সদ্য সংবাদ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ছায়ায় পূর্ববঙ্গ: এক বিস্মৃত ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানব ইতিহাসের অন্যতম ভয়াবহ অধ্যায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। প্রায় সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রাণহানির এই বিশ্বসংঘাত ইউরোপের গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়া-আফ্রিকার বহু অঞ্চলকে ঘিরে ধরেছিল। বিস্ময়ের বিষয়, তৎকালীন পূর্ববঙ্গ—অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ—ও এই বৈশ্বিক যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েছিল।
১৯৩৯ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয়। তখন ভারতীয় উপমহাদেশ ছিল ব্রিটিশ শাসনের অধীনে। যুদ্ধ ইউরোপ থেকে শুরু হলেও দ্রুত এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে এবং ব্রিটিশ শাসনের অংশ হিসেবে পূর্ববঙ্গও তার অংশ হয়ে যায়।
যুদ্ধ শুরুর পরপরই ব্রিটিশ সরকার ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে বিপুল সংখ্যক সৈন্য সংগ্রহ শুরু করে। পূর্ববঙ্গ থেকে হাজার হাজার যুবক বাধ্য হয়ে কিংবা বেতন ও চাকরির আশায় ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বিভিন্ন তথ্য অনুযায়ী, পুরো ভারতবর্ষ থেকে প্রায় ২৫ লাখ সৈন্য এই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিল, যার মধ্যে অনেকে ছিলেন বর্তমান বাংলাদেশের ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট অঞ্চল থেকে।
১৯৪২ সালে জাপান বার্মা (বর্তমান মিয়ানমার) দখলের পর বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষে এগিয়ে আসে। প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটিশরা কক্সবাজার, রামু, টেকনাফ ও চট্টগ্রামে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে। চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহৃত হয় যুদ্ধ সরঞ্জাম পরিবহনের কেন্দ্র হিসেবে। এই সময় জাপানি বিমান হামলার শিকার হয় চট্টগ্রাম, যদিও বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। শহরজুড়ে ব্ল্যাকআউট, সাইরেন ও বাংকার খোঁড়ার মতো যুদ্ধ পরিস্থিতির অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করে সাধারণ মানুষ।
কুমিল্লা ছিল ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র। বার্মা ফ্রন্টের কাছাকাছি হওয়ায় এখানে স্থাপন করা হয় একটি সামরিক হাসপাতাল। সেখানেই আহত সৈনিকদের চিকিৎসা হতো এবং যাঁরা বেঁচে ফিরতেন না, তাঁদের সমাহিত করা হতো কুমিল্লার ময়নামতি ওয়ার সিমেট্রিতে। আজও সেখানে প্রায় ৭৩৬ জন সৈনিকের কবর রয়েছে, যারা বার্মা ফ্রন্টে আহত হয়ে এখানে মৃত্যুবরণ করেন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পূর্ববঙ্গের মানুষের জন্য শুধু যুদ্ধক্ষেত্রের ভয় নয়, নিয়ে এসেছিল দুর্ভিক্ষ ও মৃত্যু। ১৯৪৩ সালে বাংলায় ঘটে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ—‘পঞ্চাশের মন্বন্তর’, যাতে প্রাণ হারায় ৩০-৪০ লাখ মানুষ। যুদ্ধকালীন ব্রিটিশ নীতিমালা, যেমন ‘ডেনিয়েল পলিসি’ অনুযায়ী উপকূলীয় এলাকার নৌযান ও খাদ্যগুদাম ধ্বংস করা হয় যাতে সেগুলো জাপানিরা ব্যবহার করতে না পারে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় চাল রপ্তানি, কালোবাজারি এবং প্রশাসনের উদাসীনতা। ফলে যুদ্ধ না করেও বাংলার মানুষ হয় সবচেয়ে বড় ক্ষতিগ্রস্ত।
যুদ্ধ শেষে যে ক্ষুধা, হতাশা ও অব্যবস্থাপনা সৃষ্টি হয়, তা উপমহাদেশে স্বাধীনতার দাবিকে আরও তীব্র করে তোলে। পূর্ববঙ্গে মুসলিম লীগের জনপ্রিয়তা বাড়ে এবং এর ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানের জন্ম হয়, যার পূর্বাংশ ছিল আজকের বাংলাদেশ।
পূর্ববঙ্গ সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে না নামলেও, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তার ইতিহাসে এক গভীর ছাপ রেখে গেছে। এ দেশের মানুষ যুদ্ধ করেছে ব্রিটিশ সেনায়, ভুগেছে দুর্ভিক্ষে, আর জীবনে লালন করেছে যুদ্ধভীতি ও নিরাপত্তাহীনতা। ইতিহাসের পাতায় হয়তো ‘বাংলাদেশ’ নামটি ছিল না, কিন্তু তার মাটি ও মানুষের কান্না, সাহস ও বেদনা এই যুদ্ধের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে আছে।
আশা/
আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ
- সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে, সর্বনিম্ন ৪ হাজার, সর্বোচ্চ ৭ হাজার ৮০০ টাকা
- মিটফোর্ডে সোহাগ হত্যার নতুন মোড়, বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য!
- আবেদনের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশকে ভিসা দিবে ৬ দেশ!
- একজন ব্যক্তি সর্বোচ্চ সিম ব্যবহারের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত
- নির্বাচন নিয়ে সিইসির সম্ভাব্য সময়সূচী
- আজকের সোনার দাম: কোন ক্যারেটে কত
- নৃশংস সেই ঘটনায় জড়িতরা শনাক্ত, মিলল ২ জনের পরিচয়
- ধারের টাকা ফেরত পাচ্ছেন না, কাজে লাগান এই ৫টি কার্যকর কৌশল
- অবশেষে বিয়ের ইঙ্গিত সালমান খানের!
- প্রকাশ্যে পাথর মারার ঘটনায় ছাত্রদল নেতা রবিনের দায় স্বীকার, যা জানা গেল
- পায়ের যে লক্ষণ দেখে বুঝবেন আপনার ডায়াবেটিস!
- বাংলাদেশের বাজারে আজ এক ভরি সোনার দাম কত
- তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান নিয়ে বিএনপির নতুন প্রস্তাব
- সরকারি চাকুরেদের জন্য বিশাল সুখবর: উচ্চতর গ্রেড পেতে আর বাধা নেই!
- আগামীকাল প্রকাশিত হচ্ছে এসএসসি ও সমমানের ফল, জানবেন যেভাবে