ঢাকা, সোমবার, ২৩ জুন ২০২৫, ৯ আষাঢ় ১৪৩২

জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ১৬ ১১:৪৪:১২
জ্বালানি সংকটে বাংলাদেশে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদন: ইরান-ইসরায়েল উত্তেজনার মধ্যেই ইরান হুমকি দিয়েছে হরমুজ প্রণালি বন্ধ করে দেওয়ার। এটি বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি পরিবহন রুট। প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে বৈশ্বিক জ্বালানি বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিতে পারে, যার বড় প্রভাব পড়বে আমদানিনির্ভর বাংলাদেশেও।

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক গ্যাস ও জ্বালানি তেলের অনেকাংশই আমদানি হয় কাতার ও ওমান থেকে। আর সেই পণ্যগুলোর বড় অংশই হরমুজ প্রণালি হয়ে আসে। এই রুট বন্ধ হলে বাংলাদেশে এলএনজি আমদানি বিঘ্নিত হবে, যার সরাসরি প্রভাব পড়বে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প-কারখানা, পরিবহন ও সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্যাসচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র ও তৈরি পোশাক শিল্প খাত সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে পড়বে। তেল ও গ্যাসের দাম বাড়লে তা নিত্যপণ্যের দামে প্রভাব ফেলবে এবং সাধারণ মানুষের জীবন ব্যয় বেড়ে যাবে।

হরমুজ প্রণালি দৈনিক প্রায় ২০ শতাংশ অপরিশোধিত তেল ও বিপুল পরিমাণ এলএনজি পরিবহনের পথ। প্রণালির প্রস্থ মাত্র ৩৩ কিলোমিটার হলেও এটি মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ইতিহাসে দেখা গেছে, ইরান-ইরাক যুদ্ধ চলাকালেও এই রুট পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। তবে এবার ইরান সরাসরি প্রণালি বন্ধের কথা বলেছে, যা বৈশ্বিক জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থাকে বড় ধাক্কা দিতে পারে।

বাংলাদেশে চলতি অর্থবছরে কাতার থেকে ৪০টি এলএনজি কার্গো আসার কথা, যার ৩৪টি ইতোমধ্যে এসে গেছে। সবই এসেছে হরমুজ প্রণালি হয়ে। এই রুট বন্ধ হয়ে গেলে ভবিষ্যতে আমদানি অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সংঘাতের কারণে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়তে শুরু করেছে। দেশের বাজারেও প্রতি লিটারে ৪-৫ টাকা বাড়তে পারে। রুট বন্ধ হলে জ্বালানি সরবরাহে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দেবে।

বিশ্ববাজারে ইতোমধ্যেই অপরিশোধিত তেলের দাম একদিনে ১২ শতাংশ বেড়ে গেছে এবং প্রতি ব্যারেল ৭৮.৫ ডলারে পৌঁছেছে। যদি সংকট দীর্ঘস্থায়ী হয়, দাম ১০০ থেকে ১৩০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিপিসির চেয়ারম্যান মো. আমিন উল আহসান জানিয়েছেন, আমরা আন্তর্জাতিক বাজারের মাসিক গড় মূল্য অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করি। পরিস্থিতি গুরুত্ব দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছি। হরমুজ প্রণালি বন্ধ হলে বিকল্প পথে, যেমন লোহিত সাগর বা আরব সাগর দিয়ে পণ্য আনতে হবে, যা খরচ অনেক বাড়াবে।

বাংলাদেশে এলএনজি ও জ্বালানির ক্ষেত্রে হরমুজ প্রণালির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। এ রুট বন্ধ হলে গ্যাস সরবরাহে বড় বিঘ্ন ঘটবে এবং বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হবে। বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের ব্যয় অনেক বেড়ে যাবে।

শিপিং কোম্পানিগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তেল ও কয়লার সংকট হলে বিদ্যুৎ ঘাটতি ও লোডশেডিং বাড়তে পারে। এতে উৎপাদনে সমস্যা হবে, পরিবহন ব্যয় বাড়বে এবং বাজারে মূল্যস্ফীতি দেখা দেবে।

ক্লিফটন গ্রুপের সিইও মো. মহিউদ্দিন চৌধুরী বলেন, কাতার থেকে জাহাজগুলো যদি হরমুজ রুট এড়িয়ে চলে, তাহলে বীমা খরচ ও ভাড়া বাড়বে, ফলে এলএনজির দামও বাড়বে। এখনই বিকল্প দেশ ও রুট চিন্তা করা উচিত।

বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট খায়রুল আলম সুজন বলেন, যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে হরমুজ প্রণালি বন্ধ হয়ে যেতে পারে। তখন বিকল্প পথে জাহাজ চলবে, এতে সময় ও খরচ দুই-ই বাড়বে। কিন্তু লোহিত সাগরও পুরোপুরি নিরাপদ নয়, কারণ সেখানে হুথি বিদ্রোহীদের হামলার ইতিহাস আছে।

বাংলাদেশে বছরে ১২-১৫ লাখ টন অপরিশোধিত তেল পরিশোধন করা হয় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে। বিপিসি জানায়, দেশে সর্বোচ্চ ৩৫-৪০ দিনের জন্য ৪ লাখ টন জ্বালানি মজুত রাখা যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদি সংকট সামাল দিতে হলে এখনই বিকল্প ব্যবস্থা নিতে হবে।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ