ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

দাড়ি ও নামাজ: বিমানসেনাদের অপরাধ!

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ জুন ০২ ১৯:৫৬:৩৩
দাড়ি ও নামাজ: বিমানসেনাদের অপরাধ!

বিশেষ প্রতিবেদন; বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর অজানা এক ভয়াবহ অধ্যায়ের নাম— ‘আয়নাঘর’। নামটা অনেকেরই শোনার কথা নয়। কিন্তু এখানেই, ধর্মীয় চর্চা ও একটি ইসলামিক দাওয়াতি সংস্থায় দান করার মতো নিরীহ কারণে ১০ জন বিমানসেনাকে আটক রেখে চালানো হয়েছিল অমানবিক নির্যাতন।

ঘটনাটি শুরু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে। হঠাৎ করেই নিখোঁজ হতে থাকেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর দশ তরুণ সৈনিক। তাদের "অপরাধ"— নামাজ পড়া, দাড়ি রাখা, শর্টস পরতে আপত্তি করা এবং মুফতি জুবায়ের আহমেদের একটি দাওয়াতি প্রতিষ্ঠানে কিছু দান করা। এসব ধর্মীয় চর্চাকেই সন্দেহজনক বানিয়ে, তাদের বিরুদ্ধে 'জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার' অভিযোগ আনা হয়।

বিমান বাহিনীর নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট 'ফিল ইউনিট' একে একে তাদের তুলে নেয়—কেউ অফিস থেকে, কেউ নিজ কক্ষ থেকে। কোনো গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই। এরপর তাদের রাখা হয় একটি গোপন টর্চার সেলে, যার নাম 'আয়নাঘর'। প্রথমে এটি বিমান বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও পরে এর দায়িত্ব নেয় ডিজিএফআই ও র‍্যাব।

এক নির্যাতিত সৈনিক জানান, “আমাদের ঘুমাতে দেওয়া হতো না। চোখে আলো ফেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতো। কখনো ঝুলিয়ে, কখনো বৈদ্যুতিক চেয়ারে বসিয়ে চালানো হতো নির্যাতন। পরিবারকে বলা হয়েছিল, আমরা বিশেষ প্রশিক্ষণে আছি। ফলে যোগাযোগ বন্ধ।”

অবিরাম শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের একপর্যায়ে, জীবন বাঁচাতে বাধ্য হয়ে তারা মিথ্যা স্বীকারোক্তি দেন—যে তারা নাকি জঙ্গি কার্যক্রমে যুক্ত ছিলেন।

এই জোরপূর্বক স্বীকারোক্তিকে ভিত্তি করে চালানো হয় একতরফা কোর্ট মার্শাল। বিচারের নামে প্রহসন— যেখানে বিচারক, তদন্ত কর্মকর্তা ও সরকারি কৌঁসুলি ছিলেন একই ব্যক্তি। অর্থাৎ, যারা নির্যাতন করেছেন, তারাই রায় দিয়েছেন।

ফলাফল—৮ জনকে ২ বছরের ও ২ জনকে ১ বছরের কারাদণ্ড।

২০২৩ সালে কারামুক্ত হলেও সমাজে তাদের গায়ে ‘জঙ্গি’ তকমা লেগে গেছে। ১২ বছর চাকরি করেও তারা পাননি প্রভিডেন্ট ফান্ড, ব্যক্তিগত মালামাল কিংবা ন্যূনতম সহানুভূতি।

“আমি গরিব ঘরের ছেলে। ১২ বছর চাকরি করে আজ পথে বসেছি। সাত মাস ধরে প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা ফেরত পেতে ঘুরছি।”

* পূর্ণ চাকরিতে পুনর্বহাল

* গুম ও কারাদণ্ডের ক্ষতিপূরণ

* আয়নাঘরসহ টর্চার সেলগুলোর তদন্ত

* সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিচার

* চিকিৎসা, নিরাপত্তা ও পুনর্বাসনের নিশ্চয়তা

তারা জাতীয় গুম কমিশন ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালেও অভিযোগ জমা দিয়েছেন।

সোহাগ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ