ঢাকা, শনিবার, ২১ জুন ২০২৫, ৭ আষাঢ় ১৪৩২

দাজ্জাল কি এআই-এর মাধ্যমে শাসন করবে বিশ্ব

২০২৫ জুন ২১ ১০:৫৩:১১
দাজ্জাল কি এআই-এর মাধ্যমে শাসন করবে বিশ্ব

নিজস্ব প্রতিবেদক: একবিংশ শতাব্দীর পর যারা দুনিয়ায় এসেছে, তারা এমন এক বাস্তবতায় বড় হচ্ছে যেখানে মানুষের মুখ, কণ্ঠস্বর এমনকি চিন্তাও কৃত্রিমভাবে তৈরি করা সম্ভব। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই এখন এমন এক স্তরে পৌঁছেছে যে অনেক বাবা-মাও আর সন্তানদের কণ্ঠস্বর চিনতে পারেন না।

এই প্রযুক্তির যুগে যদি দাজ্জাল আবির্ভূত হয়, যে সত্য-মিথ্যার সীমা মুছে দিতে পারে, তাহলে মানুষ কি সত্যকে চিনে রাখতে পারবে?

অনেকে মনে করেন, দাজ্জাল হয়তো কোনো সুপার-টেকনোলজি, বা এমন একটি রোবটিক সত্তা হতে পারে। তবে সহিহ হাদিসের আলোকে জানা যায়, দাজ্জাল একজন মানুষ, যার থাকবে অলৌকিক ক্ষমতা এবং তিনি হবেন আল্লাহর পক্ষ থেকে পাঠানো এক মহা পরীক্ষা।

হাদিসে বলা হয়েছে, দাজ্জালের একটি চোখ অন্ধ থাকবে এবং সে এমন সব কাজ করে দেখাবে যাতে মানুষ তাকে প্রভু বলে মনে করতে শুরু করবে। আরও বলা হয়েছে, সে আকাশকে আদেশ করবে বৃষ্টি দিতে, মৃত জমিকে বলবে ফসল ফলাতে। প্রশ্ন জাগে—এ ধরনের ক্ষমতা কি কেবল অলৌকিক, নাকি প্রযুক্তির সহায়তায়ও তা সম্ভব?

আজকের প্রযুক্তি ডিপফেক ভিডিও, ভয়েস ক্লোনিং, হিউম্যানয়েড রোবট ও চ্যাটবটের মাধ্যমে মানুষের মুখ, কণ্ঠ এবং চিন্তাভাবনা হুবহু নকল করতে সক্ষম। এমনকি রোবটের মধ্যে আবেগ-অনুভূতির অনুকরণও সম্ভব হচ্ছে।

একটি ভবিষ্যৎ কল্পনা করা যাক—দাজ্জাল হয়তো এমন এক এআই সাম্রাজ্য গড়বে, যেখানে মানুষ ভার্চুয়াল চশমা পরে জান্নাত দেখবে, কিন্তু বাস্তবে থাকবে ধ্বংসের মুখে। হাদিসে আছে, তার এক হাতে থাকবে জান্নাত, অন্য হাতে জাহান্নাম—কিন্তু প্রকৃত অর্থে তা হবে সম্পূর্ণ উল্টো।

বিজ্ঞান বলছে, নিউরো-সিমুলেশন ও ভার্চুয়াল রিয়েলিটির মাধ্যমে মস্তিষ্কে এমন অনুভূতি সৃষ্টি করা সম্ভব, যাতে মানুষ মিথ্যা সুখ বা যন্ত্রণা অনুভব করে। হতে পারে, কেউ দাজ্জালের বিরোধিতা করলে তাকে দেওয়া হবে ভার্চুয়াল শাস্তি—বাস্তবে কিছু ঘটবে না, কিন্তু মনে হবে ভয়াবহ কিছু ঘটছে।

দাজ্জাল হয়তো বলবে, “তোমার মৃত মা-বাবাকে জীবিত করে দেখালে কি তুমি আমাকে প্রভু মানবে?” সেই সুযোগে শয়তান মানুষের মা-বাবার মতো দেখতে রোবট তৈরি করে বলবে, “আমাদের অনুসরণ করো, তিনিই তোমার প্রভু।”

এটি হবে ভয়ানক এক প্রতারণা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবটিক্স, ভয়েস ক্লোনিং, নিউরাল ম্যাপিং মিলিয়ে এমন একটি বাস্তবতা তৈরি হতে পারে যেখানে মৃত মানুষের মুখ, কণ্ঠ এমনকি স্মৃতিও নকল করে ফেলা সম্ভব। তখন মানুষ হয়তো বিশ্বাস করে বসবে—তাদের প্রিয়জন সত্যিই ফিরে এসেছে।

হাদিসে এসেছে, দাজ্জাল এমন ক্ষমতার অধিকারী হবে যে, সে জড় ও জীব উভয়কেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। বর্তমানে আমরা ইন্টারনেট-সংযুক্ত ডিভাইসের মাধ্যমে ঘরের দরজা, গাড়ি, বাতি, এমনকি মানুষের আচরণও নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। পশুর মস্তিষ্কে ইলেকট্রিক সিগনাল পাঠিয়ে তাদের নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়েছে—তাহলে দাজ্জাল কেন নয়?

সে হয়তো এমন একটি অ্যালগরিদম তৈরি করবে, যা মানুষের চিন্তা, বিশ্বাস ও আবেগকেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

কুরআনের সূরা নিসার আয়াতে বলা হয়েছে, শয়তান মানুষকে প্রতিশ্রুতি দেয়, আর সেই প্রতিশ্রুতি হয় ধোঁকামূলক। দুনিয়ার এই ধোঁকা হতে পারে একটি ডিজিটাল স্বর্গ—যেখানে বলা হবে, কেউ গরিব থাকবে না, সবাই সুখে থাকবে, শুধু একটি শর্ত—তাকে প্রভু হিসেবে মেনে নিতে হবে।

এই মিথ্যা স্বপ্নের প্রতিচ্ছবি আমরা এখনই দেখতে পাই—সোশ্যাল মিডিয়ার স্ক্রিনে মানুষ এতটাই মগ্ন থাকে যে বাস্তবতা ভুলে যায়।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, দাজ্জালের মতো ভয়াবহ ফিতনা আর আসবে না। তিনি আমাদের শিখিয়েছেন, এই ফিতনা থেকে বাঁচতে হলে কুরআনের আশ্রয় নিতে হবে। যে ব্যক্তি সূরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ রাখবে, সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ থাকবে।

আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া রয়েছে, যা প্রতিদিনের নামাজে পড়া উচিত:আল্লাহুম্মা ইন্নি আউযুবিকা মিন ‘আযাবিল কবরি, ওয়া মিন ‘আযাবি জাহান্নাম, ওয়া মিন ফিতনাতিল মাহইয়া ওয়াল মামাতি, ওয়া মিন শার্রি ফিতনাতিল মাসীহি আদ-দাজ্জাল।

প্রিয় পাঠক, প্রযুক্তি নিজে কোনো অপরাধ নয়। তবে এটি যদি দাজ্জালের মতো প্রতারকের হাতে পড়ে, তখন তা ঈমান ধ্বংসের অস্ত্রে পরিণত হতে পারে।

তাই আমাদের করণীয় হচ্ছে—প্রযুক্তিকে সঠিকভাবে বোঝা, এর ফাঁদ থেকে সতর্ক থাকা এবং হক পথে অটল থাকা।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে দাজ্জালের ভয়ংকর ফিতনা থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ