সদ্য সংবাদ
কালো জাদুর প্রভাবে ক্যান্সার হতে পারে! রুকিয়া বিশেষজ্ঞদের অভিমত

নিজস্ব প্রতিবেদক: কালো জাদু—শুধু কুসংস্কার নয়, বরং বাস্তব জীবনেও এক ভয়াবহ মানসিক ও শারীরিক ক্ষতির কারণ হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক ইসলামি রুকিয়া বিশেষজ্ঞ। কেউ কেউ আরও এক ধাপ এগিয়ে দাবি করছেন, কালো জাদুর প্রভাবে শরীরে জটিল রোগ, এমনকি ক্যান্সারও হতে পারে।
বিশেষজ্ঞ রাকিদের ভাষ্য অনুযায়ী, অনেক রোগী রয়েছেন যারা প্রচলিত চিকিৎসায় আরোগ্য না পেলেও কোরআনের আয়াত দ্বারা রুকিয়া গ্রহণ করে সুস্থ হয়ে উঠেছেন। তাদের মতে, জাদু, জিন বা বদনজরের প্রভাব অনেক সময় শরীরের ভিতরে এমনভাবে কাজ করে, যা সাধারণ ওষুধে নিরাময়যোগ্য নয়।
রুকিয়ার মাধ্যমে রোগ নির্ণয়ের একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে। সাধারণত আয়াতুল কুরসি, সূরা ফালাক ও সূরা নাস পাঠ করার সময় যদি রোগীর মধ্যে মানসিক অস্থিরতা, আতঙ্ক, জ্বর, বমি বা অস্বাভাবিক আচরণ দেখা দেয়, তাহলে বোঝা যায় যে, সেখানে কোনো অদৃশ্য প্রভাব কাজ করছে।
তবে কিছু ব্যক্তি নাম ও মায়ের নাম নিয়ে রোগ নির্ণয়ের চেষ্টা করেন, যা শরিয়তের দৃষ্টিতে বিদআত ও সন্দেহজনক হিসেবে বিবেচিত।
আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন থেকে এ বিষয়ে একটি গাইডলাইন প্রকাশের প্রস্তুতি চলছে। এর পাশাপাশি কয়েকটি সহজ ও গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাহভিত্তিক আমল এখনই অনুসরণ করা যেতে পারে:
* প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় নিয়মিত যিকির করা* আয়াতুল কুরসি ও তিন কুল পাঠ* "بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ..." দোয়া পাঠ করা* প্রতি হিজরি মাসের ১৩, ১৪, ১৫ তারিখে রোজা রাখা* ঘরে উচ্চস্বরে কোরআন তেলাওয়াত চালু রাখা* গান, বাজনা, গীবত ও অলসতা থেকে ঘর মুক্ত রাখা* ঘরে থাকা তাবিজ-কবচ ধ্বংস করে ফেলা
বিশেষজ্ঞদের মতে, শয়তানি প্রভাব সবচেয়ে বেশি হয় সেই পরিবেশে, যেখানে কোরআনের শব্দ অনুপস্থিত ও নিষিদ্ধ কার্যকলাপ প্রচলিত।
ইসলামে জাদু করা বা করানো একটি গুরুতর অপরাধ এবং তা কেবল গুনাহ নয়, বরং শরিয়তের দৃষ্টিতে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধও হতে পারে। সহীহ হাদীসে জাদুকরদের জন্য রয়েছে কঠোর সতর্কবার্তা। এমনকি রাসুলুল্লাহ (সা.)-ও একসময় জাদুর শিকার হয়েছিলেন এবং আল্লাহর সাহায্যে সুস্থতা লাভ করেছিলেন।
নবী করিম (সা.) কখনো তাবিজ ব্যবহার করেননি, বরং কোরআনের আয়াত পড়ে ফুঁ দিতেন—যা-ই হলো রুকিয়া শরিয়াহ। বর্তমানে প্রচলিত অনেক তাবিজেই থাকে রহস্যময় চিহ্ন, অজানা শব্দ বা প্রতীক, যা অনেক সময় শিরক বা জাদুবিদ্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত।
একজন ব্যক্তি জানিয়েছেন, তার এক আত্মীয় হঠাৎ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। প্রাথমিকভাবে কবিরাজি চিকিৎসা নেওয়া হলেও কোনো উন্নতি হয়নি। পরবর্তীতে একজন রাকির পরামর্শে ঘরে কোরআন তেলাওয়াত ও নিয়মিত যিকির শুরু করা হয়। প্রথমদিকে ওই ব্যক্তি কোরআনের শব্দ সহ্য করতে পারতেন না, তবে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তার অবস্থার উন্নতি হয়।
এই অভিজ্ঞতা থেকে প্রমাণিত হয়, আত্মিক ও অদৃশ্য সমস্যার ক্ষেত্রে কোরআন ও সুন্নাহর চিকিৎসা পদ্ধতিই সবচেয়ে নিরাপদ ও কার্যকর।
কালো জাদুর প্রভাবকে অস্বীকার করা যায় না, তবে ভয় বা কুসংস্কার নয়—আল্লাহর প্রতি দৃঢ় ঈমান, কোরআন-সুন্নাহর আলোকে জীবনযাপন এবং নিয়মিত যিকির-রুকিয়ার মাধ্যমেই সম্ভব এমন প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা। আধুনিক চিকিৎসার পাশাপাশি আত্মিক চিকিৎসাকেও গুরুত্ব দেওয়া এখন সময়ের দাবি।