ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২

শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন হারাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ এপ্রিল ২০ ১০:০৯:১৩
শেখ হাসিনার প্রতি সমর্থন হারাচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতীয় প্রভাব সব সময়ই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকে। তবে সম্প্রতি ভারতের দুই প্রভাবশালী দৈনিক—সংবাদ প্রতিদিন ও আনন্দবাজার পত্রিকা—যেভাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সরব হয়েছে, তা বেশ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

বহুদিন ধরে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগে আলোচিত এই দুই পত্রিকা এবার যেন একযোগে আওয়ামী লীগ সরকারের কঠোর সমালোচনায় মুখর হয়েছে। তাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে বর্তমান সরকারের দুর্নীতি, প্রশাসনিক ব্যর্থতা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়েছে।

সংবাদ প্রতিদিন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন শুরু হয়েছে একটি আবেগঘন বাক্যে—*“মেয়েটার জন্য কলঙ্কিত হলেন বাবা”*, যা সরাসরি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে লেখা, কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ইঙ্গিত করা হয়েছে তার কন্যা শেখ হাসিনার দিকে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, দেশের চলমান অচলাবস্থার জন্য জনগণ শেখ হাসিনাকেই দায়ী করছে। দুর্নীতি ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে একটি জটিল ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, যা সরকার নিজেই এখন সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে।

অন্যদিকে, আনন্দবাজার পত্রিকা দাবি করেছে, আওয়ামী লীগের ভেতরেই একদল পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তির নেতাদের নিয়ে “নতুন” নেতৃত্ব তৈরির উদ্যোগ শুরু হয়েছে। পত্রিকাটি একে একটি “রিফাইনড আওয়ামী লীগ” গঠনের পরিকল্পনা হিসেবে ব্যাখ্যা করেছে। যদিও দলটির বর্তমান নেতৃত্ব এটিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে।

প্রতিবেদনে আরও দাবি করা হয়েছে, এসব ‘পরিচ্ছন্ন নেতা’র অনেকে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে ব্যবসায়িকভাবে যুক্ত, এবং সেই স্বার্থ রক্ষার্থে তারা আওয়ামী লীগে বিভাজন ঘটাতে ভূমিকা রাখছেন।

ঢাকায় কর্মরত সংবাদ প্রতিদিনের সাংবাদিক শীর্ষেন্দু চক্রবর্তীর বরাতে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগের ভেতরেই অনেক নেতা-কর্মী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব নিয়ে অসন্তুষ্ট। একাংশ প্রকাশ্যে তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিচ্ছে।

আনন্দবাজারের প্রতিনিধি অনমিত্র চট্টোপাধ্যায় তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন, নতুন একটি “নব্য আওয়ামী লীগ” গঠনের পেছনে রয়েছেন বিএনপি ঘনিষ্ঠ কিছু রাজনীতিক এবং সেনাসমর্থিত ব্যবসায়ীরা। তবে দলীয় নেতৃত্ব এটিকে 'অভ্যন্তরীণ ষড়যন্ত্র' হিসেবে দেখছে।

উভয় দৈনিকই বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি এবং প্রতিবেশী সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। সংবাদ প্রতিদিন স্পষ্টভাবে বলেছে, ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক টানাপোড়েনের জন্য শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা দায়ী। তাদের ব্যক্তিস্বার্থ এবং একপেশে সিদ্ধান্তের কারণে বাংলাদেশ ভারতের পাশাপাশি পাকিস্তানের সাথেও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিবেদনে বিকল্প নেতৃত্ব হিসেবে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি নাকি প্রতিবেশী সকল দেশের সঙ্গে ভালো কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী।

সংখ্যালঘুদের প্রসঙ্গে সংবাদ প্রতিদিনের দাবি, আওয়ামী লীগ ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা লুটতে চেয়েছিল। তবে সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের কঠোর ভূমিকার কারণে পরিস্থিতি এখন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারতের এই দুই প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমের ধারাবাহিক ও সমন্বিত সমালোচনার মাধ্যমে একটি স্পষ্ট বার্তা দেওয়া হয়েছে—ভারতের মিডিয়া এখন আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বকে সমর্থন করছে না। এটি কেবল সাংবাদিকতা নয়, বরং একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক মনোভাবেরও প্রতিফলন হতে পারে।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ