ইসিবির নতুন নীতিমালা নিয়ে উত্তাল ইংলিশ ক্রিকেট, বিদ্রোহের সম্ভাবনা জোরালো

ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) নতুন নীতিমালা নিয়ে দেশটির ক্রিকেটাঙ্গনে চলছে তুমুল আলোচনা। ঘরোয়া ক্রিকেটে ইংলিশ ক্রিকেটারদের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর লক্ষ্যে ইসিবি বিদেশি ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়ার জন্য অনাপত্তিপত্র (এনওসি) প্রদান কঠোর করতে চাইছে। তবে এই পদক্ষেপে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শীর্ষস্থানীয় ক্রিকেটাররা। আলোচনা আরও ঘনীভূত হয়েছে যখন শোনা গেল, আসন্ন হান্ড্রেড টুর্নামেন্ট বয়কট করার পরিকল্পনা করছেন প্রায় ৫০ জন ইংলিশ ক্রিকেটার।

ইসিবির নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ঘরোয়া টুর্নামেন্ট যেমন ভাইটালিটি ব্লাস্ট এবং দ্য হান্ড্রেডকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য বিদেশি লিগে অংশগ্রহণের ওপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হবে। এই নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে ক্রিকেটাররা ভারতের আইপিএল, পাকিস্তানের পিএসএল, যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেট (এমএলসি), কানাডার গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি এবং ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লিগসহ অন্যান্য লিগে খেলার সুযোগ সীমিত হয়ে যাবে।

ইসিবি তাদের ঘরোয়া প্রতিযোগিতার গুরুত্ব বজায় রাখতে চাইলেও এই সিদ্ধান্ত ক্রিকেটারদের আর্থিক ও পেশাগত সুযোগকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে বলে শঙ্কা তৈরি হয়েছে।

ইংল্যান্ডের শীর্ষ ক্রিকেটাররা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে একাধিক গোপন বৈঠক করেছেন। দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেশাদার ক্রিকেটারদের সংগঠন পিসিএ-র ছায়ায় এই সভাগুলো অনুষ্ঠিত হয়। প্রথম সভায় অংশ নেন প্রায় ৫০ জন ক্রিকেটার এবং দ্বিতীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তাদের এজেন্টরা।

একাধিক সূত্র জানিয়েছে, অনেক ক্রিকেটার সরাসরি ইসিবির নিয়ম পরিবর্তন না হলে আসন্ন হান্ড্রেড টুর্নামেন্ট বয়কটের হুমকি দিয়েছেন। কেউ কেউ লাল বলের ক্রিকেট থেকে অবসরের কথাও ভাবছেন, যাতে তারা তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি চুক্তিগুলো ঠিক রাখতে পারেন।

একজন এজেন্ট বলেন, "ক্রিকেটাররা এখন নীতিগতভাবে দৃঢ় অবস্থান নিতে চাচ্ছেন। বিষয়টি শুধু আর্থিক ক্ষতির নয়, পেশাদার ক্রিকেট ক্যারিয়ার নিয়ে আরও বৃহত্তর সংকট তৈরি হতে পারে।"

নতুন নিয়ম সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলতে পারে পাকিস্তান সুপার লিগে (পিএসএল)। আইপিএলের মতো বড় লিগের সঙ্গে একই সময়ে আয়োজিত হওয়ায় পিএসএল ইতোমধ্যে বিদেশি তারকা খেলোয়াড় পাওয়া নিয়ে সমস্যায় পড়েছে। এখন যদি ইংলিশ ক্রিকেটারদেরও না পাওয়া যায়, তবে পিএসএলের জনপ্রিয়তা ও আকর্ষণ মারাত্মকভাবে হ্রাস পাবে।

তবে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড (বিসিসিআই) আইপিএলে ইংলিশ ক্রিকেটারদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ইসিবির সঙ্গে আগেই সমঝোতায় পৌঁছেছে। ফলে আইপিএলের ওপর নতুন নিয়ম তেমন প্রভাব ফেলবে না।

ইসিবির প্রধান নির্বাহী রিচার্ড গোল্ড বলেন, "আমাদের ঘরোয়া প্রতিযোগিতার প্রতি শ্রদ্ধা এবং শক্তি ধরে রাখতে এই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। আমরা ভারসাম্য রক্ষা করতে চাই যাতে ক্রিকেটাররা বিদেশি লিগে খেলার অভিজ্ঞতা লাভের পাশাপাশি আমাদের ঘরোয়া টুর্নামেন্টগুলোকেও গুরুত্ব দেন।"

তবে ক্রিকেটারদের এমন অসন্তোষ এবং সম্ভাব্য বিদ্রোহ ইসিবির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্থিক ক্ষতি, ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের প্রভাব, এবং পেশাদারিত্বের সংকট মিলে এই পরিস্থিতি ইংলিশ ক্রিকেটের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট করতে পারে।

ইসিবি এবং ক্রিকেটারদের এই দ্বন্দ্ব শুধু ইংল্যান্ডের ক্রিকেটের জন্য নয়, বৈশ্বিক ক্রিকেটের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেট এবং আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ভারসাম্য বজায় রাখার এই লড়াইয়ের পরিণতি কী হতে পারে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে একটা কথা পরিষ্কার—ইংলিশ ক্রিকেটে সামনের দিনগুলোতে বড় পরিবর্তনের হাওয়া বইতে পারে।