইউএসএস নিমিটজ হরমুজে মোতায়েন রয়েছে এই সম্ভাবনার কথা ভেবেই। তবে এই পথে হামলা চালালে ইরান শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বিশ্ব অর্থনীতিকেই বিপর্যয়ের মুখে ফেলতে পারে— যার ফল তাদের দিকেই ঘুরে আসতে পারে।

তেলক্ষেত্রে হামলা— চূড়ান্ত প্রতিশোধের হাতিয়ার

যদি সংঘাত চরমে পৌঁছে যায়, তবে ইরান সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের তেল উৎপাদন কেন্দ্রগুলোকে লক্ষ্য করতে পারে। ২০১৯ সালে হুতিদের চালানো এক হামলায় সৌদি তেলের অর্ধেক উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

আবকায়েকের তেল শোধনাগারে প্রতিদিন প্রায় ৭০ লাখ ব্যারেল অপরিশোধিত তেল প্রক্রিয়াজাত হয়। সেখানে আবার হামলা হলে বিশ্ববাজারে তেলের মূল্য রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।

সাইবার যুদ্ধ— অদৃশ্য ফ্রন্টলাইনে চমক

ইরান আগেও সাইবার হামলার মাধ্যমে ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামোয় আঘাত হেনেছে। তাদের লক্ষ্য থাকে জিপিএস বিভ্রাট, তথ্য চুরি, হ্যাকিং এবং মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব তৈরি।

যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি CyberAv3ngers নামের একটি ইরান-ঘনিষ্ঠ হ্যাকার দলের বিরুদ্ধে ১ কোটি ডলারের পুরস্কার ঘোষণা করেছে। হরমুজ অঞ্চলে জিপিএস বিভ্রাট ঘটিয়ে ইরান কয়েকটি ট্যাংকারকে সংঘর্ষের মুখে ফেলেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ