ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

হাসান

রিপোর্টার

মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হ'ত্যার: এক মোবাইল নম্বরেই উদঘাটন হল আসল রহস্য

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ ডিসেম্বর ১১ ২০:৩৭:৩৩
মোহাম্মদপুরে মা-মেয়ে হ'ত্যার: এক মোবাইল নম্বরেই উদঘাটন হল আসল রহস্য

হাসান: রাজধানীর মোহাম্মদপুরের শাহজাহান রোডে মা লায়লা আফরোজ (৪৮) ও মেয়ে নাফিসা লাওয়াল বিনতে আজিজকে (১৫) ছুরিকাঘাতে হত্যার হৃদয়বিদারক ঘটনার তিন দিনের মাথায় জটিল রহস্য উন্মোচন করেছে পুলিশ। এই দ্বৈত হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত গৃহকর্মী আয়েশাকে তার স্বামী রাব্বিসহ ঝালকাঠির নলছিটি থেকে বুধবার (১০ ডিসেম্বর) ভোরে গ্রেপ্তার করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে অতিরিক্ত কমিশনার এন এস নজরুল ইসলাম এই ভয়াবহ ঘটনার নেপথ্যের পূর্ণ বিবরণ তুলে ধরেন।

নজরুল ইসলাম জানান, ৮ ডিসেম্বর সকালে ঘটে যাওয়া হত্যাকাণ্ডের পর গৃহকর্মী আয়েশাকে সন্দেহ করা হলেও তাকে শনাক্ত করা ছিল কঠিনতম কাজ। তার কোনো ছবি ছিল না, ছিল না এনআইডি বা মোবাইল নম্বরও। সিসিটিভিতে মুখ চিনে নেওয়ার সুযোগও ছিল না, কারণ তিনি সবসময় বোরকা ও নেকাব পরে চলাফেরা করতেন।

ডিজিটাল কোনো তথ্য না থাকায় পুলিশ ‘ম্যানুয়াল’ তদন্তে নামে। গত এক বছরে গৃহকর্মী-সম্পর্কিত অপরাধের নথি, বিশেষ করে গলায় পোড়া দাগযুক্ত এবং জেনেভা ক্যাম্প এলাকায় বসবাসকারী নারীদের তথ্য খতিয়ে দেখা হয়।

এক পুরোনো মোবাইল নম্বরেই বদলে গেল তদন্তের গতিপথ

তদন্তকারীরা মোহাম্মদপুরের হুমায়ুন রোডে পূর্বের একটি চুরির মামলায় ভুক্তভোগীর দেওয়া একটি পুরোনো মোবাইল নম্বর খুঁজে পান। সেটিই মামলার মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

কল ডেটা বিশ্লেষণে দেখা যায় নম্বরটি ব্যবহার করতেন রাব্বি নামের একজন ব্যক্তি। পরে জানা যায়, রাব্বির স্ত্রীই পলাতক গৃহকর্মী আয়েশা। বাদীর দেওয়া বর্ণনার সঙ্গেও পুরোপুরি মিল পায় পুলিশ।

প্রযুক্তিগত ট্র্যাকিং ও মাঠ পর্যায়ের অভিযানের পর চূড়ান্তভাবে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার চরকায়া গ্রামে দাদা-শ্বশুরবাড়ি থেকে আয়েশা ও রাব্বিকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় চুরি হওয়া একটি ল্যাপটপও উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আয়েশা হত্যার দায় স্বীকার করেন। জানান, কাজে যোগ দেওয়ার দ্বিতীয় দিনই তিনি দুই হাজার টাকা চুরি করেন। চতুর্থ দিন সকালে চুরির বিষয়ে গৃহকর্ত্রী লায়লা আফরোজ তাকে প্রশ্ন করলে তর্ক বাধে। লায়লা আফরোজ স্বামীকে ফোনে জানাতে গেলে আগে থেকে লুকিয়ে রাখা সুইচ গিয়ারের চাকু দিয়ে তিনি পেছন থেকে আঘাত করেন। ধস্তাধস্তির মধ্যেই লায়লা আফরোজ অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান।

মায়ের চিৎকার শুনে আসা নাফিসাকে তিনি এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করেন। নাফিসা ইন্টারকমে গার্ডকে কল দিতে চাইলে আয়েশা ইন্টারকমের তার কেটে দেন। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাতেও মৃত্যু হয়।

হত্যার পর রক্তমাখা পোশাক বদলে নাফিসার স্কুলড্রেস পরে আয়েশা বাসা থেকে বের হন। ঢাকা ছাড়ার পথে সিংগাইর ব্রিজ থেকে মোবাইল ও কাপড়ভর্তি ব্যাগ নদীতে ফেলে দেন।

অতিরিক্ত কমিশনার জানান, আয়েশার আগেও চুরির প্রবণতা ছিল। এমনকি নিজের বোনের ঘর থেকেও টাকা ও স্বর্ণালংকার চুরি করেছিলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ঢাকাবাসীকে সচেতন হতে হবে গৃহকর্মী নিয়োগের আগে অবশ্যই তাদের পরিচয়পত্র, ঠিকানা ও রেফারেন্স সংগ্রহ করতে হবে। এটি সরাসরি পরিবারের নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ