ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

সন্তানকে ত্যাজ্য করা কি ইসলামে বৈধ!

ধর্ম ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১৬:৫১:১৪
সন্তানকে ত্যাজ্য করা কি ইসলামে বৈধ!

নিজস্ব প্রতিবেদক: বর্তমানে অনেক বাবা-মাকে বলতে শোনা যায়—“আমি তাকে ত্যাজ্য করেছি”, “সে আমার সন্তান নয়”, কিংবা “সে আমার কোনো সম্পত্তি পাবে না।” অনেক সময় রাগ, হতাশা বা পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে এমন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, ইসলাম কি এ ধরনের আচরণ অনুমোদন করে?

ইসলামের দৃষ্টিতে ‘ত্যাজ্যপুত্র’ ঘোষণা করার কোনো ভিত্তি নেই। সন্তান যদি ইসলাম ত্যাগ না করে বা কোনো গুরুতর অপরাধ না করে, তাহলে কেবল ব্যক্তিগত অসন্তুষ্টি বা মতভেদের কারণে তাকে সম্পর্কছিন্ন ঘোষণা করা শরিয়তসম্মত নয়। বরং এটি অন্যায় ও গুনাহের কাজ।

কুরআনে আল্লাহ বলেন, “তোমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করো এবং ন্যায়ের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করো।” (সূরা নিসা, আয়াত ১৩৫)

সন্তান যতই পিতা-মাতার বিরুদ্ধে আচরণ করুক না কেন, সে তার পিতার সম্পত্তিতে শরিয়ত অনুযায়ী অধিকার রাখে। কোনো পিতা-মাতা এই বিধান পরিবর্তন করার ক্ষমতা রাখেন না।

রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, “আল্লাহর নির্ধারিত অংশকে (উত্তরাধিকার) পরিবর্তন করো না।” (সহীহ বুখারি ও মুসলিম)

শুধুমাত্র দুটি পরিস্থিতিতে কোনো সন্তান উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে—একটি হলো ইসলাম ত্যাগ করা (মুরতাদ হওয়া), অন্যটি হলো পিতা-মাতার বিরুদ্ধে সরাসরি হত্যাকাণ্ডের মতো গুরুতর অপরাধে লিপ্ত হওয়া।

কিন্তু কেবল মতবিরোধ, জীবনধারার পার্থক্য বা পারিবারিক সমস্যার কারণে কোনো সন্তানকে ত্যাজ্য করা ইসলাম সমর্থন করে না। এমন সিদ্ধান্ত পরিবারে বিভক্তি সৃষ্টি করে, সন্তানদের মানসিকভাবে দুর্বল করে এবং অনেক সময় তাদের ভুল পথে ঠেলে দেয়।

ইসলাম পিতা-মাতাকে সন্তানের প্রতি দায়িত্বশীল হওয়ার নির্দেশ দেয়। সন্তানের ভুল দেখলে সম্পর্ক ছিন্ন করার পরিবর্তে দোয়া, সহানুভূতি ও সদুপদেশের মাধ্যমে তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনাই ইসলামের শিক্ষা।

ইসলামের মূলনীতি হলো—রাগ নয়, দয়া; অভিমান নয়, আলোচনার মাধ্যমে সমাধান। সম্পর্ক ছিন্ন নয়, বরং সম্পর্ক টিকিয়ে রাখাই একজন মুসলিমের পরিচয়।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে হিকমত, সহনশীলতা ও সঠিক ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে জীবন পরিচালনার তাওফিক দিন। আমিন।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ