ঢাকা, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

রাখাইনে মানবিক করিডোর: কেন বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করার প্রস্তাব

জাতীয় ডেস্ক . ২৪ নিউজ
২০২৫ মে ০১ ১৪:১১:৪৪
রাখাইনে মানবিক করিডোর: কেন বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করার প্রস্তাব

নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমারের রাখাইনে চলমান সংঘাত ও মানবিক বিপর্যয় নিয়ে আন্তর্জাতিক উদ্বেগ ক্রমেই বাড়ছে। জাতিসংঘের মতে, সেখানে তীব্র খাদ্য সংকট ও চিকিৎসাসেবার অভাবে সাধারণ মানুষের জীবন বিপন্ন। এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ হয়ে রাখাইনে একটি মানবিক করিডোর চালুর প্রস্তাব সামনে এনেছে জাতিসংঘ—যা নিয়ে দেশের ভেতরে শুরু হয়েছে তীব্র বিতর্ক ও প্রশ্ন।

৩০ এপ্রিল ঢাকায় এক বিবৃতিতে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুএন লুইস জানান, রাখাইনে দ্রুত ত্রাণ পৌঁছাতে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতিতে একটি করিডোর চালু সম্ভব হতে পারে। তার আগে ২৭ এপ্রিল পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশ নীতিগতভাবে এই প্রস্তাব বিবেচনায় নিচ্ছে, তবে তা হবে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ও নির্দিষ্ট শর্তের ভিত্তিতে।

বিএনপি, জামায়াত, এনসিপিসহ একাধিক রাজনৈতিক দল প্রশ্ন তুলেছে—জাতীয় নিরাপত্তার মতো গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ কতটা গ্রহণযোগ্য? তারা বলছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে তা ভবিষ্যতে জটিলতা তৈরি করতে পারে।

সাংবাদিক ও বিশ্লেষক আমিন আল রশিদও তার লেখায় সন্দেহ প্রকাশ করেন—এই করিডোর কি শুধুই মানবিক সহায়তার জন্য, না এর পেছনে আছে ভিন্ন কোনো কৌশলগত উদ্দেশ্য? তিনি মনে করেন, বাংলাদেশকে কূটনৈতিক ভারসাম্য রক্ষা করেই নিজের জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

রাখাইনে বর্তমানে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে আরাকান আর্মি সক্রিয়, যারা স্থানীয়ভাবে বেশ কিছু এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে পাঠানো ত্রাণ আসলে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে, না এই সশস্ত্র গোষ্ঠীর হাতে চলে যাবে?

এই বিষয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আশ্বস্ত করে বলেন, "ত্রাণসামগ্রী পাঠানো হচ্ছে, কোনো অস্ত্র নয়।" তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, কেবল মৌখিক আশ্বাস যথেষ্ট নয়—এ ধরনের পদক্ষেপের আগে সম্ভাব্য কৌশলগত ও নিরাপত্তাগত প্রভাব গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা দরকার।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম নিশ্চিত করেছেন, এখনো সরকার কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। সব রাজনৈতিক পক্ষ ও নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, রাখাইন সীমান্তে সহায়তা প্রদান করা হলেও তা বাংলাদেশের ভূখণ্ডের বাইরে যতটা সম্ভব সীমিত রাখার চেষ্টা করা হবে। দেশের সার্বভৌমত্ব যাতে একটুও ক্ষুণ্ন না হয়, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে।

রাখাইনে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে বাংলাদেশ হয়ে করিডোর চালুর প্রস্তাব জাতিসংঘ তুললেও, বাংলাদেশ সরকার এখনো তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়নি। রাজনৈতিক দল ও বিশ্লেষকদের মতামত বলছে—জাতীয় স্বার্থ ও নিরাপত্তার প্রশ্নে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে সর্বজনীন আলোচনা এবং স্বচ্ছতা অপরিহার্য।

আয়শা সিদ্দিকা/

ট্যাগ: বাংলাদেশ

আপনার জন্য বাছাই করা কিছু নিউজ

ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত

ফাইনালে মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা লড়াইয়ে আবারও দেখা হচ্ছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দুই দলের—বাংলাদেশ ও ভারত। আগামী ১৮ মে ভারতের অরুণাচল... বিস্তারিত