ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

দাড়ি ছোট রাখলে কি গুনাহ হয়, ইসলাম কি বলে

ধর্ম ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুলাই ০১ ১৬:৩৪:১৮
দাড়ি ছোট রাখলে কি গুনাহ হয়, ইসলাম কি বলে

নিজস্ব প্রতিবেদক: ইসলামে দাড়ি রাখা কেবল একটি ব্যক্তিগত পছন্দ নয়, বরং এটি একটি স্পষ্ট নববী নির্দেশনা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: *"দাড়ি বাড়তে দাও ও গোঁফ ছোট করো।" হাদীসের আলোকে জানা যায়, সাহাবায়ে কেরাম দাড়ি এক মুষ্টি পরিমাণ লম্বা রাখতেন, অতিরিক্ত অংশ ছেঁটে ফেলতেন। কিন্তু এক মুষ্টির কম দাড়ি রাখার অনুমোদন হাদীসে পাওয়া যায় না।

বিশ্বের অধিকাংশ ইসলামী বিদ্বান মনে করেন, দাড়ি রাখা ওয়াজিব বা অপরিহার্য। যদিও কিছু কিছু আলেমের মধ্যে মতভেদ রয়েছে, তবে প্রভাবশালী আলেমগণ একমত যে এটি ফরজ না হলেও ওয়াজিব পর্যায়ে পড়ে। কেউ কেউ এটিকে সুন্নত বলেন বটে, তবে যেহেতু রাসূল (সা.) এর সরাসরি নির্দেশ রয়েছে, তাই একে ‘সাধারণ সুন্নত’ না বলে ‘আবশ্যক আদেশ’ বলাই যুক্তিযুক্ত।

তবে এটাও মনে রাখা জরুরি, দাড়ি রাখা নিয়ে কারো প্রতি বিদ্রুপ করা বা ছোট করে দেখা ইসলামি আদর্শের পরিপন্থী। কেউ দাড়ি রাখা শুরু করলে তাকে উৎসাহ দেওয়া উচিত, তাচ্ছিল্য নয়। পাশাপাশি, দাড়ি রাখা অবস্থায় কেউ যদি মন্দ আচরণ করে, প্রতারণামূলক ব্যবসায় জড়ায় কিংবা খারাপ ভাষা ব্যবহার করে—তাহলে তার দাড়ি রাখা দ্বীনের সৌন্দর্যকে ম্লান করে দেয়।

ইসলামে দাড়ি রাখা গুরুত্বপূর্ণ, তবে ইসলাম কেবল দাড়ির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। নামাজ, হালাল রোজগার, সদ্ব্যবহার, ইনসাফ এবং অন্যায় থেকে বিরত থাকা—সবই ইসলামের অপরিহার্য দায়িত্ব।

বর্তমান সময়ে অনেকে শরীয়তের বিধান নিয়ে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করেন, বিশেষ করে বিয়ের বিষয়ে। অনেকেই মনে করেন, মেসেঞ্জারে ‘হ্যাঁ বলেছি’ মানেই বিয়ে সম্পন্ন হয়ে গেছে। অথচ ইসলামে বিয়ের জন্য ইজাব-কবুল, সাক্ষী, অভিভাবকের সম্মতি—এই সব শর্ত অপরিহার্য।

একজন নাবালিকা মেয়ের সাথে মেসেঞ্জারে ‘হ্যাঁ-বলা’ কোনো প্রস্তাব শরিয়ত অনুযায়ী বৈধ বিবাহ নয়; বরং এটি মারাত্মক গোনাহের কাজ এবং জেনার উপক্রম হতে পারে। তাই মুসলিম তরুণ-তরুণীদের এই বিষয়ে সচেতন থাকা আবশ্যক।

অনেক পিতা-মাতা সন্তানদের মধ্যে বৈষম্য করে থাকেন। কেউ পাঁচ সন্তানের মধ্যে চারজনকে সম্পত্তি লিখে দিয়ে একজনকে বাদ দেন। শরীয়তের দৃষ্টিতে এটি সম্পূর্ণ অন্যায়। যদি সন্তান দ্বীন থেকে বিচ্যুত না হয়, তবে সে কখনোই উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত হতে পারে না।

রাসূল (সা.) বলেছেন, সন্তানদের মধ্যে সমতা বজায় রাখতে হবে। জীবদ্দশায় যদি কেউ সম্পত্তি বণ্টন করেন, তবে তা ন্যায্যভাবে করতে হবে। হ্যাঁ, দ্বীনের স্বার্থে নেক সন্তানকে কিছুটা বেশি দেওয়া যেতে পারে, তবে কাউকে একেবারে বঞ্চিত করা যাবে না।

তবে অন্যায় বণ্টন করলেও ঐ ব্যক্তির জানাজা নামাজ আদায় করতে বাধা নেই। কিন্তু আখিরাতে তাকে জবাবদিহি করতে হবে। সন্তানদের উচিত হবে পিতার সেই অন্যায়ের ভারসাম্য তৈরি করে দেওয়ার চেষ্টা করা, যাতে তিনি মুক্তি লাভ করতে পারেন।

ইসলাম সবক্ষেত্রেই ভারসাম্য ও ইনসাফের শিক্ষা দেয়—ব্যক্তি চরিত্র, পারিবারিক সম্পর্ক, সামাজিক ন্যায়বিচার এমনকি শত্রুর সাথেও। দাড়ি রাখা একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল, তবে ইসলাম পালন কেবল বাহ্যিক অবয়বের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। অন্তরের খালিস নিয়ত ও কর্মের সততাই ইসলামি জীবনধারার মূল।

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ