ট্রেনের নিচে পড়ে গেলেন, সবাই ভাবল শেষ! কিন্তু এরপর…

নিজস্ব প্রতিবেদক: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া একটি ভিডিও নাড়িয়ে দিয়েছে সারা দেশকে।ভিডিওতে দেখা যায়, চলন্ত ট্রেনের দরজায় ঝুলন্ত অবস্থায় থাকা এক ব্যক্তিকে হঠাৎ ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেওয়া হয়। মুহূর্তটি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকেই ধরে নেন—তিনি আর বেঁচে নেই। কিন্তু বিস্ময়করভাবে, ওই ব্যক্তি প্রাণে বেঁচে যান।

জানা গেছে, ওই ব্যক্তির নাম মতিউর রহমান। তিনি নওগাঁর রানীনগর উপজেলার পারোল গ্রামের বাসিন্দা এবং বিদেশগামী শ্রমিক পাঠানোর এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। কিছুদিন আগে মতিউর এক যুবক, সজীবকে সৌদি আরবে পাঠান। অভিযোগ রয়েছে, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ছাড়াই পাঠানোয় সজীব সেখানে সমস্যায় পড়েন। ফলে তার পরিবার মতিউরকেই দায়ী করে এবং প্রতিশোধ নিতে উদ্যত হয়।

ঘটনার দিন মতিউর বগুড়া থেকে ট্রেনে করে নিজ বাড়ি ফিরছিলেন। ট্রেন চলাকালীন, ৫-৬ জন ব্যক্তি তাকে ঘিরে ধরে এবং ‘চোর’ আখ্যা দিয়ে ট্রেনের দরজায় ঝুলিয়ে রাখে। আশেপাশের যাত্রীদের প্রতিবাদ উপেক্ষা করে আলতাফগর স্টেশন থেকে শুরু করে নশরদপুর পর্যন্ত তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়।

নশরদপুর স্টেশনে ট্রেন ঢোকার সময় একটি ঝাঁকুনিতে মতিউর ট্রেন থেকে নিচে পড়ে যান। সেই ভয়ানক মুহূর্ত ধরা পড়ে ভিডিওতে, যা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। প্রত্যক্ষদর্শীরা মনে করেছিলেন, তিনি হয়তো ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়েছেন।

কিন্তু সৌভাগ্যবশত, ট্রেনের নিচে পড়ে গিয়েও মতিউর কোনোমতে পাশ ঘেঁষে নিজেকে রক্ষা করেন। ট্রেনের কর্মীরা তাকে নিচু হয়ে থাকতে বলায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে তিনি রক্ষা পান। পরবর্তীতে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করলেও, ‘চোর’ সন্দেহে আবারও মারধরের শিকার হন তিনি।

শেষ পর্যন্ত মতিউরের স্ত্রী ও ছেলে এসে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। বর্তমানে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন এবং গণমাধ্যমে তার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার বিস্তারিত জানিয়েছেন।

এই ঘটনার ভিডিও এবং সত্যতা সামনে আসার পর দেশের নানা প্রান্তে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। একটি গণপরিবহন ব্যবস্থায় এমন ভয়ঙ্কর নিপীড়নের ঘটনা সাধারণ মানুষের মনে নিরাপত্তা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে।

প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, অভিযুক্তদের শনাক্ত করে দ্রুত গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। সাধারণ মানুষ বলছেন, যদি এমন ঘটনায় দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হয়, তাহলে ট্রেনে যাত্রা করা নিয়ে ভীতি ও অনিশ্চয়তা আরও বাড়বে।

আশা/