ঢাকা, শুক্রবার, ৪ জুলাই ২০২৫, ২০ আষাঢ় ১৪৩২

স্ত্রীর দেওয়া কিডনিতে বাঁচলেও, ভালোবাসার প্রতিদান অকৃতজ্ঞতায়

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ০৪ ০৯:৪৭:১২
স্ত্রীর দেওয়া কিডনিতে বাঁচলেও, ভালোবাসার প্রতিদান অকৃতজ্ঞতায়

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাভারের কলমা ইউনিয়নে ঘটেছে এক হৃদয়বিদারক ও লজ্জাজনক ঘটনা—যেখানে এক নারীর ভালোবাসা, আত্মত্যাগ ও নিবেদনের প্রতিদান হয়েছে অবহেলা, নির্যাতন আর বিশ্বাসঘাতকতায়।

৩৫ বছর বয়সী উম্মে সাহেদীনা টুনি নিজের জীবন বাজি রেখে স্বামী মোহাম্মদ তারেককে নতুন জীবন দেন—নিজের একটি কিডনি দান করে। কিন্তু সেই জীবনদাতা স্ত্রীকেই আজ তিনি ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন, আর বসবাস করছেন অন্য এক নারীর সঙ্গে।

২০০৬ সালে পারিবারিকভাবে টুনি ও তারেকের বিয়ে হয়। পরের বছর জন্ম নেয় তাঁদের একমাত্র পুত্রসন্তান। সুখের সংসারে হঠাৎই নেমে আসে অন্ধকার। ২০০৮ সালে তারেকের দুটি কিডনিই বিকল হয়ে যায়। বাঁচার জন্য প্রয়োজন হয় দ্রুত ডায়ালাইসিস ও কিডনি প্রতিস্থাপন।

স্বামীর জীবন বাঁচাতে টুনি নিয়ে যান তাকে ভারতে। কয়েক বছর চিকিৎসার পর শেষ পর্যন্ত নিজের একটি কিডনি দিয়ে স্বামীকে ফিরিয়ে আনেন মৃত্যুর মুখ থেকে। শুধু কিডনি নয়, স্বামীর চিকিৎসার পুরো খরচই নিজের কাঁধে তুলে নেন তিনি—বিউটি পার্লার ও বুটিকস ব্যবসা করে মাসে ৪০-৫০ হাজার টাকা আয় করে ব্যয় করতেন চিকিৎসার পেছনে। বিক্রি করে দিয়েছেন সঞ্চয়, গয়না, এমনকি মায়ের পেনশনের টাকা পর্যন্ত।

২০১৯ সালে দিল্লির অ্যাপোলো হাসপাতালে কিডনি প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে নতুন জীবন পান তারেক। আর সেখান থেকেই শুরু হয় তাঁর ভয়াবহ পরিবর্তন। টুনির ভাষ্য অনুযায়ী, অপারেশনের পর থেকেই তারেক হয়ে ওঠেন স্বার্থপর, রূঢ় ও সহিংস। টাকার জন্য চাপ, পরিবারের অপমান, হুমকি ও গালিগালাজ—সব মিলিয়ে সংসার রূপ নেয় এক বিভীষিকায়।

এই সময় তারেক জড়িয়ে পড়েন তাহমিনা নামে এক তালাকপ্রাপ্তা নারীর সঙ্গে। টুনি প্রতিবাদ করলে শুরু হয় শারীরিক নির্যাতন। একপর্যায়ে তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেন তারেক। বাধ্য হয়ে টুনি আশ্রয় নেন বাবার বাড়িতে।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে সাভার মডেল থানায় অভিযোগ করেন টুনি। প্রথমে তারেক মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেও নির্যাতন থামেনি। ২২ এপ্রিল তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন—নারী নির্যাতন, যৌতুক দাবি ও প্রতারণার মাধ্যমে কিডনি নেওয়ার অভিযোগে।

টুনির মা জানান, মেয়ের ভালোবাসা আর আত্মত্যাগের প্রতিদানে আজ তাদেরকেই অপমানিত হতে হচ্ছে। আর তারেক—যিনি এত কিছু পেয়েছেন—তিনি আজ অন্য নারীর সঙ্গে সংসার করছেন।

টুনির আইনজীবী নেহার ফারুক জানান, এই ঘটনা শুধু নারী নির্যাতন নয়, বরং এটি মানব অঙ্গ প্রতিস্থাপন আইনেরও লঙ্ঘন। প্রতারণা করে স্ত্রীর কিডনি নিয়ে পরে তার ওপরই বর্বরতা চালানো হয়েছে। চার্জশিট পাওয়ার পরই তার জামিন বাতিলের আবেদন করা হবে।

এই ঘটনা কেবল একটি পরিবারের ট্র্যাজেডি নয়, বরং আমাদের সমাজে নৈতিক অবক্ষয়ের জ্বলন্ত উদাহরণ। যে নারী ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ নিজের শরীরের অঙ্গ স্বামীর জন্য উৎসর্গ করেছেন, আজ তাকেই ঘরছাড়া হতে হয়েছে। এমন অকৃতজ্ঞতা সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

সিদ্দিকা/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ