হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায়ে বাতিল হলো ৬,৫৩১ সহকারী শিক্ষকের নিয়োগ

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিভাগে তৃতীয় ধাপে চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ ৬,৫৩১ জনের নিয়োগ বাতিল করেছেন হাইকোর্ট। আদালত স্পষ্টভাবে নির্দেশ দিয়েছেন, নিয়োগ অবশ্যই মেধার ভিত্তিতে সম্পন্ন করতে হবে, যেন যোগ্য প্রার্থীরা সুবিচার পান।

হাইকোর্টের রায়: ন্যায়বিচারের দৃষ্টান্ত

বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি ফাতেমা নজীব ও বিচারপতি শিকদার মাহমুদুর রাজীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই যুগান্তকারী রায় ঘোষণা করেন। এর আগে, ১৯ নভেম্বর আদালত নিয়োগ ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেছিলেন।

কোটা সংক্রান্ত জটিলতা: বাতিলের মূল কারণ

২০১৯ সালের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা অনুসারে নিয়োগের কোটাভিত্তিক ব্যবস্থা কার্যকর ছিল:

নারী কোটা: ৬০%

পোষ্য কোটা: ২০%

অন্যান্য কোটা: ৪%

কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ২০২৩ সালের ২৩ জুলাই কোটাপদ্ধতি সংশোধন করে পূর্ববর্তী সব পরিপত্র ও আদেশ বাতিল করে দেয়। তবে সংশোধিত নিয়ম অনুসরণ না করেই নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল, যা আদালত অবৈধ বলে ঘোষণা করেছেন।

এই অনিয়মের বিরুদ্ধে ৩০ জন বঞ্চিত প্রার্থী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। আদালত বিষয়টি আমলে নিয়ে রুল জারি করেন এবং শেষ পর্যন্ত নিয়োগ বাতিলের সিদ্ধান্ত দেন।

নতুন নিয়োগ প্রক্রিয়া: মেধাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

হাইকোর্টের রায়ের পর নতুন করে সম্পূর্ণ মেধাভিত্তিক নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। আগের নিয়োগপ্রাপ্তদের পুনরায় আবেদন করতে হতে পারে।

সরকার ও প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর নিয়োগ বিধিমালায় সংশোধন আনতে পারে, যাতে ভবিষ্যতে নিয়োগ স্বচ্ছ হয় এবং অনিয়মের সুযোগ না থাকে।

সংশ্লিষ্ট পক্ষের প্রতিক্রিয়া

রিটকারীদের পক্ষে আদালতে উপস্থিত ছিলেন:

আইনজীবী ফয়েজ উদ্দিন আহমদ

আইনজীবী কামরুজ্জামান ভূইয়া

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন:

ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর মুহাম্মদ আজমী

আখতার হোসেন মো. আবদুল ওয়াহাব

নিয়োগপ্রাপ্তদের ভবিষ্যৎ: অনিশ্চয়তার ছায়া নাকি নতুন সুযোগ?

হাইকোর্টের এই রায়ের ফলে নিয়োগপ্রাপ্ত ৬,৫৩১ জন সহকারী শিক্ষক অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছেন। তবে এটি নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ও মেধাকে গুরুত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করলো। এখন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেয়, সেটাই দেখার বিষয়।