ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ইসরায়েলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক কতটা শক্তিশালী

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ১৬ ২০:৪৮:১৬
ইসরায়েলি গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক কতটা শক্তিশালী

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিদেশের মাটিতে টার্গেট কিলিং বা নিখুঁত হামলার ঘটনায় বারবার উঠে আসে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার নাম। décadas ধরে গোপন ও পরিকল্পিত এসব অভিযানে সারা বিশ্বে তারা এক অনন্য নজির গড়ে তুলেছে।

সবশেষ ২০২৪ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর, লেবাননের বৈরুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরুল্লাহ নিহত হন বলে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। একই হামলায় হিজবুল্লাহর যোগাযোগব্যবস্থা ধ্বংস করা হয়, যেখানে পেজার ও ওয়াকিটকি বিস্ফোরণে প্রাণ হারান অন্তত ৩৭ জন। এর আগে দামেস্কে ইরানি কূটনৈতিক ভবনে হামলায় নিহত হন ১৩ জন, যাদের মধ্যে ছিলেন ইরান বিপ্লবী গার্ডের সদস্যরাও। এমনকি জুলাই মাসে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়াহ নিহত হন তেহরানে। যদিও এসব ঘটনার দায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকার করেনি ইসরায়েল, তথাপি দায়ী হিসেবে তাদেরই দিকে আঙুল উঠেছে।

তাহলে প্রশ্ন—এত নিখুঁত ও গোপন অভিযানে সক্ষমতা আসে কোথা থেকে? কতটা বিস্তৃত ইসরায়েলের গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক?

মোসাদ – বিদেশে ‘ছায়া যুদ্ধের’ মূল চালক

১৯৪৯ সালের ডিসেম্বরে গঠিত ইসরায়েলের বহুল আলোচিত গোপন সংস্থা মোসাদ। এর দায়িত্ব দেশের বাইরে থাকা হুমকি শনাক্ত এবং প্রয়োজনে তা নিশ্চিহ্ন করা। বিশ্বজুড়ে গোপন নজরদারি, সাইবার গোয়েন্দাবৃত্তি, স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ, ড্রোন এবং হ্যাকিং প্রযুক্তিতে এ সংস্থা বিশ্বের অন্যতম সেরা। মোসাদ সদস্যরা সুপ্রশিক্ষিত, পেশাদার এবং আন্তর্জাতিক পরিসরে সক্রিয়।

শিন বেত – দেশের অভ্যন্তরে নজরদারি

ইসরায়েলের নিরাপত্তা বলয়ের আরেক গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ শিন বেত বা সাবাক। এই সংস্থা মূলত দেশের ভেতরে সন্ত্রাস, রাজনৈতিক হুমকি এবং গাজা বা পশ্চিম তীর থেকে আসা নিরাপত্তা সংকট নিয়ন্ত্রণে কাজ করে।

আমান – সেনাবাহিনীর গোয়েন্দা সহায়ক

ইসরায়েলের সেনাবাহিনীর অধীনস্থ সামরিক গোয়েন্দা ইউনিট হলো ‘আমান’। তারা মূলত গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ, বিশ্লেষণ এবং যুদ্ধ পরিকল্পনার সহায়তায় নিয়োজিত।

ইউনিট ৮২০০ – সাইবার যুদ্ধের মস্তিষ্ক

বিশ্বের অন্যতম প্রযুক্তিনির্ভর গোয়েন্দা ইউনিট হিসেবে পরিচিত ইউনিট ৮২০০। সদস্যসংখ্যা প্রায় এক লাখের কাছাকাছি। তারা মূলত হ্যাকিং, সিগন্যাল গোয়েন্দাবৃত্তি, কোড বিশ্লেষণ এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে নজরদারিতে দক্ষ। ২০১০ সালে ইরানে স্টাক্সনেট ভাইরাসের মাধ্যমে পারমাণবিক প্রকল্পে সাইবার হামলার নেপথ্যেও এ ইউনিটের ভূমিকা ছিল বলে ধারণা করা হয়।

ইউনিট ৯৯০০ – চোখ ও মানচিত্র

ড্রোন, স্যাটেলাইট ও গোয়েন্দা বিমানের মাধ্যমে ছবি সংগ্রহ, ভূচিত্র বিশ্লেষণ এবং যুদ্ধক্ষেত্রের ৩-ডি ম্যাপ তৈরি করে এই ইউনিট। সেনা কমান্ডারদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে তাদের তথ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইউনিট ৫০৪ – মাঠ পর্যায়ের মানব গোয়েন্দা

এই ইউনিট সরাসরি মানুষের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহে কাজ করে। সীমান্তবর্তী অঞ্চল ছাড়িয়ে সিরিয়া, লেবানন, গাজাসহ বিভিন্ন দেশের অভ্যন্তরে গুপ্তচর নিয়োগের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করে তারা।

নতুন ইউনিট – ইরান নজরদারিতে আলাদা দল

২০২৩ সালের জুনে ইসরায়েল নতুন একটি গোয়েন্দা ইউনিট গঠন করে, যার মূল লক্ষ্য ইরান ও বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর কার্যক্রম নজরে রাখা এবং সম্ভাব্য সংঘাতের প্রস্তুতি নেওয়া। প্রাথমিকভাবে ৩০ জন সদস্য নিয়ে গঠিত হলেও, এটি ভবিষ্যতে আরও সম্প্রসারিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এই সব গোয়েন্দা ইউনিট সম্মিলিতভাবে ইসরায়েলকে এমন এক অবস্থানে দাঁড় করিয়েছে, যেখানে তারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রায় প্রতিদ্বন্দ্বীহীন। গোপনে, নিখুঁতভাবে এবং প্রায় বিনা প্রতিক্রিয়ায় শত্রুকে দমন করার সক্ষমতা ইসরায়েলকে বিশ্বের অন্যতম কার্যকর ও ভীতিকর গোয়েন্দা রাষ্ট্রে পরিণত করেছে।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

জরুরী ভাবে তিন বিভাগে বন্যার শঙ্কা

জরুরী ভাবে তিন বিভাগে বন্যার শঙ্কা

সারাদেশে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে নাভিশ্বাস উঠেছে সাধারণ মানুষের। এর মধ্যেই কিছুটা স্বস্তির খবর দিয়েছে বাংলাদেশ ওয়েদার অবজারভেশন টিম (বিডব্লিউওটি)। তাদের তথ্যমতে,... বিস্তারিত