ঢাকা, মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২

একসঙ্গে সামরিক প্রস্তুতিতে রাশিয়া-চীন: বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন শক্তির বার্তা?

বিশ্ব ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মে ১৬ ২৩:১৬:৩৫
একসঙ্গে সামরিক প্রস্তুতিতে রাশিয়া-চীন: বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন শক্তির বার্তা?

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্ব যখন যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা ও কৌশলগত অস্থিরতায় টালমাটাল, ঠিক সেই মুহূর্তে একযোগে সামরিক প্রস্তুতির ঘোষণা দিল রাশিয়া ও চীন। ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘায়ন এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার প্রেক্ষাপটে এই দুই পরাশক্তির ঘনিষ্ঠতা এখন আর কেবল কূটনৈতিক নয়—তারা এগোচ্ছে সুস্পষ্ট সামরিক সহযোগিতার দিকেও।

সম্প্রতি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বিজয় দিবস উপলক্ষে মস্কোতে আয়োজিত এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে সম্মানিত অতিথি হিসেবে অংশ নেয় চীনের একটি সামরিক প্রতিনিধিদল। এটি শুধু আনুষ্ঠানিক সৌজন্য নয়—বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল রাশিয়া-চীন সামরিক ঐক্যের একটি প্রতীকী ঘোষণা।

চীনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জিয়াং বিন বলেন, “চীন-রাশিয়ার সামরিক সম্পর্ক এখন সর্বোচ্চ পর্যায়ে। আমাদের যৌথ প্রয়াস কৌশলগত স্থিতিশীলতা বজায় রাখবে এবং পারস্পরিক আস্থা আরও দৃঢ় করবে।”

বন্ধুত্বের ভিত্তিতে সামরিক জোট?

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই রাশিয়া ও চীনের মধ্যে সহযোগিতা ক্রমশ গভীর হয়েছে—কেবল রাজনৈতিক বিবৃতিতে নয়, অর্থনীতি, প্রযুক্তি, এমনকি যৌথ সামরিক মহড়াতেও। বেইজিং ও মস্কোর মধ্যে একে অপরের প্রতি নির্ভরতাও বেড়েছে।

সম্প্রতি মস্কো সফরে গিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক করেন। বৈঠক শেষে তিনি বলেন, “রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক বিশ্বে ইতিবাচক শক্তির প্রতীক। আধিপত্যবাদ ও একতরফা নীতির বিরুদ্ধে আমরা একসঙ্গে অবস্থান করছি।”

পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি: নিরপেক্ষতা নাকি পক্ষপাত?

তবে চীনের এই ঘনিষ্ঠতা নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বে প্রশ্ন উঠেছে। ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়ার পাশে অবস্থান নেওয়াকে অনেকেই বলছেন 'পরোক্ষ সমর্থন'।যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের মতে, চীন রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে রাশিয়াকে সহায়তা করে যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করছে।

বেইজিং অবশ্য এ অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে বলেছে, তারা কোনো পক্ষ নেয়নি বরং শান্তির পক্ষে অবস্থান করছে। চীনের বক্তব্য, “যারা নিজেরা অস্ত্র পাঠায়, তারা আমাদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে—এটা দ্বিচারিতা ছাড়া কিছুই নয়।”

বিশ্লেষকদের দৃষ্টিতে: বহুমুখী কৌশল

বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের রাশিয়ার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার পেছনে রয়েছে গভীর কৌশলগত লক্ষ্য:

* ইউরেশিয়ায় প্রভাব বিস্তার

* ন্যাটোকে চাপে রাখা

* ডলারভিত্তিক বৈশ্বিক অর্থনীতি থেকে সরে বিকল্প মুদ্রা ব্যবহারের প্রচেষ্টা

* এবং দীর্ঘমেয়াদে তাইওয়ান ইস্যুতে রাশিয়ার সমর্থন নিশ্চিত করা

তুন শীতল যুদ্ধের সূচনা?

এই প্রেক্ষাপটে রাশিয়া-চীনের সামরিক ঐক্য কেবল একটি তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া নয়—বরং বিশ্ব রাজনীতিতে একটি দীর্ঘমেয়াদি শক্তির পুনর্বিন্যাস। অনেক বিশ্লেষক এটিকে ‘নতুন কোল্ড ওয়ার’-এর পূর্বাভাস হিসেবে দেখছেন।

প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—এই জোট কি বিশ্বে শান্তির বার্তা বয়ে আনবে, নাকি আরও বড় উত্তেজনার সূচনা ঘটাবে?

সম্ভবত, এই প্রশ্নের উত্তর ভবিষ্যতের হাতেই। তবে ইতিহাস জানে—যখন দুই পরাশক্তি হাতে হাত রাখে, তখন বিশ্ব মানচিত্রে নতুন রেখা আঁকা হয়।

সোহাগ আহমেদ/

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ