ঢাকা, রবিবার, ১৭ আগস্ট ২০২৫, ২ ভাদ্র ১৪৩২

ঢাকার অবস্থা খুবই খারাপ

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জানুয়ারি ২৯ ১০:৫৩:৫৩
ঢাকার অবস্থা খুবই খারাপ

রাজধানী ঢাকার বাতাসের মান ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। বুধবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ১০টায় বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স (AQI) আপডেটে ঢাকার স্কোর ছিল ৩৩৬, যা ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’ মাত্রার মধ্যে পড়ে। ফলে নাগরিকদের জন্য এটি গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে।

বিশ্বের দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়

এই দিনে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহর হিসেবে শীর্ষে রয়েছে ভারতের দিল্লি, যার AQI স্কোর ৪৯৯। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে চীনের চেংডু, যার স্কোর ৪২১। অন্যদিকে, চীনেরই আরেক শহর উহান ৩৩৫ স্কোর নিয়ে চতুর্থ স্থানে রয়েছে। ঢাকার অবস্থান তৃতীয় হলেও বায়ুর মানের অবস্থা প্রায় একই রকম বিপজ্জনক।

AQI স্কোর কীভাবে নির্ধারণ করা হয়?

বায়ুর মান সূচক (AQI) সাধারণত বাতাসে উপস্থিত দূষণের মাত্রা অনুযায়ী নির্ধারিত হয়। AQI স্কোর অনুযায়ী দূষণের স্তরগুলো নিম্নরূপ—✅ ১০১-২০০: সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য ‘অস্বাস্থ্যকর’✅ ২০১-৩০০: ‘খুবই অস্বাস্থ্যকর’✅ ৩০১-৪০০: ‘বিপজ্জনক’ – যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

ঢাকার দূষণের প্রধান কারণ কী?

বাংলাদেশে AQI নির্ধারণ করা হয় পাঁচটি মূল দূষকের ভিত্তিতে—? বস্তুকণা (PM-10 ও PM-2.5)? নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO₂)? কার্বন মনোক্সাইড (CO)? সালফার ডাই অক্সাইড (SO₂)? ওজোন (O₃)

বিশেষ করে PM-2.5 হলো বাতাসে ভেসে থাকা ক্ষুদ্র ধূলিকণা, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ানক ক্ষতিকর। এটি ফুসফুসের রোগ, হৃদরোগ ও ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।

অন্যদিকে, নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড (NO₂) মূলত পুরনো যানবাহন, শিল্প কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র, রান্নার গ্যাস এবং জ্বালানি পোড়ানোর কারণে তৈরি হয়।

শীতকালে ঢাকার দূষণ আরও ভয়াবহ কেন?

ঢাকা শহরে বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে বায়ুদূষণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। এর কারণ হলো—? শুষ্ক আবহাওয়ায় ধুলোবালি বাতাসে ভাসমান থাকে।? নির্মাণকাজ ও রাস্তার ধুলোর পরিমাণ বেড়ে যায়।? শীতকালে বায়ুপ্রবাহ কম থাকে, ফলে দূষিত কণা বাতাসে দীর্ঘ সময় আটকে থাকে।

বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের কারণে বাতাস পরিষ্কার হয় এবং দূষণের মাত্রা কমে আসে।

বায়ুদূষণের ভয়াবহ প্রভাব

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) মতে, প্রতি বছর বিশ্বজুড়ে ৭০ লাখ মানুষ বায়ুদূষণের কারণে মারা যায়। দীর্ঘমেয়াদে বায়ুদূষণ শ্বাসকষ্টজনিত রোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে।

সমাধানের উপায় কী?

ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। এর মধ্যে—✅ নির্মাণকাজ ও রাস্তার ধুলা কমানোর ব্যবস্থা নেওয়াপরিবেশবান্ধব যানবাহন ব্যবহার ও পুরনো গাড়ি নিষিদ্ধ করাশিল্প কারখানায় দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্রযুক্তি সংযোজনবর্জ্য ও ইটভাটায় খোলা পরিবেশে জ্বালানি পোড়ানো বন্ধ করাবৃক্ষরোপণ বৃদ্ধি ও সবুজায়নের উদ্যোগ নেওয়া

বায়ুদূষণ বর্তমানে ঢাকাবাসীর জন্য সবচেয়ে বড় স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে একটি। আন্তর্জাতিকভাবে দূষিত শহরের তালিকায় ঢাকার অবস্থান তৃতীয়, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে ভবিষ্যতে এ সমস্যা আরও ভয়াবহ হতে পারে। সরকার, পরিবেশবিদ ও সাধারণ জনগণের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমেই কেবল বায়ুদূষণের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ