ঢাকা, বুধবার, ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৫ শ্রাবণ ১৪৩২

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেলে কী হয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মে ২৪ ০৮:৪১:৪৫
মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেলে কী হয়

নিজস্ব প্রতিবেদক: অনেকেরই ধারণা, ওষুধের মেয়াদ শেষ মানেই তা বিষে পরিণত হয়। কিন্তু সত্যিই কি মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ খেলে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে, নাকি কেবল কাজের ক্ষমতা কমে যায়? এই প্রশ্ন নিয়ে প্রচুর ভুল ধারণা প্রচলিত আছে। চলুন বিজ্ঞানের আলোয় বিষয়টি স্পষ্ট করে দেখা যাক।

সম্প্রতি ঢাকায় একটি শিশুর মৃত্যুতে জানা যায়, তাকে দেওয়া ভিটামিন সিরাপের মেয়াদ পেরিয়ে গিয়েছিল। অনেকেই ধরেই নিয়েছেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধই মৃত্যুর কারণ। তবে এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। ১৯৯০ সালে বহু শিশু মারা গিয়েছিল ভেজাল প্যারাসিটামল খেয়ে, যার মেয়াদ শেষ হয়নি, বরং তাতে ছিল বিষাক্ত রাসায়নিক।

সাধারণত বেশিরভাগ ওষুধ মেয়াদ শেষ হলেও ততটা ক্ষতিকর নয়। এগুলোর কার্যকারিতা কমে যায়, তবে বিষক্রিয়ার আশঙ্কা কম থাকে। তবে কিছু ওষুধ মেয়াদ পার হলে রাসায়নিক গঠন বদলে গিয়ে বিপজ্জনক যৌগে রূপ নিতে পারে।

বিশেষ সতর্কতা দরকার যেসব ওষুধে:

* তরল ওষুধ বা সিরাপ

* ইনসুলিন

* ইনহেলার

* নাইট্রোগ্লিসারিন

* অ্যান্টিবায়োটিক সাসপেনশন

* থাইরয়েড বা হৃদরোগের ওষুধ

বাংলাদেশে মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ সংরক্ষণ ও বিক্রি সম্পূর্ণ বেআইনি। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। অনেক ফার্মেসিতেই মেয়াদ পেরোনো ওষুধ পাওয়া যায়। কিছু সাধারণ ওষুধ যেমন ঠান্ডা-কাশির জন্য ব্যবহৃত ওষুধ অল্প সময়ের জন্য তুলনামূলক নিরাপদ হলেও, চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ব্যবহার উচিত নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের FDA এবং আর্মি মেডিকেল বিভাগ এক গবেষণায় মেয়াদোত্তীর্ণ ১০০টি ওষুধের ৯০ শতাংশকেই ১৫ বছর পরেও কার্যকর পেয়েছে।২০০১ সালে আরেক গবেষণায় দেখা যায়, ২২ ধরনের ৩০০০ ব্যাচ ওষুধের ৮৮ শতাংশ মেয়াদ পেরিয়ে গেলেও প্রায় ৫ বছর কার্যকর থাকে।

ওষুধ প্রশাসনের কর্মকর্তা নাজমুল হাসান বলেন, অনেক ওষুধ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও ৬ মাস থেকে ১ বছর পর্যন্ত নিরাপদ থাকতে পারে।অন্যদিকে সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম সতর্ক করে বলেন, মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মানের অবনতি ঘটিয়ে শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং মৃত্যুঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

সচেতনতার জন্য করণীয়:

✅ অকারণে আতঙ্কিত না হয়ে তথ্যভিত্তিক সচেতনতা গড়ে তুলুন

✅ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসক বা ফার্মাসিস্টের পরামর্শ নিন

✅ ইনসুলিন, ইনহেলার, অ্যান্টিবায়োটিক বা হৃদরোগের ওষুধ মেয়াদ পার হলে ব্যবহার বন্ধ করুন

✅ ওষুধ সংরক্ষণ করুন ঠান্ডা, শুকনো ও অন্ধকার স্থানে

✅ মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ টয়লেটে ফেলা নয়—সঠিকভাবে ময়লার ঝুড়িতে ফেলুন

মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ মানেই ‘বিষ’—এমন ভাবা যেমন ভুল, তেমনি একে একেবারে ‘নিরাপদ’ ভাবাও বিপজ্জনক। কিছু ওষুধ কার্যকারিতা হারিয়ে শরীরের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। তাই অন্ধ আতঙ্ক নয়, বরং সচেতনতা ও চিকিৎসকের পরামর্শই হতে পারে সবচেয়ে নিরাপদ পথ।

—সোহাগ/

ট্যাগ: ওষুধ

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ