ঢাকা, রবিবার, ২২ জুন ২০২৫, ৮ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে আমাদের অবস্থান কী হওয়া উচিত

ধর্ম ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ২২ ১৫:০২:৪৪
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের প্রেক্ষাপটে আমাদের অবস্থান কী হওয়া উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদন: বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহ এক জটিল বাস্তবতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে। ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ এই সঙ্কটের সাম্প্রতিক প্রতিফলন। এমন এক পরিস্থিতিতে যখন সত্য ও বিভ্রান্তির সীমারেখা ক্রমশ অস্পষ্ট হয়ে উঠছে, তখন মুসলমানদের জন্য সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে।

ইরান একটি শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্র। তারা কেবলার দিকে নামাজ পড়ে, রাসুল (সা.)-কে নবী হিসেবে মান্য করে—এই মৌলিক বিষয়ে আমাদের সঙ্গে মিল রয়েছে। তবে দীর্ঘদিন ধরেই শিয়াদের ভেতরে কিছু ভ্রান্ত মতবাদ ও বিদআত প্রবাহিত হচ্ছে, যা ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে বিচ্যুত। পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের সুন্নি ওলামায়ে কেরাম এবং চার ইমামের অনুসারীরা বহু আগেই এ বিষয়ে সতর্ক করেছেন।

ইতিহাসে দেখা যায়, ইরান, সিরিয়া ও ইরাকসহ বিভিন্ন জায়গায় আহলে সুন্নাহ মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়েছে। বিশেষ করে সিরিয়ায় বাশার আল আসাদ সরকার যে নির্মম দমন-পীড়ন চালিয়েছে, তার পেছনে ছিল ইরানের সক্রিয় সমর্থন। লাখো মানুষ নিহত হয়েছে, ধ্বংস হয়েছে মসজিদ, মাদরাসা ও ইসলামী সভ্যতার নিদর্শন।

অন্যদিকে, ইসরায়েল একটি ইহুদি রাষ্ট্র হিসেবে ইসলামের স্পষ্ট বিরোধী অবস্থানে রয়েছে। কোরআনে উল্লেখ আছে—"তুমি দেখতে পাবে, মুমিনদের সবচেয়ে কঠিন শত্রু হলো ইয়াহুদিরা এবং মুশরিকরা।" (সূরা মায়িদা)। আজ আমরা ফিলিস্তিনে যা প্রত্যক্ষ করছি, তা এরই এক নির্মম বাস্তবতা। ভারতের মতো মুশরিক শক্তির সঙ্গে ইসরায়েলের জোট মুসলিম বিশ্বের জন্য এক বড় হুমকি হয়ে উঠেছে।

একদিকে ইরান নামাজ পড়ে, রাসুল (সা.)-কে মানে—সেই দিক থেকে তারা মুসলমান। তাই ইহুদি বা মুশরিকদের মতো একেবারে ‘বাইরের’ গোষ্ঠী বলা যায় না। আবার অন্যদিকে, ইতিহাস সাক্ষী যে ইরান বারবার আহলে সুন্নাহ মুসলিমদের ওপর জুলুম চালিয়েছে।

তাই আমাদের অবস্থান হতে হবে কৌশলী, ন্যায়ভিত্তিক এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ। ইসলামের মৌল শিক্ষা হলো—মজলুমের পাশে দাঁড়ানো, সে যেই হোক না কেন। শিয়ারা যদি কোনো জায়গায় নির্যাতিত হয়, তাহলে তাদের জন্য আমাদের মনে সহানুভূতি থাকা উচিত। কিন্তু সেই সহানুভূতি যেন কখনো জালেমের পক্ষে চলে না যায়। ইসলাম কোনো ধরনের জুলুমকে সমর্থন করে না—জালেম যতই আপন হোক না কেন।

আমাদের উচিত আল্লাহর কাছে দোয়া করা—যেন এই সংকট ও সংঘাত ইসলামের বিজয় এবং মুসলমানদের কল্যাণের মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।

সম্প্রতি উচ্চ মাধ্যমিকের ‘ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি’ বইয়ে কিছু সাহাবীদের নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য স্থান পেয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। নবী করিম (সা.) স্পষ্টভাবে বলেছেন— “আমার সাহাবীগণ হেদায়াতের ওপর আছেন। যারা তাদের অনুসরণ করবে, তারা হেদায়াতপ্রাপ্ত হবে।” “আমার সাহাবীদের গালি দিও না।”

পবিত্র কোরআনেও সাহাবীদের প্রশংসা করা হয়েছে: “মুহাম্মদ আল্লাহর রাসূল। এবং যারা তার সঙ্গে আছে, তারা কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোর এবং নিজেদের মধ্যে পরস্পর দয়ালু…” (সূরা ফাতহ) “আল্লাহ তাদের উপর সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তারাও আল্লাহর উপর সন্তুষ্ট।” (সূরা তাওবা)

সুতরাং সাহাবীদের সম্পর্কে অসম্মানজনক বা বিভ্রান্তিকর মন্তব্য কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এ ধরনের পাঠ্যবইয়ে যাঁরা এ ধরনের বক্তব্য লিখেছেন, তাঁদের ইসলামী জ্ঞান ও ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক। এনসিটিভির উচিত হবে—এই বিষয়ে অভিজ্ঞ আলেমদের মতামত ছাড়া কোনো লেখককে এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে লিখতে না দেওয়া।

এই তিনটি বিষয়—সত্যের অনুসরণ, সহানুভূতির নীতি, এবং ইসলামী ঐতিহ্যের প্রতি শ্রদ্ধা—এই সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ, এবং এর মধ্যেই রয়েছে আমাদের নাজাত ও সম্মান।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ