৩৩৫ কোটি টাকা জুতার দাম

এক জোড়া জুতার দাম ৩৩৫ কোটি টাকা! অবিশ্বাস্য মনে হলেও এটি একদম সত্যি। এই জুতো তৈরি হয়নি কোনো মূল্যবান ধাতু দিয়ে। তবে এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব এবং সিনেমার সাথে সম্পর্ক এটিকে অমূল্য করে তুলেছে।

এই বিখ্যাত জুতোটি ব্যবহৃত হয়েছিল ১৯৩৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ক্লাসিক চলচ্চিত্র ‘দ্য উইজার্ড অব দ্য ওজ’-এ। জুডি গারল্যান্ড চরিত্র ডরোথি হিসেবে এই লাল রঙের চুমকি খচিত জুতো পরে অভিনয় করেছিলেন। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত একটি নিলামে এটি বিক্রি হয়েছে ২ কোটি ৮০ লাখ ডলারে, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩৩৫ কোটি টাকার সমান।

রুবি স্লিপারজ: ইতিহাসের গৌরব

‘দ্য উইজার্ড অব দ্য ওজ’ চলচ্চিত্রটি নির্মিত হয়েছিল ফ্রাঙ্ক বমের শিশু সাহিত্য ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল উইজার্ড অব ওজ’ অবলম্বনে। বইটিতে ডরোথির জাদুকরী জুতো ছিল রুপার, তবে সিনেমার নির্মাতারা একে লাল রঙের করে তুলে ধরেন। সিনেমায় এই জুতো পরিচিত হয়েছিল ‘রুবি স্লিপারজ’ নামে।

জুডি গারল্যান্ড এই সিনেমায় একাধিক জোড়া রুবি স্লিপারজ ব্যবহার করেছিলেন, তবে বর্তমানে চারটি জোড়া টিকে আছে। এর মধ্যে একটি প্রদর্শিত হয় স্মিথসোনিয়ান ন্যাশনাল মিউজিয়াম অব আমেরিকান হিস্টরিতে। কিন্তু নিলামে বিক্রি হওয়া জুতোটি ছিল সম্পূর্ণ আলাদা।

চুরি এবং পুনরুদ্ধারের রোমাঞ্চকর কাহিনি

২০০৫ সালে মিনেসোটার গ্র্যান্ড র‍্যাপিডসের জুডি গারল্যান্ড মিউজিয়ামে প্রদর্শনের সময় এই জুতোটি চুরি হয়। পেশাদার চোর টেরি জন মার্টিন এটি চুরি করেন। তিনি ভেবেছিলেন, এটি রত্নখচিত এবং অত্যন্ত মূল্যবান। কিন্তু পরে জানতে পারেন, জুতোর অলংকার মূলত কাচ ও চুমকি দিয়ে তৈরি। হতাশ হয়ে তিনি জুতোটি অন্য এক ব্যক্তির হাতে তুলে দেন।

প্রায় ১৩ বছর পর, ২০১৮ সালে, এফবিআই বিশেষ অভিযানের মাধ্যমে এই জুতোগুলো উদ্ধার করে। অবশেষে ২০২৩ সালে টেরি জন মার্টিন চুরির দায় স্বীকার করেন।

নিলামের মুহূর্ত এবং নতুন রেকর্ড

ডালাসে অনুষ্ঠিত নিলামে এই জুতো বিক্রি করে হেরিটেজ অকশন। তারা এটিকে হলিউড স্মৃতিচিহ্নের ‘হলি গ্রেইল’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। নিলামে এই জুতো সিনেমার ইতিহাসে সর্বোচ্চ মূল্যে বিক্রি হওয়া স্মারক হিসেবে নতুন রেকর্ড গড়েছে।

নিলামের সময় উপস্থিত দর্শকরা বিজয়ীর নাম ঘোষণার পর করতালির মাধ্যমে আনন্দ প্রকাশ করেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, ‘দ্য উইজার্ড অব দ্য ওজ’-এর প্রিক্যুয়েল ‘উইকেড’ সম্প্রতি মুক্তি পাওয়ায় এই ঐতিহাসিক সিনেমার প্রতি নতুন আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।

ক্লাসিক চলচ্চিত্রের অমর প্রভাব

১৯৩৯ সালের ‘দ্য উইজার্ড অব দ্য ওজ’-এ জুডি গারল্যান্ড যখন ডরোথি চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন, তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর। এই চলচ্চিত্র বিশ্বব্যাপী দর্শকদের হৃদয়ে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছে। ভ্যারাইটি ম্যাগাজিনের ‘10০ সেরা সিনেমা’ তালিকায় এটি দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে।

চলচ্চিত্রে একটি বিশেষ মুহূর্ত রয়েছে যেখানে ডরোথি তার জুতোর গোড়ালি তিনবার ঠুকিয়ে বলে, ‘বাড়ির মতো আর কিছু নেই’। সেই দৃশ্য আজও দর্শকদের স্মৃতিতে অম্লান। জুতোগুলো সেই জাদুকরী মুহূর্তের অংশ, যা এই জুতোকে ইতিহাসের অন্যতম মূল্যবান ধন করে তুলেছে।