ঢাকা, সোমবার, ১৯ মে ২০২৫, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

বিএনপি কি জনগনের সাথেই প্রতারণা করছে

২০২৫ মে ০১ ১৩:০৫:২১
বিএনপি কি জনগনের সাথেই প্রতারণা করছে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিএনপি সম্প্রতি রাজনৈতিক ময়দানে যে বক্তব্য ও অবস্থান তুলে ধরছে, তা অনেকের কাছেই বিভ্রান্তিকর ও দ্বিমুখী বলে মনে হচ্ছে। দলটির নেত্রী রুমিন ফারহানা বলেছেন, “বিপ্লব বা অভ্যুত্থান এক মাসে হয় না।” তাঁর এই বক্তব্যে যদি ধরেও নেওয়া হয় যে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পথে রয়েছে, তবু বাস্তবতা হচ্ছে—এটা হঠাৎ বা দ্রুত কোনো ঘটনার ফল নয়, বরং দীর্ঘ ১৬ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রামের এক ধীর প্রক্রিয়া।

কিন্তু প্রশ্ন উঠছে—এই সংগ্রামে বিএনপি আসলে কতটা সক্রিয় ছিল? বিগত দশকে তারা একটি কার্যকর আন্দোলন বা উল্লেখযোগ্য জনসমাবেশের দৃষ্টান্ত রাখতে পারেনি। অথচ এখন দাবি করছে, তারাই নাকি “বিপ্লবের পথপ্রদর্শক”।

বিএনপি একদিকে বলছে তারা কেবল নৈতিক সমর্থন দিয়েছে, অন্যদিকে সেই আন্দোলনের পূর্ণ কৃতিত্ব নিতে চাইছে। এ ধরনের রাজনৈতিক অবস্থান জনগণের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়, এবং এটিকে অনেকেই ‘চালাকি’ বলেই ব্যাখ্যা করছেন।

রুমিন ফারহানা বিপ্লবের সময়সীমা নিয়ে বক্তব্য দিয়েছেন, অথচ ইতিহাস বলে—বিপ্লব অনেক সময় খুবই ক্ষণস্থায়ী কিন্তু গভীর ও নাটকীয় হতে পারে। যেমন ৭ই নভেম্বরের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই ঘটেছিল। বলশেভিক বিপ্লব তো মাত্র দশ দিনেই ইতিহাস বদলে দিয়েছিল। সুতরাং সময় নয়, বরং প্রেক্ষাপট ও প্রভাব গুরুত্বপূর্ণ।

অন্যদিকে, যাঁরা বিপ্লবের কথা বলছেন, তারাই আবার প্লট বরাদ্দের জন্য আবেদন করছেন—এটি রাজনীতিতে নৈতিকতার প্রশ্ন তোলে। একজন বিপ্লবী ব্যক্তি বা দল ব্যক্তিগত সুবিধার পেছনে ছুটলে সেই বিশ্বাসযোগ্যতা বিনষ্ট হয়।

বিএনপির অভ্যন্তরীণ দুর্বলতাও এক বড় প্রশ্ন। দলের অনেক স্থানীয় নেতা জড়িত আছেন চাঁদাবাজি, জমি দখল, মামলার ব্যবসার মতো কর্মকাণ্ডে। কিন্তু কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এসব বিষয়ে কার্যত নিশ্চুপ। প্রশ্ন হলো—নিজেদের সংগঠন যদি তারা নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারেন, তাহলে একটি রাষ্ট্র কীভাবে পরিচালনা করবেন?

এ ছাড়া, বিএনপির কিছু তরুণ মুখ, যেমন ফাম আব্দুস সালাম, মাঝে মধ্যেই প্রগতিশীল কথা বলেন, কিন্তু সেগুলোর মধ্যে রয়েছে দ্বৈততা। তিনি বলেন, ৭১ আমাদের রেডলাইন, আবার বলেন বিএনপির সঙ্গে জোট করলে ছাত্ররা নিরাপদ থাকবে। কিন্তু ৭১-এর চেতনায় যদি সত্যিই আস্থা থাকে, তবে বিএনপির অতীত নিয়ে অনেক প্রশ্ন থেকেই যায়।

এমনকি দলটির সাম্প্রতিক ঘোষিত ৩১ দফা কর্মসূচিও জটিল, দুর্বোধ্য এবং অধিকাংশ নেতা নিজেরাই তা পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করতে পারেন না। মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য রাজনৈতিক বার্তা হওয়া উচিত সহজ, সরল ও কার্যকর—যেমন ছিল “ছয় দফা” বা “এক দফা এরশাদ বিরোধী আন্দোলন”।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার দাবি করেছে বিএনপি। অথচ ২০০৬ সালে তারাই এই ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে নিজেদের অনুগত বিচারপতিকে প্রধান উপদেষ্টা বানানোর চেষ্টা করেছিল। আজ সেই ব্যবস্থাকেই আবার নিরপেক্ষ বলে দাবি করাটা কি জনমতের সঙ্গে সৎ আচরণ?

আরো বলা হয়েছে, কেউ পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন না। কিন্তু পরে আবার বলা হয়েছে, বিরতি দিয়ে সেই ব্যক্তি পুনরায় প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন—এটা কি গণতন্ত্র না ধোঁকাবাজি?

গণতন্ত্রে নেতৃত্বের নিয়মিত পরিবর্তন যেমন জরুরি, তেমনি রাজনৈতিক সততা ও নৈতিকতা আরও গুরুত্বপূর্ণ। শেখ হাসিনার দীর্ঘ শাসনের ফলাফল আমরা দেখেছি—রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলো দলীয় প্রভাবের অধীন হয়ে পড়েছে। তবে এই অন্যায়ের জবাব যদি আরেকটি দ্বিচারিতা হয়, তাহলে জনগণ উপকৃত হবে না।

দেশের মানুষ আজ পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত। কিছু তরুণ যেভাবে পথে নামছে, তারা আমাদের আশা জাগায়। তারা বলছে—এই জীবন চলতে পারে না। আমরাও বলি—আমরা ভালো নেই।

আমরা চাই সত্যিকারের পরিবর্তন, ন্যায়ভিত্তিক রাজনীতি, এবং একটি অবাধ, নিরপেক্ষ নির্বাচন। যারা রাজনীতিকে ব্যক্তিস্বার্থের পণ্যে পরিণত করেছে, তাদের সময় শেষ। ইতিহাস বিচার করবে—কে সত্যিকারের নেতৃত্ব দিয়েছে, আর কে শুধু চালাকি করেছে।

সোহাগ/

ট্যাগ: বিএনপি

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ